ডেস্ক/এসএস
সাধারণ মানুষের বিশ্বাসকে পূঁজি করে বাজারজাত হচ্ছে নানা পণ্য। নকল মার্কা থেকে শুরু করে নামি-দামি ব্রান্ডেও ঠকতে হচ্ছে দেশের মানুষের। অনেক ক্ষেত্রেই ব্রান্ডেড পণ্য-খাবারের গুণগত মান নিয়েও উঠছে নানা প্রশ্ন। আসল-নকল/ভেজাল চিনতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে সকলের। জনসাধারণ সব থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ভেজালযুক্ত খাবার আহার করে। ১টাকার চকলেট থেকে শুরু করে চাল, ডাল, তেল, দুধ, নুন, এমনকি পানি পর্যন্ত যে যেমন পারছে কিছু বাড়তি লাভের জন্য ভোক্তাদের শারীরিক কিংবা আর্থিকভাবে অপঘাত করে চলেছে। এমতাবস্থায় বিশ্বাসের জায়গাটা এখন অনেকটাই দ্বিধাগ্রস্ত সকলের।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের নমুনা পরীক্ষায় উঠে আসা নমুনা অনুযায়ী বাজারে প্রাপ্ত ৭টি দুধই মানহীন। এর মধ্যে রয়েছে প্রাণ, মিল্কভিটা, আড়ংসহ’সহ ৭টি কোম্পানির পাস্তুরিত দুধের কোম্পানির দুধ। এসকল পাস্তুরিত দুধের কোনোটিতে মিলেছে মাত্রাতিরিক্ত কলিফর্মের উপস্থিতি, আবার কোনোটিতে মিলেছে এন্টিবায়োটিক। আবার সর্বমোট পাঁচটি কোম্পানি উৎপাদিত পাস্তুরিত দুধে ডিটারজেন্টের সন্ধান পেয়েছেন গবেষকরা। কোম্পানিগুলো হলো- প্রাণ, মিল্ক ভিটা, ইগলু, আড়ং ও ফার্ম ফ্রেশ।
কিছু দিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান গ্রন্থাগারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগ খাদ্যের গুনগত মান পরীক্ষার ব্যবস্থা করে এবং মঙ্গলবার সকালে পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ ও প্রতিবেদন প্রকাশ করে । এতে বলা হয়, প্রাণ, মিল্কভিটা, আড়ংসহ পাস্তুরিত দুধের ৭ টি নমুনার কোনোটিতেই কাঙ্খিতমাত্রার ‘সলিড নট ফ্যাট’ পাওয়া যায়নি।
এবিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলন ডাকা হলে বায়োমেডিকেল রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক এবিএম ফারুক বলেন, ‘আমরা এসব কোম্পানি উৎপাদিত পাস্তুরিত ও অপাস্তুরিত কাঁচা দুধ পরীক্ষা করে তাতে ডিটারজেন্ট ও অ্যান্টিবায়োটিক পেয়েছি।’ তিনি আরও জানান “আমরা যে অ্যান্টিবায়োটিকের সন্ধান পেয়েছি সেগুলো মানুষের ব্যবহারের জন্য। মানুষ ও প্রাণির অ্যান্টিবায়োটিক সম্পূর্ণ আলাদা। মানুষের অ্যান্টিবায়োটিক প্রাণির ওপর ব্যবহার বন্ধ করা দরকার।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষকরা এছাড়া অবগত করেন যে ফ্রুট ড্রিংকসের ১১ টি নমুনার কমবেশি সবগুলোতে নিষিদ্ধ ক্ষতিকর সাইক্লামেট পেয়েছেন তারা। এগুলো হলো, স্টার শিপ ম্যাংগো ফ্রুট ড্রিংকস, সেজান ম্যাংগো ড্রিংক, প্রাণ ফ্রুটো, অরেনজি, প্রাণ জুনিয়র ম্যাংগো ফ্রুট ড্রিংক, রিটল ফ্রুটিকা, সান ড্রপ, চাবা রেড এপল, সানভাইটাল নেক্টার ডি ম্যাংগো, লোটে সুইটেন্ডএপল, ট্রপিকানা টুইস্টার। এছাড়াও উক্ত পরীক্ষার ফলাফল অনুযায়ী আড়ং, বাঘাবাড়ি, প্রাণ, মিল্ক ভিটা, মিল্কম্যান, সুমির ও টিনে বিক্রি হওয়া ঘি মানোত্তীর্ণ হতে ব্যর্থ হয়েছে। পাশাপাশি রুপচাঁদা, পুষ্টি, সুরেশ, ড্যানিশ, ও বসুধা সরিষা তেলসহ বাজারে বিক্রি হওয়া বিভিন্ন ভোজ্যতেলেও মানহীনতার ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে ।
এর আগে প্রায় ছয় মাস আগে ন্যাশনাল ফুড সেফটি অথরিটি বাজারে তরল দুধ এবং দুগ্ধজাত সামগ্রীর নমুনা নিয়ে ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করেছিল এবং তারা ও বেশিরভাগ নমুনাতে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নানা উপাদানের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।
কিন্তু বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড এন্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউশন (বিএসটিআই) মঙ্গলবার হাইকোর্টে একটি প্রতিবেদন দাখিল করে বলেছে তাদের দ্বারা অনুমোদিত পাস্তুরিত তরল দুধে কোন ক্ষতিকারক উপাদান নেই। তারা মে মাসের ২৩ তারিখ থেকে ২৯ তারিখ পর্যন্ত বিএসটিআই-এর অনুমোদিত ১৮টি কোম্পানির পাস্তুরিত তরল দুধের নমুনা পরীক্ষা করেন এবং এর মধ্যে কোন ক্ষতিকারক উপাদান মেলেনি বলে দাবি করেন। দুগ্ধজাত পদার্থ এবং পাস্তুরিত প্যাকেটজাত তরল দুধে এই ক্ষতিকর পদার্থ নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন সংস্থার ভিন্ন ভিন্ন মতভেদের কারনে তাই সাধারণ জনগণের মনে জন্ম দিচ্ছে কিছু প্রশ্নের।