স্টাফ রিপোর্টার
নড়াইল সরকারী মহিলা কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। অধ্যক্ষ প্রফেসর ডঃ মোঃ মাহবুবুর রহমান কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে অনিয়ম ও দূর্নীতির মাধ্যমে সরকারী অর্থ আত্মসাত করছেন। এছাড়া অধ্যক্ষ ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন বলে কলেজের একাধিক ছাত্রী, শিক্ষক ও কর্মচারীরা অভিযোগ করেন।
অভিযোগে জানা যায়, নড়াইল সরকারী মহিলা কলেজে ২ হাজার টাকা করে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি বাবদ নেয়ার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নির্দেশ থাকলেও বিজ্ঞান বিভাগে ২ হাজার ৫৩৭ টাকা এবং মানবিক ও বানিজ্য বিভাগে ২ হাজার ৪৩৭টাকা করে ভর্তি বাবদ নেয়া হয়েছে। একাদশ শ্রেণীতে মোট ৪৮৬জন ভর্তি হয়েছে বলে জানা যায়। অপরদিকে কলেজের ৬টি আম, ১টি বকুল, ১টি অর্জুন, ৩টি কাঠাল, ১টি কৃষ্ণচুড়া, ১টি শীলকড়াই গাছ অধ্যক্ষ কেটে বিক্রি করে দিয়েছেন। যার আনুমানিক মূল্য একলক্ষ টাকা। তিনি কলেজের মেয়েদের গেমস রুমে আবাসিক হিসেবে বসবাস করছেন। এছাড়া কলেজের হোস্টেলের মেয়েদের সঙ্গে নিয়মিত খাবারও খাচ্ছেন। অধ্যক্ষ নিজে কলেজে আবাসিক হিসেবে থাকেন।
অন্যদিকে কলেজের প্রধান হিসাব রক্ষক আব্দুল আলিমের ভাতিজা এমএলএস আশরাফুল আলমকে কলেজের মধ্যে তিন তলায় একটি রুমে থাকতে দিয়েছেন। ২০১২ সালে পুলিশের ওপর হামলা মামলার সে অন্যতম আসামী। ওই মামলায় সে ১০মাস নড়াইল জেলা কারাগারে ছিল (০২.০৬.২০১২ হতে ০৯.০৪.২০১৩ পর্যন্ত)। জানা যায়, অধ্যক্ষ কলেজ ও হোস্টেলের যাবতীয় পুরানো মালামাল বিক্রয় কমিটি ছাড়াই বিক্রয় করে দিয়েছেন। কিছু গ্রিলের জানালাসহ অন্যান্য মালামাল সামগ্রী প্রধান হিসাব রক্ষকের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে ব্যবহার করা হচ্ছে। অধ্যক্ষ বেশির ভাগ সময়ে ছুটি ছাড়াই কর্মস্থলে থাকেন না। আবার কাউকে লিখিত দায়িত্ব ও দেননা। বেশির ভাগ সময়ে নিজ বাড়ি ঢাকাতে থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এরই ধারাবাহিকতায় ২জুলাই সহকারী অধ্যক্ষ নজরুল ইসলামের ওপর এক দিনের দায়িত্ব দিয়ে তিনি ৪ দিন পর অর্থাৎ ৭ জুলাই কর্মস্থলে আসেন। কলেজের সম্পাদক নির্বাচনে ভোট গণনায় অসচ্ছতা ও অনিয়ম হয়েছে এই মর্মে ১৩জন শিক্ষক ভোটারের মধ্যে ৯ জন লিখিত অভিযোগ করার পরও অধ্যক্ষ কোন ব্যবস্থা নেননি। বরং ভোটে জয়ী হতে পারেননি এমন একজন শিক্ষক আলী হোসেনকে সম্পাদক নির্বাচিত করেন। তিনি বেশির ভাগ শিক্ষক ও কর্মচারীদের সঙ্গে খারাফ ব্যবহার করে থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে।কলেজের পরীক্ষা পরিচালনার জন্য একাধিক কমিটি নির্বাচনে অনৈতিক ভাবে নিজের পছন্দের শিক্ষকদের বার বার সদস্য হিসাবে নির্বাচিত করেন মর্মেও অভিযোগ রয়েছে।
তারা আরও অভিযোগ করেন, অধ্যক্ষের পছন্দের শিক্ষকদের সুকৌশলে বেশি আর্থিক সুবিধা দেন। এসব পরীক্ষা হতে নিজের ইচ্ছামত সম্মানী নেন। সরকারী পরিপত্রের বন্টন নীতিমালা উপেক্ষা করে অধ্যক্ষ নিজের ইচ্ছামত বন্টন নীতিমালা করেছেন। যে কারণে পর্যবেক্ষকবৃন্দ উপযুক্ত সম্মানী পান না। ২০১৯ সালের ২৪৫ জন এইচএসসি পরীক্ষার্থীর নিকট থেকে অতিরিক্ত ক্লাসের জন্য ৩০০ টাকা করে নেয়া হয়েছে। অথচ কোন শিক্ষককে এখন পর্যন্ত টাকা দেয়া হয়নি।
এ বিষয়ে অধ্যক্ষ প্রফেসর ডঃ মো.মাহবুবুর রহমান অতিরিক্ত অর্থ নেয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘ভর্তি ও পরীক্ষার ফিস বাবদ এককালীন উক্ত টাকা নিয়ে ভর্তি করছি। কোন অনিয়ম হয়নি। আমি কোন গাছ বা কলেজের কিছুই বিক্রি করিনি’। তাঁর বিরুদ্ধে অন্যান্য অভিযোগও অস্বীকার করেন। প্রধান হিসাব রক্ষক আব্দুল আলিম বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সত্য নহে।’
এ প্রসঙ্গে যশোর বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক কে এম রাব্বানী বলেন, ‘একাদশ শ্রেনীতে ভর্তি হতে সরকারী নিয়মের বাইরে কোন অতিরিক্ত টাকা নেয়ার সুযোগ নাই। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ এ ব্যাপারে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর.ঢাকার পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) প্রফেসর শাহেদুল খবির চৌধূরীর সঙ্গে টেলিফোন ও মোবাইলে যোগাযোগ করে পাওয়া যায়নি।