এমএসএ
ইংল্যান্ড-ওয়েলসে অনুষ্ঠিতব্য ক্রিকেট বিশ্বকাপ (পুরুষ) ২০১৯ এ ঐতিহাসিক জয় দিয়ে শুভ সূচনা করলো বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। লন্ডনের ওভালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ২১ রানে হারিয়েছে অধিনায়ক মাশরাফীর দল। আন্তর্জাতিক একদিনের ক্রিকেটে বাংলাদেশের করা সর্বোচ্চ সংগ্রহ ৩৩০ স্পর্শ করতে ব্যর্থ হয় প্রোটিয়ারা।
নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে টসে জিতে বাংলাদেশকে ব্যাট করতে পাঠায় ডু প্লেসিসের দল। ২০১৯ বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে শুরু থেকেই আত্মবিশ্বাসী ছিল টাইগাররা। শুরুতেই দুই ওপেনার তামিম ও সৌম্য ৬০ রানের জুটি গড়েন। ৮.২ ওভারে ফেলুকোয়ায়োর বলে ২৯ বলে ১৬ রান করে আউট হন তামিম। ১১.৪ ওভারে মরিসের কট বিহাইন্ড হন সৌম্য। ৯টি চারে ৩০ বলে ৪২ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন সরকার। ক্রিজে তখন সাকিব ও মুশফিক। বাংলাদেশের ইনিংস এগোতে থাকে। এক পর্যায়ে দু’জনেই অর্ধশতক পূর্ণ করেন। ১৪২ রানের পার্টনারশিপে ব্যক্তিগত ৭৫ (৮৪) রানে তাহিরের বলে বোল্ড হন সাকিব। ৮ টি চার আর ১ ছক্কায় তিনি ৭৫ রান করেন। দলীয় ২১৭ রানে আউট হলে মুশফিকের সাথে ২৫ রানের জুটি গড়েন মিথুন। এবারও তাহিরের শিকার হন আলী। ২টি চার ও ১ ছক্কায় ২১ বলে ২১ রান করে দলীয় ২৪ রানের সময় প্যাভিলিয়নে ফেরেন আলী।
৪১.৪ বলে বাংলাদেশ দলীয় ২৫০ রান তুলতে সক্ষম হয়। ৪২ ওভারের শুরুতেই ফেলুকোয়ায়োর বলে ডুসেনের হাতে ক্যাচ তুলে দেন মুশফিক। ৮ চারে ৮০ বলে ৭৮ রানের অসাধারণ একটি ইনিংস খেলেন তিনি। ৫ উইকেট পতনের পর গুরুত্বপূর্ণ ৬৬ রানের জুটি গড়েন মাহমুদুল্লাহ ও মোসাদ্দেক। ৪৮ ওভারে দলীয় সংগ্রহ গিয়ে দাঁড়ায় ৩০২। চারটি চারে ২০ বলে ২৬ রানে মরিসের শিকার হন মোসাদ্দেক। ৩ চার ও ১ ছক্কায় ৩৩ বলে অপরাজিত ৪৬* রানের এক অনবদ্য ইনিংস খেলেন রিয়াদ। অপরদিকে ৫* রানে অপরাজিত থাকেন মিরাজ। শেষ ৪ ওভারে বাংলাদেশ তুলে নেয় ৫৪ রান। ৬ উইকেট হারিয়ে ৩৩০ রানে শেষ হয় বাংলাদেশের ইনিংস। বিশ্বকাপে ও একদিনের ম্যাচে এটাই বাংলাদেশের সেরা সংগ্রহ।
৩৩১ রানের টার্গেটে শুরু থেকেই সঙ্গত, দৃঢ় ছিল প্রোটিয়ারা। এদিকে দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসে বাংলাদেশ দলের ফিল্ডিং যেন কোন ভাবেই কাজে লাগছিল না। ক্যাচ, রান আউট মিস হচ্ছিল। ওপেনিং জুটিতে ডি কক ও মারক্রাম ৪৯ রান সংগ্রহ করে। ৯.৪ বলে ডি কককে রান আউট করেন মুশফিক। ৪টি চার ৩২ বলে ২৩ রান করেন কক। মারক্রামকে সাথে নিয়ে এগোতে থাকেন অধিনায়ক ডু প্লেসিস। ৫৩ রানের পার্টনারশিপে ৪ টি বাউন্ডারিতে ব্যক্তিগত ৪৫ (৫৬) রানে সাকিবের বলে বোল্ড হন মারক্রাম। দলীয় ১৪৭ রানে মিরাজের বলে বোল্ড হন অধিনায়ক ডু প্লেসিস। ১ ছক্কা ও ৫ চারে ৫৩ বলে ৬২ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। মিলার ও ডাসেনের ব্যাট থেকে ৫৫ রান আসে প্রোটিয়াদের। ৩৫.১ ওভারে দলীয় ২০২ রানের সময় মুস্তাফিজুরের অসাধারণ ডেলিভারিতে পরাস্ত হন মিলার, ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে দুর্দান্ত ক্যাচ লুফে নেন মিরাজ। ২টি চারে ৪৩ বলে ৩৮ রান করেন মিলার। ক্রিজে তখন প্রোটিয়াদের ভরসা ডাসেন, দুমিনি। ৩৯.১ ওভারে আঘাত আনেন সাইফুদ্দিন। বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন ডাসেন। ১ ছক্কা ও ২ চারে ৩৮ বলে ৪১ রান করেন এই আফ্রিকান। ৪২.৫ বলে সাইফুদ্দিনের বলে ফেলুকোয়ায়য়োর ৮ (১৩) চমৎকার ক্যাচ ধরেন সাকিব। ৪৫.৫ ওভারে মরিসকে আউট করেন মুস্তাফিজুর। ৭ উইকেট হারিয়ে আফ্রিকার সংগ্রহ তখন ২৭৫ রান। ১৮ বলে তখন ৪৪ রান প্রয়োজন। ফিজের স্লোয়ার বাউন্সারে স্ট্রোক নিতে গিয়ে বোল্ড হন দুমিনি। ৪টি চারে ৩৭ বলে ৪৫ রান করে ঘরে ফেরেন তিনি। ৫০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা ৩০৯ রান তুলতে সক্ষম হয়। রাবাদা ১৩* (৯), তাহির ১০* (১০) রানে অপরাজিত থাকেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোরকার্ডঃ বাংলাদেশ ৫০ ওভারে ৩৩০/৬, তামিম ১৬ (২৯), সৌম্য ৪২(৩২), সাকিব ৭৫ (৮৪), মুশফিক ৭৮ (৮০), মিথুন ২১ (২১), মাহমুদুল্লাহ ৪৬* (৩৩), মোসাদ্দেক ২৬ (২০), মিরাজ ৫* (৩)। দক্ষিণ আফ্রিকা- এনগিডি ৪-০-৩৪-০, রাবাদা ১০-০-৫৭-০, ফেলুকোয়ায়ো ১০-১-৫২-২, মরিস ১০-০-৭৩-২, মারক্রাম ৫-০-৩৮-০, তাহির ১০-০-৫৭-২, দুমিনি ১-০-১০-০।
দক্ষিণ আফ্রিকা- ওভারে ৩০৯/৮ (ডি কক ২৩, মারক্রাম ৪৫, দু প্লেসি ৬২, মিলার ৩৮, ফন ডার ডাসেন ৪১, দুমিনি ৪৫, ফেলুকোয়ায়ো ৮, মরিস ১০, রাবাদা ১৩*, তাহির ১০*; বাংলাদেশ- মুস্তাফিজুর ১০-০-৬৭-৩, মিরাজ ১০-০-৪৪-১, সাইফুদ্দিন ৮-১-৫৭-২, সাকিব ১০-০-৫০-১, মাশরাফী ৬-০-৪৯-০, মোসাদ্দেক ৬-০-৩৮-০। ম্যাচ সেরা- সাকিব আল হাসান৷