স্টাফ রিপোর্টার
নড়াইলের কালিয়া উপজেলার পুরুলিয়া গ্রামের দু’টি পাড়ায় ১শ ২০টি পরিবারের পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ দিতে প্রত্যেক পরিবারের কাছ থেকে ৫ হাজার টাকার বেশী নেওয়া হয়েছেে। স্থানীয় কয়েকজন পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের দালাল হুমকি দিচ্ছে, এ অর্থ দিতে না দিলে কারো ঘরে আলো জ্বলবে না। এমনিক যাদের বৈদ্যুতিক খুটি ও তার সংযোগ দেওয়া হয়েছে তাদের বাড়ির সামনের বৈদ্যুতিক খুটি ও তার খুলে নেওয়া হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কালিয়ার পুরুলিয়া ইউনিয়নের মধ্য পুরুলিয়া ও দাড়িপর পাড়ায় যশোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২, নড়াইল থেকে ১শ ২০জন গ্রাহকের মধ্যে নতুন বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য তাদের বাড়ির সামনে দিয়ে সম্প্রতি বৈদ্যুতিক খুটি এবং তার বসানো হয়েছে। আবাসিক সংযোগের জন্য একজন গ্রাহক অফিসে জামানত বাবদ ৪শ টাকা এবং সমিতির সদস্য বাবদ ৫০ টাকা দিলে সংশ্লিষ্ট অফিস থেকে বৈদ্যুতিক খুটি, সার্ভিস তার (১শ৩০ ফুটের মধ্যে) এবং মিটার গ্রাহকের বাড়ির আঙ্গিনায় বসিয়ে দেওয়া হবে। এরপর বাকি সমস্ত খরচ গ্রাহকের।
অভিযোগে জানা গেছে, পুরুলিয়া ইউনিয়নের চন্দ্রপুর গ্রামের রকিবুল ইসলাম (৪৫) ও চাচুড়ি এলাকার মিলনসহ কয়েক জন বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার কথা বলে পুরুলিয়া মধ্যপাড়ার পলি বেগম, ফিরোজা বেগম, ইবাদুল শেখ, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক রুহুল কুদ্দুস,চান মোল্যা, খাজা মিয়া, লিটন শেখ, গফুর শেখ, জান্নু মোল্যা, সালামত শেখ, আকছির বাকা মিনা, দাড়িপর পাড়ার বাদল মোল্যা, সোহেল মোল্যা, সুরত গাজী,রবিউল ইসলাম, সাবু শেখসহ ১শ ২০টি পরিবারের প্রত্যেকের কাছ থেকে সাড়ে ৫ থেকে ৫ হাজার টাকা করে নিচ্ছে।
পুরুলিয়া মধ্যপাড়া গ্রামের শফিক মোল্যার স্ত্রী পলি বেগম অভিযোগে জানান, স্থানীয় চন্দ্রপুর গ্রামের রাকিবুল মোল্যা বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য তার কাছে ৫ হাজার টাকা দাবি করেছে। দাবিকৃত এ অর্থ দেয়নি বলে রকিবুল হুমকি দিয়েছে, তোমার বাড়ির পাশের বৈদ্যুতিক খুটি ও তার খুলে নেওয়া হবে, টাকা না দিলে ঘরে আলো জ্বলবে না। তিনি টাকা চাওয়ার এ বিষয়টি পল্লী বিদ্যুতের এক অফিসারকে (নাম বলতে পারেননি) ওই গ্রাম পরিদর্শনের সময় জানিয়েছেন।
পুরুলিয়া গ্রামের ভ্যান চালক ফেরদৌস গাজী বলেন,আমার বাড়ি নির্দিষ্ট আয়ত্বের বাইরে দেখিয়ে রকিবুল বৈদ্যুতিক খুটিসহ সংযোগের জন্য ১২ হাজার টাকা অথবা খুটি বাদে ৬ হাজার টাকা দাবি করেছে। এ জন্য ১ হাজার টাকাও দিলেও আমার বাড়িতে এখনও খুটি ও তার পৌছায়নি। সোমবার (২৬ আগষ্ট) সকালে রকিবুলের কাছে গেলে সে বলেছে ৬ হাজার টাকা ছাড়া বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হবে না।
একই গ্রামের বাবু কাজীর স্ত্রী ফিরোজা বেগম বলেন, সে নিজ হাতে দু’টি মিটারের জন্য রাকিবুলকে প্রাথমিকভাবে ২ হাজার টাকা দিয়েছে। রকিবুল আরও ৬ হাজার টাকা চেয়েছে। একই গ্রামের ইবাদুল শেখ বলেন, একটি মিটারের জন্য ৩ হাজার টাকা দিলেও এখনও তার বাড়িতে তার সংযোগ দেওয়া হয়নি।
দাড়িপর গ্রামের বাদল মোল্যা জানান, তিনি সুদে ২৫শ টাকা এনে চাচুড়ি বাজারের মিলন নামে এক জন ইলেকট্রনিক্স ব্যবসায়ীকে দিলেও তার ঘরে বিদ্যুৎ পৌছায়নি। এখন স্থানীয় শুকুর মিয়া ও তুহিন বাকি টাকার জন্য চাপ দিচ্ছে। যশোর পল্লি বিদ্যুৎ সমিতি-২, কালিয়া উপজেলার চাঁচুড়ি বাজার শাখার লাইন টেকনিশিয়ান মেঘনাথ বিশ্বাস বলেন, আমি এখানে নতুন এসেছি। এ ব্যাপারে ভালো কিছু বলতে পারব না।
রকিবুল ইসলাম নিজেকে পল্লী বিদ্যুত সমিতির ইলেকট্রিশিয়ান দাবি করে বলেছে, বাড়িতে ওয়ারিং করার জন্য ১৫ জনের এক হাজার টাকা করে নিচ্ছি। এর বাইরে তিনি টাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন। তবে দাড়িপর পাড়ায় অন্য লোক কিছু টাকা নিতে পারে বলে জানান। যশোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ নড়াইলের ডিজিএম দিলীপ কুমার বাইন বলেন, এ ব্যাপারে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই। যশোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ নড়াইলের কালিয়া উপজেলার সাব জোনাল অফিস ভালো বলতে পারবে। তিনি অনিয়মের বিষয়টি জোনাল অফিসের এজিএম-এর সাথে কথা বলবেন বলে জানান।
যশোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ নড়াইলের কালিয়া উপজেলার সাব জোনাল অফিসের এজিএম রুবেল হোসেন বলেন, আবাসিক গ্রাহকের বাড়িতে বৈদ্যুতিক খুটি ও তার পৌছে দিতে সরকারিভাবে রশিদের মাধ্যমে জমা দিতে হবে ৪শ৫০ টাকা। এর বাইরে অফিসের আর কোনো খরচ নেই। বাকিটা ব্যক্তিগত। আমরা এসব বিষয়ে ধারনা দিতে বিভিন্ন সময় মিটিং ও উঠান বৈঠক করা হয়েছে। তারপরও কিভাবে মানুষ কিভাবে দালালদের ক্ষপরে পড়ে বুঝি না। এলাকার কেউ এ বিষয় নিয়ে কোনো অভিযোগও করেনি। আপনারা এসব দালালদের পুলিশে ধরিয়ে দিন। তিনি আরও বলেন, এ বছরের মধ্যেই কালিয়া উপজেলার সমস্ত গ্রামে শতভাগ বিদ্যুতায়নের লক্ষমাত্রা রয়েছে। সেখানে এ ধরনের কাজ খুবই দুঃখজনক। তিনি বিষয়টি দেখছেন বলে জানান।