নিউ জিল্যান্ডকে কাঁদিয়ে প্রথম ক্রিকেট বিশ্বকাপের শিরোপা জিতল স্বাগতিক ইংল্যান্ড

3
8

স্পোর্টস ডেস্ক

ক্রিকেট বিশ্বকাপের এমন ফাইনাল দেখেনি বিশ্ব। এমন শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচ ফাইনালের ইতিহাসে এর আগে হয়তো ঘটেনি। ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ ওয়ানডে বিশ্বকাপের নতুন চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ইংল্যান্ড। তবে ম্যাচটি জিততে তাদের বেগ পেতে হয়েছে। ম্যাচটি সুপার ওভারে গিয়েও টাই হয়। বাউন্ডারি বিবেচনায় কিউইদের হারিয়ে প্রথমবারের মত বিশ্বকাপ শিরাপা ঘরে নিল স্বাগতিক ইংল্যান্ড।

লর্ডসের ফাইনালে প্রথমে ব্যাট করে ৮ উইকেটে ২৪১ রান করে নিউজিল্যান্ড। জবাবে ৫০ ওভারে সবক’টি উইকেট হারিয়ে ২৪১ রান করে ইংল্যান্ড। ফলে ম্যাচটি টাই হয়। তাই শিরোপা নির্ধারনের জন্য ম্যাচটি সুপার ওভারে গড়ায়। সেখানেও টাই হয়। তবে নিয়মনুযায়ী সুপার ওভার টাই হওয়াতে, সবচেয়ে বেশি বাউন্ডারি-ওভার বাউন্ডারি করা দল শিরোপা জিতে নিবে। সেক্ষেত্রে শিরোপা জিতে নিলো ইংল্যান্ড।

টসে জিতে প্রথমে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেয় নিউজিল্যান্ড। বৃষ্টির জন্য প্রায় ১৫ মিনিট পর শুরু হওয়া ম্যচে ব্যাট হাতে নেমে ভালো শুরুর পথেই হাটচ্ছিলেন নিউজিল্যান্ডের দুই ওপেনার মার্টিন গাপটিল ও হেনরি নিকোলস। ৬ ওভারে ২৮ রান সংগ্রহ করেন তারা। তবে সপ্তম ওভারে নিউজিল্যান্ড শিবিরে প্রথম আঘাত হানেন ইংল্যান্ড পেসার ক্রিস ওকস। নিজের চতুর্থ ওভারের দ্বিতীয় বলে ১৯ রান গাপটিলকে লেগ বিফোর ফাঁদে ফেলেন ওকস। ২টি চার ও ১টি ছক্কায় ১৮ বলে ১৯ রান করে বিদায় নেন গত আসরে এক ইনিংসে বিশ্ব রেকর্ড ২৩৭ অপরাজিত থাকা গাপটিল।

ওপেনারকে হারানোর পর ইনিংস মেরামতের চেষ্টা করেন আরেক ওপেনার নিকোলস ও অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। শুরুতে সতর্কতা অবলম্বন করেন তারা। তবে দ্রুতই উইকেটে সাথে মানিয়ে নিয়ে দলের স্কোর বড় করতে থাকেন এ জুটি। ২২তম ওভারেই শতরানে পৌঁছে যায় নিউজিল্যান্ড। তখন রান রেট সাড়ে ৪ এর সামান্য বেশি। দলকে শতরানে পৌঁছে দিয়েই প্যাভিলিয়নে ফিরতে হয় বিশ্বকাপ এক আসরে অধিনায়ক হিসেবে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়া উইলিয়ামসনকে। তবে ইংল্যান্ড অধিনায়ক ইয়োইন মরগানের রিভিউতে আউট হন তিনি। ইংল্যান্ড পেসার লিয়াম প্লাংকেটের বলে উইকেটের পেছনে জশ বাটলারের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হওয়ার আগে ৫৩ বল মোকাবেলায় ২টি চারে ৫৩ বলে ৩০ রান করেন তিনি। ৯৮ বল মোকাবেলা করে এই জুটি যোগ করেন ৭৪ রান।

উইলিয়ামসন আউট হওয়ার সময় অন্যপ্রান্তে হাফ-সেঞ্চুরির অপেক্ষায় ছিলেন নিকোলস। পরবর্তীতে হাফ-সেঞ্চুরি তুলেও নেন তিনি। কিন্তু অর্ধশতকের পর নিজের ইনিংসটি বড় করতে পারেননি নিকোলস। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের নবম ও এবারের আসরের প্রথম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে শেষ পর্যন্ত ৫৫ রানে থেমে যান তিনি। প্লাংকেটের বলে বোল্ড হবার আগে ৪টি চারে নিজের ৭৭ বলের ইনিংসটি সাজান নিকোলস। ১০৩ ও ১১৮ রানে দুই সেট ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে চাপে পড়ে যায় নিউজিল্যান্ড। এ অবস্থায় দলের হাল ধরার দায়িত্ব বর্তায় দুই মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যান অভিজ্ঞ রস টেইলর ও উইকেটরক্ষক টম লাথামের। দায়িত্ব পালনের জন্য সর্তকতা অবলম্বন করেন তারা। দেখেশুনে জুটি বড় করার চেষ্টা করেন টেইলর ও লাথাম। কিন্তু তাদের পথে এবার বাঁধা হয়ে দাঁড়ান ইংল্যান্ডের পেসার মার্ক উড। কোন বাউন্ডারি-ওভার বাউন্ডারি ছাড়া ৩১ বলে ১৫ রান করা টেইলরকে এলবিডব্লু করেন উড। দলীয় ১৪১ রানে চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে প্যাভিলিয়নে ফিরতে হয় টেইলরকে।

এ অবস্থায় জেমস নিশামকে নিয়ে প্রতিআক্রমনের চেষ্টা করেন লাথাম। ইংল্যান্ড বোলারদের উপর চড়াও হবার চেষ্টা করেন এ জুটি। যাতে উল্টো চাপে পড়ে যায় ইংল্যান্ডের বোলাররা। চাপে পড়েও গিয়েছিলো স্বাগতিক বোলাররা। বলের সাথে পাল্লা দিয়েই রান তুলছিলেন লাথাম-নিশাম। তবে ৩৯তম ওভারের শেষ বলে নিজের ভুল শটে আউট হয়ে যান নিশাম। প্লাংকেটের ডেলিভারিটি মিড-অনের উপর দিয়ে মারতে গিয়ে ৩০ গজের ভেতর দাঁড়িয়ে থাকা জো রুটকে ক্যাচ দেন নিশাম। ৩টি চারে ২৫ বলে ১৯ রান করে প্লাংকেটের তৃতীয় শিকার হন নিশাম।

৩৯তম ওভারের শেষ বলে দলীয় ১৭৩ রানে পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন নিশাম। বাকী ১১ ওভারে নিউজিল্যান্ডের রান কোথায় পৌঁছায় সেটিই ছিলো দেখার ছিলো। বড় স্কোরের আশা শেষ হয়ে যাওয়ায় দলকে লড়াই করার পুঁিজ এনে দেয়ার পরিকল্পনা কষেন লাথাম ও সাত নম্বরে নামা কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম। এজন্য ওভার প্রতি ছয় করে রান তুলতে থাকেন তারা। এমন অবম্থায় ২শ পেরিয়ে আড়াইশ’র স্বপ্ন দেখছিলো নিউজিল্যান্ড। কিন্তু গ্র্যান্ডহোমকে থামিয়ে দিয়ে এই জুটির স্বপ্নকে ধুলিসাৎ করে দেন ওকস। ২৮ বলে ১৬ রান করেন গ্র্যান্ডহোম। লাথামের সাথে ষষ্ঠ উইকেটে ৪৭ বলে ৪৬ রান যোগ করেন গ্র্যান্ডহোম।

একই ওভারে ফিরে যান লাথামও । ফলে আড়াইশ রান স্পর্শ করার শেষ আশাটুকুও শেষ হয়ে যায় নিউজিল্যান্ডের। ২টি চার ও ১টি ছক্কায় ৫৬ বলে ৪৭ রান করেন লাথাম। তাকে ফিরিয়েছেন ইংল্যান্ডের পেসার ওকস। এরপর ইনিংসের বাকী ৯ বলে ৯ রানের বেশি করতে পারেনি নিউজিল্যান্ড। শেষ পর্যন্ত ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ২৪১ রানের সংগ্রহ পায় নিউজিল্যান্ড। ইংল্যান্ডের ওকস ৩৭ রানে ও প্লাংকেট ৪২ রানে ৩ উইকেট নেন।

সেমিফাইনালে ভারতকে জয়ের জন্য ২৪০ রানের টার্গেট দিয়েছিলো নিউজিল্যান্ড। পরবর্তীতে সেই ম্যাচ ১৮ রানে জিতেছিলো কিউইরা। ফাইনালে ইংল্যান্ডকে জয়ের জন্য ২৪২ রানের লক্ষ্যমাত্রা ছুড়ে দেয় নিউজিল্যান্ড। এমন পুঁিজতেও লড়াই করার সাহস করেছে নিউজিল্যান্ড। কারন ভারতকে হারানোর আত্মবিশ্বাস ভরপুর ছিলো কিউই বোলারদের। তবে ইংল্যান্ড ইনিংসের প্রথম বলেই উইকেট প্রায় তুলেই নিয়েছিলেন বোল্ট। ইংল্যান্ড ওপেনার জেসন রয়কে লেগ বিফোর ফাঁেদ ফেলেন নিউজিল্যান্ডের বাঁ-হাতি পেসার ট্রেন্ট বোল্ট। কিন্তু রয়ের বিপক্ষে নিউজিল্যান্ডের বোলার-ফিল্ডারদের আউটের আবেদনে সাড়া দেননি নন-স্ট্রাইকে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকার আম্পায়ার মারাইস এরাসমাস। এতে রিভিউ নেন কিউই দলপতি। পরে রিভিউতে দেখা যায় আম্পায়ারস কল-এ বেঁচে যান রয়। এরপর ইংল্যান্ড শিবিরে প্রথম আঘাত হানতে ষষ্ঠ ওভার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় নিউজিল্যান্ডকে।

শুরুটা ভালো করার চেষ্টায় প্রথম ৫ ওভারে ২৪ রান তোলেন ইংল্যান্ডের দুই ওপেনার জেসন রয় ও জনি বেয়ারস্টো। ষষ্ঠ ওভারের দ্বিতীয় ওভারে বাউন্ডারি হাকান রয়। তবে ঐ ওভারের চতুর্থ বলে আউট হয়ে যেতে হয় তাকে। হেনরির বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে থামা রয় ২০ বলে ৩টি বাউন্ডারিতে ১৭ রান করেন। দলীয় ২৮ রানে রয়ের পতনের পর ক্রিজে যান ইংল্যান্ডের ইনফর্ম ব্যাটসম্যান জো রুট। এ ম্যাচের আগে ব্যাট হাতে এবারের আসরে ৫৪৯ রান করেছিলেন তিনি। আজও তার দিকে চেয়েছিলো ইংল্যান্ড শিবির। কিন্তু রুটকে ব্যর্থতার স্বাদ দিয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরান নিউজিল্যান্ডের গ্র্যান্ডহোম। উইকেটে সেট হবার জন্য অনেক বল নষ্ট করেছেন রুট। ৩০ বলে মাত্র ৭ রান করেন এই ডান-হাতি ব্যাটসম্যান।

রুট ধীরস্থির থাকলেও ইংল্যান্ডের রানের চাকা সচল রেখেছিলেন অন্যপ্রান্তে থাকা বেয়ারস্টো। তবে বড় ইনিংস খেলতে পারেননি তিনি। দারুন এক ডেলিভারিতে বেয়ারস্টোর উইকেট উপড়ে ফেলেন ফার্গুসন। ৭টি চারে ৫৫ বলে ৩৬ রান করেন তিনি। দলীয় ৭১ রানে বেয়ারস্টোর ফেরাতে চাপ অনুভব করতে শুরু করে ইংল্যান্ড। কিছুক্ষণবাদেই ইংল্যান্ডের উপর চাপ আরো বেড়ে যায়।

১৫ ওভার শেষে ১ উইকেটে ৫৬ রান তোলে ইংল্যান্ড। এ অবস্থায় ১৬ ওভার থেকে ২৩ ওভার পর্যন্ত দু’প্রান্ত দিয়ে বোলিং করেন গ্র্যান্ডহোম-ফার্গুসন। দু’জনে ৭ ওভার একত্রে বল করে ৩০ রান দিয়ে ২ উইকেট তুলে নেন। তারপরও ২৪তম ওভারে ফার্গুসনকে সরিয়ে আচমকা বল হাতে নিশামকে আক্রমনে আনেন নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক উইলিয়ামসন।

আক্রমণে এসেই নিজের প্রথম বলেই উইকেট তুলে নেন নিশাম। উইকেটটি ছিলো ইংল্যান্ড অধিনায়ক ইয়োইন মরগানের। উইকেটে গিয়ে সময় নিয়ে সেট হবার চেষ্টা করেছিলেন মরগানও। তাই ২২ বল মোকাবেলা করে ৯ রানের বেশি করতে পারেননি তিনি। ফার্গুসনের দুর্দান্ত ক্যাচে শেষ হয় মরগানের ইনিংস। এতে ৮৬ রানেই চতুর্থ উইকেট হারিয়ে বসে ইংল্যান্ড। এ অবস্থায় ম্যাচের নিয়ন্ত্রন পুরোপুরিভাবে নিয়ে নেয় নিউজিল্যান্ড।

নিউজিল্যান্ডের নিয়ন্ত্রন ও ইংল্যান্ডের চাপের মাঝে ২২ গজে ব্যাট হাতে জুটি বাঁধেন স্বাগতিক ব্যাটসম্যান বেন স্টোকস ও উইকেটরক্ষক জশ বাটলার। ম্যাচের পরিস্থিতি বুঝে খেলতে থাকেন স্টোকস-বাটলার। তবে সর্তকতার সাথেই। সেটির প্রমান মিলে ২৫ থেকে ৪০ ওভার পর্যন্ত। এসময় মাত্র ৬টি বাউন্ডারি মারেন তারা। ফলে ৪০ ওভার শেষে ইংল্যান্ডের রান গিয়ে দাঁড়ায় ৪ উইকেটে ১৭০। শেষ দশ ওভারে ৭২ রান প্রয়োজন পড়ে ইংলিশদের। এ সময় বাটলার ৪২ ও স্টোকস ৪৩ রানে অপরাজিত ছিলেন।

কিছুক্ষণ পর নিজেদের ওয়ানডে ক্যারিয়ারের হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন স্টোকস-বাটলার। দু’জনেরই ২০তম হাফ-সেঞ্চুরি পান। হাফ-সেঞ্চুরির মাঝেই ১২৬ বলে জুটিতে শতরান পূর্ণ করেন স্টোকস-বাটলার। দু’ব্যাটসম্যানের হাফ-সেঞ্চুরি ও জুটিতে শতরানের কল্যানে ৪৪ ওভার শেষে ৪ উইকেটে ১৮৯ রান করে ইংল্যান্ড। ফলে শেষ ৬ ওভারে ৫৩ রান দরকার পড়ে ইংলিশদের। এমন সময় ৪৫তম ওভারে নিউজিল্যান্ডকে দারুন এক ব্রেক-থ্রু এনে দেন ফার্গুসন। ঐ ওভারের দ্বিতীয় বলে বাউন্ডারি মারেন বাটলার। পঞ্চম বলে আবারো বাউন্ডারির জন্য সজোরে ব্যাট চালিয়েছিলেন বাটলার। কিন্তু তার নেয়া শটে বল আকাশে উঠে যায়। ডিপ কভারে দক্ষতার সাথে ছুটে গিয়ে ক্যাচ লুফে নেন দ্বাদশ খেলোয়াড় টিম সাউদি। ফলে ৬টি চারে ৬০ বলে ৫৯ রানে থামে বাটলারের দায়িত্বপূর্ণ ইনিংস। পঞ্চম উইকেটে ১২৯ বলে ১১০ রান যোগ করেন বাটলার-স্টোকস।

বাটলার যখন ফিরেন তখন জয় থেকে ৪৬ রান দূরে ইংল্যান্ড। বল বাকী ছিলো ৩১টি। এময় ক্রিজে স্টোকসের সঙ্গী হন টেল-এন্ডার ব্যাটসম্যান ওকস। ওকসকে বেশিক্ষণ ক্রিজে থাকতে দেননি ফার্গুসন। ইনিংসের ৪৭ ও নিজের শেষ ওভারের প্রথম বলে ওকসকে ২ রানে আউট করেন ম্যাচে তৃতীয় উইকেট শিকার করেন ফার্গুসন। এরপর ঐ ওভার থেকে ৫ রান পায় ইংল্যান্ড। এরমধ্যে নতুন ব্যাটসম্যান লিয়াম প্লাংকেটের একটি বাউন্ডারি ছিলো। ফলে শেষ ১৮ বলে জয়ের সমীকরন ৩৪ রানে নেমে আসে ইংলিশদের।

বোল্টের করা ৪৮তম ওভার থেকে ১টি বাউন্ডারিতে ১০ রান তুলে নেন স্টোকস-প্লাংকেট। জয়ের সমীকরন তখন দাড়ায় ১২ বলে ২৪ রান। ৪৯তম ওভারে নিশামের প্রথম দু’বল থেকে ২ রান পায় ইংল্যান্ড। তৃতীয় ডেলিভারিতে প্লাংকেটকে বিদায় দেন নিশাম। বোল্টকে ক্যাচ দিয়ে ১০ রানে থামেন প্লাংকেট। চতুর্থ ডেলিভারিতে ছক্কা মেরে উত্তেজনা তৈরি করেন স্টোকস। পঞ্চম বলে ১ রান নিয়ে নবম ব্যাটসম্যান জোফরা আর্চারকে স্ট্রাইক দেন স্টোকস। কিন্তু ঐ ওভারের শেষ বলে আর্চারকে শুন্য রানে বোল্ড করেন নিশাম। এমন অবস্থায় শেষ ৬ বলে ১৫ রান দরকার পড়ে ইংল্যান্ডের।

বিশ্বকাপের ও ম্যাচের শেষ ওভার বোলিং করতে আসেন বোল্ট। প্রথম দুই বলে কোন রানই নিতে পারেনি স্বাগতিকরা। তৃতীয় বলে মিড-উইকেট দিয়ে ছক্কা মারেন স্টোকস। চতুর্থ বলে ঐ একই জায়গা দিয়ে মেরেছিলেন তিনি। কিন্তু বল মাটি কামড়ে গাপটিলের হাতে পৌছায়। গাপটিল বল ছুড়ে মারেন উইকেটরক্ষকের দিকে, কারন দু’রানের জন্য স্ট্রাইকে ছুটচ্ছিলেন স্টোকস। কিন্তু গাপটিলের থ্রো করা বল স্টোকসের গায়ে লেগে বাউন্ডারি স্পর্শ করে। ফলে এই বল থেকে দৌড়ে ২ ও ওভার-থ্রোতে ৪ রান নিয়ে মোট ৬ রান পায় ইংল্যান্ড। তাই শেষ ২ বলে ৩ রান দরকার পড়ে ইংল্যান্ডের। পঞ্চম বলে ২ রান নিতে গিয়ে রান আউট হন আদিল রশিদ। ফলে ১ রান পায় ইংল্যান্ড। তাই শেষ বলে ২ রান প্রয়োজন পড়ে ইংল্যান্ডের। শেষ বলে ২ রানের জন্য ছুটে রান আউট হন মার্ক উড। ফলে ১ রান পায় ইংল্যান্ড। ম্যাচটি হয় টাই। এতে নিয়মনুযায়ী শিরোপা নির্ধারনের জন্য ম্যাচটি সুপার ওভারে গড়ায়। ওয়ানডে বিশ্বকাপের ইতিহাসে এই প্রথম কোন ম্যাচ সুপার ওভারে গড়ালো। স্টোকস ৫টি চার ও ২টি ছক্কায় ৯৮ বলে অপরাজিত ৮৪ রান করেন। নিউজিল্যান্ডের ফার্গুসন ও নিশাম ৩টি করে উইকেট নেন।

সুপার ওভারে প্রথমে ব্যাট করতে নামে ইংল্যান্ড। ব্যাট হাতে নামেন ইংল্যান্ডের বাটলার ও স্টোকস। দু’জনই ঐ ইনিংসে হাফ-সেঞ্চুরি করেছিলেন। বাটলার ৫৯ ও স্টোকস ৮৪ রানে অপরাজিত ছিলেন। সুপার ওভারের প্রথম বলে ৩ রান নেন স্টোকস, পরের বলে ১ রান নেন বাটলার, তৃতীয় বলে বাউন্ডারি মারেন স্টোকস, চতুর্থ বলে ১ রান নিয়ে বাটলারকে স্ট্রাইক দেন স্টোকস। ফলে ৪ বলে ৯ রান পায় ইংল্যান্ড। পঞ্চম বলে ২ রান ও শেষ বলে বাউন্ডারি মারেন বাটলার। ফলে ১ ওভারে ১৫ রান সংগ্রহ পায় ইংল্যান্ড। ম্যাচ জিততে ১৬ রানের টার্গেট পায় নিউজিল্যান্ড।

জবাবে ইংল্যান্ডের পেসার আর্চারের প্রথম ৫ বল থেকে ১৪ রান তুলে ফেলেন নিউজিল্যান্ডের ওপেনার নিশাম। শেষ বলে জয়ের জন্য ২ রান দরকার পড়ে কিউইদের। শেষ বলে ২ রান নিতে গিয়ে রান আউট হন গাপটিল। ফলে সুপার ওভারও টাই হয়। ফলে ম্যাচে সবচেয়ে বেশি বাউন্ডারি- ওভার বাউন্ডারি মারার কারনে শিরোপা জিতে নেয় ইংল্যান্ড।

সংক্ষিপ্ত স্কোর: নিউ জিল্যান্ড: ৫০ ওভারে ২৪১/৮ (গাপটিল ১৯, নিকোলস ৫৫, উইলিয়ামসন ৩০, টেইলর ১৫, ল্যাথাম ৪৭, নিশাম ১৯, ডি গ্র্যান্ডহোম ১৬, স্যান্টনার ৫*, হেনরি ৪, বোল্ট ১*; ওকস ৯-০-৩৭-৩, আর্চার ১০-০-৪২-১, প্লাঙ্কেট ১০-০-৪২-৩, উড ১০-১-৪৯-১, রশিদ ৮-০-৩৯-০, স্টোকস ৩-০-২০-০)।

ইংল্যান্ড: ৫০ ওভারে ২৪১ (রয় ১৭, বেয়ারস্টো ৩৬, রুট ৭, মর্গ্যান ৯, স্টোকস ৮৪*, বাটলার ৫৯, ওকস ২, প্লাঙ্কেট , আর্চার ০, রশিদ ০, উড ০; বোল্ট ১০-০-৬৭-০, হেনরি ১০-২-৪০-১, ডি গ্র্যান্ডহোম ১০-২-২৫-১, ফার্গুসন ১০-০-৫০-৩, নিশাম ৭-০-৪৩-৩, স্যান্টনার ৩-০-১১-০)। ফল: ম্যাচ ও সুপার ওভার টাই; বাউন্ডারিতে এগিয়ে থেকে চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড। ম্যান অব দা ম্যাচ: বেন স্টোকস। ম্যান অব দা টুর্নামেন্ট: কেন উইলিয়ামসন। (সূত্রঃ বাসস)