নড়াইল জেলা সমিতির আয়োজনে মরহুম আলহাজ্ব মোঃ আবু বকর শেখ’র স্মরণসভা অনুষ্ঠিত

0
35

স্টাফ রিপোর্টার

গত ০২ নভেম্বর ২০১৯, শনিবার, বিকাল-৫ ঘটিকায় নড়াইল জেলা সমিতির আয়োজনে এস এম এ আহাদ অডিটরিয়াম, নীলক্ষেত, ঢাকা মরহুম আলহাজ লায়ন মোঃ আবু বকর শেখ এর স্মরণ সভা ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। মরহুম আলহাজ্ব লায়ন মোঃ আবু বকর সেখ এর স্মরণ সভায় সভাপতিত্ব করেন ইঞ্জিঃ শৈলেন্দ্র নাথ সাহা, উপস্থিত ছিলেন সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ হাসান ইকবাল, সাবেক সভাপতি, শহিদুল ইসলাম, কাউন্সিলর ১৯ নং ওয়ার্ড, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন, মুন্সী কামরুজ্জামান কাজল, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রমনা মডেল থানা, কাজী মাঈনুল ইসলামসহ আরো ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন বৃহত্তর যশোর জেলা ও নড়াইল জেলা সমিতির কার্যনির্বাহী পরিশোধের সম্মানিত সদস্য বৃন্দ ও অন্যান্য সুধিজন। উপস্থিত নড়াইলের বিশিষ্ট গুণীজন।

এসময় বৃহত্তর যশোর সমিতি, মাগুরা জেলা সমিতি, ঝিনাইদহ জেলা সমিতি, যশোর জেলা সমিতি, নড়াইল জেলা সমিতি ও লোহাগাড়া উপজেলা সমিতির নেতৃবৃন্দ বক্তৃতা প্রদান করেন। সার্বিক আয়োজনে ছিল নড়াইল জেলা সমিতি ও সহযোগিতায় বৃহত্তর যশোর সমিতি। মরহুমের ছেলে ও মেয়ে এবং নাতি নাতনিরা উপস্থিত ছিলেন। মরহুমের পরিবারের নিকট শ্রদ্ধাঞ্জলি হিসাবে হিসাবে একটি ক্রেস্ট ও মানপত্র হস্তান্তর করা হয়।

নড়াইল জেলার সমিতিরি আজীবন সদস্য (নং ১০) মরহুম আলহাজ্ব লায়ন মোঃ আবু বকর শেখ নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলার রামচন্দ্রপুর গ্রামে ১৯৪২ সালের ০৫ নভেম্বর এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। লাহুড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় হতে ম্যাট্রিক পাশ করেন। ঢাকা কলেজ হতে ইন্টারমিডিয়েট এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন জগন্নাথ কলেজ হতে ১৯৬৫ সালে তিনি বি কম পাশ করেন। পরবর্তীতে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে এম কম পাশ করেন। তিনি চাকুরী জীবনে রাজউক এর উপ পরিচালক হিসাবে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি ঢাকায় অবস্থানকালে তদানিন্তন পাকিস্তান আমল হতে বৃহত্তর যশোর সমিতির সাথে সম্পৃক্ত হন।

মরহুম মোঃ আবু বকর শেখ ১৯৮৪ সাল হতে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ১৪ বছর যাবৎ বৃহত্তর যশোর সমিতির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে পালন করেন। উক্ত সময়ে ৩ জন সভাপতি যথাক্রমে মরহুম এ এস এইচ কে সাদেক (যশোর) এর সাথে দুবার, মরহুম ডা. এম এস আকবর (মাগুরা) এর সাথে এবং জনাব মোঃ মুনির-উজ-জামান (ঝিনাইদাহ) এর সাথে একবার করে সাধারণ সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।

একজন নিবেদিত প্রাণ ও সমাজ সেবক মরহুম মোঃ আবু বকর শেখ ঢাকাস্থ নড়াইল জেলা সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসাবে ০৭ বছর (১৯৮১-১৯৮৮ সাল পর্যন্ত) দায়িত্ব পালন করেছেন। তখন নড়াইল জেলা সমিতির সভাপতি ছিলেন মরহুম এ্যাড. কাজী আব্দুল ওয়াহাব। তখনকার প্রেক্ষাপটে দেশের রাস্তা ঘাট খুব একটা উন্নত ছিল না। দেশের/মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা ও তেমন ভাল ছিল না। তবুও ১৯৮১-৮৮ সাল পর্যন্ত নড়াইল সমিতির সকল নির্বাহী সদস্যের নেতৃত্বে সমাজের উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে।

তখনকার বৃহত্তর যশোর জেলা ও নড়াইল জেলা সমিতির সাধারণ সম্পাদক মরহুম মোঃ আবু বকর শেখ এর নেতৃত্বে অনেক যুগান্তকারী পদক্ষেপ গৃহিত হয়। এই স্মরণ সভায় কয়েকটি উদাহরণ নিম্নরূপঃ ১৯৮২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি হতে ৬ মার্চ পর্যন্ত নড়াইল শহরে একটি চক্ষু শিবিরের আয়োজন করা হয়। ১৯৮২ সালের ১৪ মার্চ হতে ২৩ মার্চ পর্যন্ত লোহাগড়া থানা শহরে একটি চক্ষু শি’বিরের আয়োজন করা হয়। ১৯৮৩ সালে ২২ ফেব্রুয়ারি হতে ০১ মার্চ পর্যন্ত নড়াইল সমিতির পক্ষ হতে কালিয়া থানায় একটি চক্ষু শি’বিরের আয়োজন করা হয়। ১৯৮৩ সালের অক্টোবর মাসে কালিয়া ও লোহাগড়া উপজেলায় নদী ভা’ঙন এলাকার প্রায় ৩ লক্ষ টাকার ত্রাণ সামগ্রী-শাড়ী, লুংগী বিতরণ করা হয়। ১৯৮৮ সালে সেপ্টেম্বর মাসে নড়াইল জেলায় ভ’য়াবহ বন্যার কবলে পড়ে। নড়াইল জেলা সমিতির পক্ষ হতে ২৪ সেপ্টেম্বর নড়াইল, লোহাগড়া ও কালিয়া উপজেলার বণ্যা পি’ড়িত মানুষের মাঝে শাড়ী, লুংগী, ঔষধ, শুকনা খাবার ও নগদ টাকাসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়।

১৯৮২ সালের ১৮ জুলাই তারিখে তদানিন্তন সামরিক সরকার নড়াইল মহকুমাকে মাগুরা মহকুমার (মাগুরা জেলার) সাথে অন্তভূক্তির সিদ্ধান্ত গ্রহন করে। ঐ সময় নড়াইল জেলা সমিতি উহার তীব্র নি’ন্দা ও প্রতিবা’দ করে। তদানিন্তন সভাপতি মরহুম কাজী আব্দুল ওয়াহাব ও সাধারণ সম্পাদক মরহুম মোঃ আবু বকর শেখ সহ অন্যান্য কর্মকর্তাগণ সামরিক সরকারের প্রতিনিধি ডেপুটি চীফ মার্শাল ল এ্যাডমিনিষ্ট্রেটর ও সাবেক মাননীয় মন্ত্রী রিয়ার এডমিরাল এম এ খানের সাথে দীর্ঘ আলোচনা শেষে মাননীয় মন্ত্রী নড়াইল মহাকুমাকে জেলা ঘোষণার প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন। ফলে ১ মার্চ ১৯৮৪ সালে নড়াইল মহকুমাকে জেলা হিসাবে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়।

বেড়িবাধ নির্মাণ প্রসঙ্গে: লোহাগড়া হতে লাহুড়িয়া পর্যন্ত বন্যা প্রতিরো’ধ বাধ নির্মাণে মরহুম আলহাজ আবু বকর শেখ এর অনেক অবদান রয়েছে। ১৯৯৪ সালে অধ্যাপক ডা. এম এস আকবর সাহেব এর নেতৃত্বে বৃহত্তর যশোর জেলা সমিতির নির্বাহী পরিষদের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। তখনই আবু বকর শেখ এবং অন্যান্য কর্মকর্তার সাহায্যে বর্তমান নীলক্ষেত বৃহত্তর যশোর সমিতির জমির সুরক্ষিত বাউন্ডারী দেওয়াল নির্মাণ কাজ শেষ হয়। ২০০০ সালে বৃহত্তর যশোর ভবনের নকশা অনুমোদন হয় এবং ২০০১ সালে কাজ শুরু হয়।

সকলের সহযোগিতায় ২০০৪ সালের মধ্যে বর্তমান সমিতির ভূমি উন্নয়নসহ প্রথম তলার কাজ সম্পন্ন হয়। বৃহত্তর যশোর ভবনের দ্বিতীয় তলার অডিটরিয়ামে নির্মাণের জন্য দাতা অনুসন্ধানের এক পর্যায়ে নড়াইল-লোহাগড়ার কৃতি সন্তান বৃহত্তর যশোরের প্রবীণ শিল্পপতি ও ব্যবসায়ী জনাব এস এম এ আহাদ সাহেব ২০ (বিশ) লক্ষ টাকা অনুদান প্রদানে সম্মত হন। উক্ত উদ্দ্যোগে দাতার জামাতা জনাব ডা. সৈয়দ আফজালুল করিম (যশোর) বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন। তাছাড়াও ডা. আব্দুর রশিদ, মোঃ জামালউদ্দিন আহমেদ, লুৎফুর রহমান এবং মরহুম মো. আবু বকর শেখ এর ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদ শ্রদ্ধার নিদর্শন স্বরূপ সম্মানিত দাতা জনাব এস এম এ আহাদ সাহেব এর নামে দ্বিতীয় তলার নির্মিত অডিটরিয়ামটির নামকরণ করা হয়।

পরবর্তীতে ভবনের তৃতীয় তলায় যশোরের ৪টি জেলা সমিতিকে অফিস স্পেস এর জন্য বরাদ্দের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ফলে ৪টি জেলা সমিতি উক্ত নির্মাণ কাজে সহযোগিতা করে বৃহত্তর যশোর সমিতিকে। উক্ত তৃতীয় তলা নির্মাণে আগ্রহী ভূমিকা পালন করেন আশরাফুল হাবিব ফিরোজ (ঝিনাইদহ), কাজী রফিকুল ইসলাম (মাগুরা), গাজী সাইফুর রহমান (নড়াইল), কাজী রেজাউল ইসলাম (মাগুরা) প্রকৌশলী কামরুজ্জামান এবং নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলার নিবেদিত সমাজ সেবক মরহুম আলহাজ লায়ন মো. আবু বকর শেখ।

এক আনন্দঘন পরিবেশে ০৯ জুন ২০১২ সালে বৃহত্তর যশোর ভবনের উদ্বোধন করেন সমিতির সাবেক সভাপতি ও বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট এর চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. এস এম আকবর, এম পি। ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত যশোর সমিতি যাত্রা শুরু করে স্থায়ী অফিসে ০৯ জুন ২০১২ সালে ৪টি জেলা সমিতির অফিস এবং এস এম এ আহাদ অডিটরিয়াম এর উদ্বোধনের মাধ্যমে। সেজন্য ৪ জেলা সমিতি ও বৃহত্তর যশোর সমিতির সকল কর্মকর্তাবৃন্দকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা বিশেষ উল্লেখ্য বৃহত্তর যশোর ভবনের উদ্বোধনের সময় মরহুম আলহাজ লায়ন মো. আবু বকর শেখ এর ভূমিকা অত্যন্ত প্রশংসানীয়।

লায়ন ক্লাবের সদস্য হিসাবে মরহুমের অবদান
বাংলাদেশ লায়ন চক্ষু হাসপাতালের উন্নয়নের ব্যাপারে মরহুমের অনেক অবদান রয়েছে। ফলে গরীব মানুষেরা বিভিন্ন সময় চোখের জটিল রোগের চিকিৎসা পেয়েছে। তিনি লায়ন ডিস্ট্রিক ৩১৫বি২ এর কেবিনেট ট্রেজারার ছিলেন। সর্বশেষ উক্ত লায়ন ডিস্ট্রিক এর আঞ্চলিক চেয়ারপার্সন হিসাবে কর্মরত ছিলেন। তিনি লায়ন এর এমজেএফ এর সদস্য হিসাবে নিরীহ গরীব মানুষের জন্য অত্যন্ত প্রশসংসনীয় কর্মকান্ড পরিচালনা করেন।

অদম্য এক সামাজিক ও মানবিক গুনাবলি সম্পন্ন মানুষ তিনি সর্বদাই সমাজের কথা, দেশের কথা বিশেষ করে নিজ এলাকা মধুমতি নদী ভাঙনে বিষয়ে তার একটা বিরাট উদবেগ ছিল। বিশেষ করে শালনগর ইউনিয়নকে নিয়ে। অতি সম্প্রতি মরহুমের ইচ্ছানুসারে বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মধুমতি-নবগংগা উপ-প্রকল্প ৩০৩ কোটি টাকা সভায় অনুমোদন প্রদান করেছেন। তখন তিনি এ্যাপেলো হাসপাতাল হতে বাসায় চলে এসেছেন প্রায় জীবনের শেষ প্রান্তে। মৃত্যুর ৪/৫ দিন পূর্বে অর্থাৎ ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ তারিখে উত্তরায় বাসায় গমন করে শালনগর ইউনিয়নের নদী ভাংগনের উন্নয়নে সরকারি অনুমোদনের কথা অবহিত করায় তাঁর অ’সুস্থ শরীরের একটা আনন্দের ভাব পরিলক্ষিত হয় এবং দুচোখে আনন্দের পানি প্রবাহিত হয়।

মরহুম আবু বকর শেখ প্রায় ৭৭ বছর বয়সে আমাদের ছেড়ে না ফেরার দেশে গিয়েছেন ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯ । মৃত্যুকালে স্ত্রী, ৩ পুত্র ও ২ কন্যা সন্তান এবং বহু শুভাকাংখী রেখে গিয়েছেন। ছেলে-মেয়েরা সকলেই সুশিক্ষিত ও প্রতিষ্ঠিত এবং সকলেই ঢাকাতে বসবাস করেন। ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯ তারিখে মরহুমের প্রথম নামাজের জানা’জা উত্তরার ৫ নং সেক্টেরে জামে মসজিদে রাত ১০টা ৩০ মিনিটে অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত নামাযের জানা’জায় ঢাকাস্থ নড়াইল জেলা সমিতির পক্ষে সহ-সভাপতি জনাব সৈয়দ আরোজ আলী এবং সাধারণ সম্পাদক লেঃ কর্ণেল সৈয়দ হাসান ইকবাল (অব.) মরহুমের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বক্তব্য প্রদান করেন। ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ তারিখে মরহুমের নিজ গ্রামের বাড়িতে দ্বিতীয় নামাযের জানাযা অনুষ্ঠিত হয় এবং মরহুমের পারিবারিক কব’রস্থানে দা’ফন কার্য সম্পন্ন করা হয়।