স্টাফ রিপোর্টার
হাঁসের খামার গড়ে তুলে নড়াইল শহরের মহিষখোলা-আলাদাতপুর এলাকার পাঁচজন বেকার বন্ধু একযোগে বেকারত্ব ঘুচিয়ে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। খামারের দুই হাজার হাসের মধ্যে এক হাজার দুইশত হাসের আকষ্মিক মৃত্যুতে সে স্বপ্ন যেন দু:স্বপ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে।
মা বাবার কাছ থেকে ধার নেওয়া ও ঋণ নিয়ে গড়ে তোলা খামারের লোকসানের ঘাঁনি কিভাবে টানবেন তা ও নিয়েও রীতিমতো দু:শ্চিন্তায় পড়েছেন এই পাঁচ বেকার বন্ধু। ভূক্তভোগীরা অভিযোগ করছেন, জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তার ভুল চিকিৎসা ও অবহেলায় খামারে কয়েকদিন ধরে হাসের মৃত্যু হয়েছে। জানাগেছে, নড়াইল পৌরসভার আলাদাতপুর এলাকার গোলাম মোস্তফা (২৫) চারবছর ধরে ওমানে ছিলেন। বাড়ি আসার পর তিনি বেকার হয়ে পড়েন। বেকারত্ম ঘোচাতে তার বাল্য বেকার বন্ধুদের সাথে আলোচনা শুরু করেন।
মোস্তফাসহ তার অপর চার বন্ধু মঞ্জুরুল হক, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, ইমরান শেখ, মিন্টু শেখ মিলে আলোচনায় বসেন বেকারত্ম ঘোচানোর নতুন মিশন নিয়ে। সবাই মিলে সিন্ধান্ত নেন বড় আকারে একটি হাসের খামার গড়ে তুলবেন। সেই মোতাবেক মোস্তফার পতিত জমিতে হাসের খামারের কাজ শুরু করেন।
বন্ধু মঞ্জুরুল হক, শফিকুল ইসলাম সেন্টু বলেন, ‘আমরা পাঁচ বন্ধু মিলে খামারের নাম দিয়েছি। ‘ফ্রেন্ডস ডেভেলপমেন্ট এসোসিয়েশন’। হাসের খামারে সফলতার হলে আরো বেশ কিছু কর্মকান্ড করার স্বপ্ন নিয়েই আমরা কাজ শুরু করি। হাসের খামার পুরোপুরি প্রস্তুত হওয়ার পর গত ৬ মে নেত্রকোনা জেলা হতে দুই হাজার হাসের বাচ্চা আনা হয়। যথারীতি হাসের বাচ্চার যতœ ও খাওয়ানোর পর বেশ বড় হয়ে ওঠে। বাচ্চার বয়স ২৬দিন হওয়ার পর ২/১টি বাচ্চা অসুস্থ্য দেখা দিলে জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মারুফ হোসেনের নিকট যাই। তিনি একটি অসুস্থ্য বাচ্চা পোষ্টমর্টেম করে ওষুধ লিখে প্রেসক্রিপশন করে দেন। সেই মোতাবেক ওষুধ খাওয়ানোর পর পুরো খামার জুড়ে মড়ক শুরু হয়। হাসগুলি মাথা ঘুরে পড়ে গিয়ে আসতে আসতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে লাগলো। পুনরায় ডাক্তার সাহেবের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ওষুধ পাল্টিয়ে দেন। পরের ওষুধ খাওয়ানোর পর কিছু হাস সুস্থ্য হতে লাগলো।
হাস খামারী ইমরান শেখ ও মিন্টু অভিযোগ করে বলেন, ‘চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসার জন্য খামারের এক হাজার দুইশত হাস মারা গেছে। এ ঘটনার পর ওই চিকিৎসককে ফোন দিলে আর ফোন রিসিভ করেননি। এমনকি আমাদের খামার হতে জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয়ের দুরত্ব মাত্র দেড় কিলোমিটার হলেও তিনি কখনোই আমাদের খামার দেখতে আসেননি। আমাদের এতো বড় ক্ষতিতে এখন যেন আকাশ ভেঙ্গে মাথার ওপর পড়েছে। আমরা বেকাররা স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য খামার গড়ে তুললেও প্রাণী সম্পদ বিভাগের কেউ কোন খোঁজখবর নেয়নি। আমাদের অন্তত ৫ লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়ে গেছে। এই ক্ষতির জন্য জেলা প্রাণী সম্পদক কর্মকর্তাই দায়ি।’
এ ব্যাপারে জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মারুফ হোসেন দাবি করেন, নতুন খামার গড়ে তুললেও তাদের প্রশিক্ষণের অভাব থাকায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আমার কাছে আসার পর একটি হাস ময়নাতদন্ত করে ওষুধ দেওয়া হয়। পরে মোবাইলের মাধ্যমে ওষুধ পাল্টিয়ে দেই। এরপর ছুটিতে বাড়িতে চলে যাই। বাড়িতে থাকার কারনে ফোন হয়তো ধরা সম্ভব হয়নি। ছুটি শেষে কর্মস্থলে ফিরে আসলেও ওই খামারের কেউ আর যোগাযোগ করেনি।’
নড়াইল পৌসভার ৩নং ওয়ার্ডের (মহিষখোলালা) কাউন্সিলর কাজী জহিরুল হক বলেন, ‘ ৫ বেকার যুবক হাসের খামারটি করায় আমার পক্ষ থেকে তাদের সহযোগিতা করেছি। মাঝে মধ্যে গিয়ে খোঁজখবর নিয়েছি। কিন্তু হাসের মড়ক লাগলে প্রাণি সম্পদ বিভাগের চিকিৎসকদের দায়িত্বহীনতার কারনে প্রায় দেড় হাজার হাস মারা গেছে। আমি মনে করি এ জন্য চিকিৎসকের শাস্তি হওয়া উচিৎ। কেননা আমাদের জনগনের টাকায় সরকারী কর্মকর্তাদের বেতন হয়। জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা মারুফ হোসেন সব সময় এসি রুমে বসে থাকেন। তিনি কাজেকর্মে আন্তরিকক নন। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নজর দিবে বলে আমি আশা করি।’