স্টাফ রিপোর্টার
নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলায় যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগে স্বামী ও পরিবারের সদস্যদের নামে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলা বাদী ভুক্তভোগী অসুস্থ মাসুমা খানমের দিন চলছে খুবাই কষ্টের মধ্য দিয়ে, সে দোষীদের দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তি এবং তার ও তার সন্তানদের উপযুক্ত ভরন পোষনের দাবি জানিয়েছেন।
মামলার বিবরণে জানা গেছে , নড়াইল সদর উপজেলার আউড়িয়া ইউনিয়নের বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের মৃত সিরাজুল হকের কন্যা মোসাঃ মাসুমা খানম (৩৫) এর সাথে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ১৬ তারিখে লোহাগড়ার লক্ষীপাশার মৃত আঃ শুকুর শেখের ছেলে শেখ মুনসুর আলীর (৪২) বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই মাসুমার স্বামী ও তার পরিবারের সদস্যরা যৌতুকের জন্য তার ভাইদের উপর চাপ দিতে থাকে। এক পর্যায় জোর করে ৪ ভরি স্বর্ণালংকার ও বিভিন্ন প্রকারের আসবাবপত্র আদায় করে। এভাবে ঠিকঠাক মত সংসার চলতে থাকা কালীন মাসুমার একটি কন্যা জুলেখা ইসলাম (৬) ও একটি ছেলে জাবের শেখের (৪) জন্ম হয়। এরই মধ্যে মাসুমা জানতে পারে তার স্বামী মুনসুরের স্বভাব-চরিত্র ভাল না, অন্য মহিলাদের প্রতি আসক্তি আছে। মুনসুরকে এ সব ছেড়ে সংসার মুখি হওয়ার জন্য বলায়, মুনসুর ও তার পরিবারের লোকেরা মাসুমার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে ভাইদের কাছ থেকে মুনসুরের ব্যবসার জন্য পাঁচ লক্ষ টাকা যৌতুক আনার জন্য শারীরিক ও মানষিক নির্যাতন চালায়, এক পর্যায় গত ২৩ শে নভেম্বর ২০১৯ তারিখে আবার টাকা আনার কথা বলে, সে সময় মাসুমা ভাইদের কাছ থেকে কোন টাকা আনতে পারবে না বলায় মুনসুরের বড় বোন মোসাঃ আকলিমা বেগম (৫৫ ) মাসুমাকে মারার নির্দেশ দেয়, সে সময় মুনসুর বাশেঁর লাঠি দিয়া মাসুমাকে আঘাত করে।
বিবরণে বলা হয়, এরপরই মুনসুরের আরেক বোন মোসাঃ ফাতেমা বেগম (৫০) বাশেঁর লাঠি দিয়ে আঘাত করে মাসুমাকে মাটিতে ফেলে দেয় ,এরপর পরিবারের অন্য সদস্য মুনসুরের ভাই শেখ ঝুন্নন আলী (৩৫), ভাই বৌ মোসাঃ কেয়া বেগম (৩০) ও মোঃ হোসাইন (২৮) মিলে মাসুমাকে লাথি,গুতা মেরে গুরুতর জখম করে।মাসুমার চিৎকারে পার্শ্ববর্তী কয়েকজন ঘটনাস্থলে হাজির হলে, মুনসুর ও তার পরিবারের লোকেরা মাসুমাকে ঘরের মধ্যে আটকিয়ে রাখে। মাসুমা গোপনে মোবাইলের মাধ্যমে তার ভাইদের খবর দিলে,তার মেঝ ভাই মোঃ জাহিদ সরদার দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে মুনসুরের বাড়ী থেকে স্থানীয়দের সহায়তায় আটক অবস্থায় মাসুমাকে উদ্ধার করে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে নড়াইল সদর হাসপাতালে ভর্তি করে এবং তার সন্তানদের জাহিদ তাদের বাড়িতে নিয়ে যায়। হাসপাতালে দুইদিন থাকার পর সুচিকিৎসা করার জন্য মাসুমাকে তার ভায়েরা বাড়ীতে নিয়ে য়ায়।
মামলার বাদী মাসুমা ও তার ভাই মুসফিকুর রহমান জানান,এঘটনার পর লোহাগড়া থানায় মামলা করতে গেলে ,মামলা না করে আলোচনার মাধ্যমে বিরোধ মেটানোর পরামর্শ দেয়া হয় , পরবর্তীতে লোহাগড়ার গন্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে লোহাগড়ায় থানায় এক বৈঠকের মাধ্যমে তাকে ও তার সন্তানদের তার স্বামী অনিচ্ছা সত্যেও বাড়ী ফিরিয়ে নেয়। তার পরদিন তাকে চিকিৎসা না করিয়ে বাড়ীতে একা রেখে বাড়ির সবাই গা ঢাকা দেয়। এখন তাদের খেয়ে না খেয়ে দিন যাচ্ছে। এ ঘটনার পর মাসুমা তার স্বামী মুনসুর ও তার পরিবারের সদস্যসহ ৬ জনের নামে লোহাগড়া থানায় শিশু ও নারী নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের করে (মামলা নং-০৯, তাং-১৩/১২/২০১৯)।
মাসুমা ও তার ভাইয়েরা আরো জানান, বিয়ের পর মুনসুরের বাড়ী গিয়ে মাসুমা জানতে পারে তার স্বামীর আগে একটা বিয়ে ছিলো , তার স্বামীর আগের বউ ও দেবরের বউ তার বড় ননদ মোসা: আকলিমা বেগমের নির্যাতনে একই দিনে একই সাথে দুই বউ পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। মাসুমা আরো জানান, তাকে ফেলে বাড়ীর সবাই চলে যাওয়ায় এখন সন্তানদের নিয়ে ঠিক মত খেতেও পারছি না, টাকা পয়সা কিছুই নেই, ভাইয়েরা মাঝে মধ্যে কিছু টাকা দিচ্ছে তাই দিয়ে কোন মতে খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছি। তারা অবিলম্বে দোষি ব্যাক্তিদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তির দাবি জানান এবং তার ও তার সন্তানদের উপযুক্ত ভরন পোষনের জন্য তার স্বামী ও পরিবারের প্রতি ব্যাবস্থা গ্রহনের দাবি জানান। এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস,আই মোঃ আজগার জানান, আসামীরা কেউ আটক হয়নি, খুব শীঘ্রই মামলার চার্জশীট আদালতে জমা দেয়া হবে।