স্টাফ রিপোর্টার
ভিআইপির ফরমায়েশ খাটতে তিন ঘন্টা ফেরী চলাচল বন্ধ রাখায় বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করা নড়াইলের কালিয়ার স্কুল ছাত্র তিতাশের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। গত তিন দিনেও থামেনি তার স্বজনদের আহাজারি। মা সোনামনির আহাজারিতে পৌরশহরের বড়কালিয়া গ্রামের বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। একজন ভিইপির ক্ষমতার দাপটে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণকারী তিতাস কালিয়া সরকারি পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র ও ওই গ্রামের মৃত তাপস ঘোষের ছেলে। তিতাশের মৃত্যুর প্রতিবাদে ও দায়ীদের বিচারের দাবিতে সোমবার সকালে তিতাসের বিদ্যালয়সহ কয়েকটি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা মানববন্ধন করেছেন।
তিতাসের মৃত্যুতে তার বিদ্যালয়সহ এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো ফুসে উঠেছে। সোমবার সকাল সোয়া ১১টার দিকে কালিয়া সরকারি পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনের সড়কে তিতাসের বিদ্যালয়সহ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা প্রায় অর্ধ কিলোমিটার জুড়ে তিতাসের বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর প্রতিবাদে ও ক্ষমতার দাপটে বিয়ের অনুষ্ঠানে যেতে যারা ফেরী চলাচল বন্ধ করে তার চিকিৎসা কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি করেছে তাদের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছে। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, কালিয়া সরকারি পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিএম শুকুর আলী, সাবেক প্রধান শিক্ষক দেব কুমার ঘোষ,সহকারী প্রধান শিক্ষক তরুন কান্তি মল্লিক,সহকারী শিক্ষক সাজ্জাদ হোসেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগের উপসম্পাদক ইয়াছমিন জনি প্রমুখ।
পুত্র শোকে নির্বাক পাথর হয়ে গেছে তিতাসের গর্ভ ধারিনী মা সোনা মনি ঘোষ। বাড়িতে থাকা ছেলের ব্যবহৃত পোষাক বুকে নিয়ে কখনও নিরবে চোখের পানি ফেলছেন আবার কখনও চিৎকার করে আহাজারি করে কেদে চলেছেন। সাংবাদিক পরিচয় পেতেই তিনি হাউমাউ করে কেঁদে কেঁদে বললেন তার ছেলে বিনা চিকিৎসায় মারা গেল। ছেলে তিতাসের চিকিৎসায় বাধা সৃষ্টিতে যারা দায়ী, তাদের বিচারের আওতায় আনার দাবী উত্থাপন করেন।
সোমবার দুপুরে তিতাসের বোন তনিষা ঘোষ অভিযোগ করে বলেন, ‘গত ২৪ জুলাই তিতাস একটি সড়ক দূর্ঘটনায় আহত হলে প্রথমে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য পরেরদিন ২৫জুলাই ঢাকায় নেয়ার পথে রাত ৮টায় কাঠালবাড়ি ১নম্বর ফেরীঘাটে পৌঁছালে তারা জানতে পারেন নৌ-পরিবহন মন্ত্রনালয়ের একজন ভিআইপির আত্মীয় বিয়ের অনুষ্ঠানে যাবেন তাই ফেরী চলাচল বন্ধ রয়েছে। তার ভাইয়ের আশংকাজনক অবস্থার কথা জানিয়ে তিনি সেখানকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীসহ বিভিন্ন মহলে ধরণা দিলেও কোন কাজ হয়নি। রাত ১১টার দিকে ওই ভিআইপির আত্মীয়রা এলে সাড়ে ৩ঘন্টাপর ফেরী চলাচল শুরু হয়। কিন্তু ফেরী পার হতেই তার ভাই বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। তিতাসের বোন তানিষার দাবি যারা বিয়ের অনুষ্ঠানে যেতে ফেরী আটকে রেখে তার ভাইয়ের চিকিৎসায় ব্যাঘাত সৃষ্টি করেছেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী করেন।’