স্টাফ রিপোর্টার
নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার লাহুড়িয়া গ্রামে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী সুবর্ণাকে হাতুড়িপেটার কথা স্বীকার করেছে ঘটনার মূলহোতা ওবায়দুর রহমান (২২)। বুধবার (২৯ মে) দুপুরে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সাংবাদিক সামনে সুবর্ণাকে হাতুড়িপেটার কথা স্বীকার করেন তিনি।
ওবায়দুর জানান, প্রেমে ব্যর্থ হওয়ার ক্ষোভ থেকে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী সুবর্ণাকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত করেন তিনি। সুবর্ণাকে ভালবেসে বিয়ে করতে চায়লেও তাকে কখনো উত্যক্ত করেনি বলে দাবি করেন ওবায়দুর। নির্মম ভাবে সুবর্ণাকে কেন হাতুড়িপেটা করলেন-এ প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুর বলেন, ‘আমি সুবর্ণাকে উত্যক্ত করি, এ কথা সে বিভিন্নজনের কাছে বলে বেড়ায় বলে ক্ষিপ্ত হয়ে হাতুড়িপেটা করেছি।’
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন পিপিএম (বার) বলেন, আমাদের চৌকস পুলিশ সদস্যরা ঘটনার পর থেকে পলাতক ওবায়দুরকে গ্রেফতারের জন্য মাঠে নামেন। তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে আমরা ওবায়দুরের অবস্থান শনাক্ত করার চেষ্টা করি। এরই মধ্যে হঠাৎ করে ওবায়দুর তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেন। এ ক্ষেত্রে তার অবস্থান শনাক্ত করতে কিছুটা বেগ পেতে হয়। তবুও হাল ছাড়েননি এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) মনিরুল ইসলাম, লোহাগড়া থানার এসআই মিলটন কুমার দেবদাস ও আতিকুজ্জামান। তাদের প্রচেষ্টার ফলে অবশেষে গত ২৭ মে রাতে চট্টগ্রামের ষোলো শহরের ফরেস্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পাশের বস্তি থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এ মামলাটি আমরা যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে অভিযান পরিচালনা করেছি। ঘটনার মূলহোতা ওবায়দুরকে দুইদিনের মধ্যেই গ্রেফতারে সক্ষম হয়েছি। এর আগে ঘটনার দিন গত ২৫ মে দুপুরে ওবায়দুরের সহযোগী কাবুল জমাদ্দারকে (২৫) লাহুড়িয়া থেকে গ্রেফতার এবং হাতুড়ি উদ্ধার করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পদোন্নতিপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম পিপিএম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) শরফুদ্দীন, নড়াইল থানার ওসি ইলিয়াস হোসেন পিপিএম, লোহাগড়া থানার ওসি মোকাররম হোসেন, নড়াগাতি থানার ওসি আলমগীর কবির, ডিবি পুলিশের ওসি আশিকুর রহমান, নড়াইল থানার ওসি (তদন্ত) হরিদাস রায়সহ পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা।
পুলিশ ও ভূক্তভোগী সুবর্ণার পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, গত ২৫ মে শনিবার সকাল ৬টার দিকে নড়াইলের লোহাগড়ার উপজেলার লাহুড়িয়ার হাজী মোফাজ্জেল স্বরণী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী সুর্বণাকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে উচ্চ মাধ্যমিক ফলপ্রার্থী ওবায়দুর রহমান ও তার সহযোগী দীননাথপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরি কাম নৈশপ্রহরী কাবুল জমাদ্দার। প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় লাহুড়িয়ার গোবিন্দপাড়ায় ওই দুই বখাটে সুবর্ণার ওপর হামলা চালায়। কাবুল লাহুড়িয়ার দীননাথপাড়ার আজিজার জমাদ্দারের ছেলে এবং ওবায়দুর একই পাড়ার আজমল মোল্যার ছেলে।
নড়াইল সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সুবর্ণা বলে, ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকেই আমাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে আসছিল ওবায়দুর। আমি তার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছি। বিষয়টি অভিভাবকসহ অন্যদের জানালে ওবায়দুর ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এমনকি অ্যাসিড দিয়ে আমার মুখ নষ্ট করে দেয়ার কথা বলে। এরই প্রেক্ষিতে গত ২৫ মে সকালে বাড়ি থেকে প্রাইভেট পড়তে যাওয়ার সময় ওবায়দুর ও কাবুল পথরোধ করে আবারো প্রেমের প্রস্তাব দেয়। প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তারা দু’জন হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। স্থানীয় লোকজন এগিয়ে আসলে বখাটেরা পালিয়ে যায়।