স্টাফ রিপোর্টার
করোনাভাইরাসের প্রভাবে বাহন না পেয়ে কাজ হারানো বসির মোল্যা (৩৫) তার বুদ্ধি প্র*তিব*ন্ধী বয়স্ক বাবাকে সাথে নিয়ে দীর্ঘ ১৬ কিঃমিঃ পথ পায়ে হেটে খাদ্য বিভাগ ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে আসেন তার মায়ের নামে চালু থাকা কার্ডে খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির আওতায় ১০টাকার চাল না পাবার কারণ জানতে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও চাল ডিলার তাকে জানিয়েছে তার মায়ের নামের কার্ড ইউএনও স্যার বাদ দিয়েছে। আর এ দু’অফিস থেকে জানানো হয়েছে কারো নাম বাদ দেওয়া তাদের বিষয় নয়।
সদরের বিছালী ইউনিয়নের বিছালী গ্রামের বুদ্ধি প্র*তিব*ন্ধী মোঃ আনোয়ার মোল্যার পুত্র বসির একথাগুলোর পাশাপাশি আরও বলেন, এবার চাল আনতে গিয়ে শুনি আমাদের কার্ডের নাম কেটে দেওয়া হয়েছে। যাদের নামে কার্ড দেওয়া হয়েছে তাদের প্রায় সবার পাকা ভবন, কারো দোতালা ভবন, অনেকের মাছের ঘের ও গরু রয়েছে। তারা এসব চাল নিয়ে গরুকে খাওয়াচ্ছে। এসব কথা আপনারা প্রমাণ করে দেখেন। আমরা এক সপ্তাহ রুটি খেয়ে আছি। নওয়াপাড়া ঘাটে মালামাল নামানোর কাজ করতাম। এখন কোনো কাজ নেই। কোনো সাহায্যও পাইনি। নিজের চাষের কোনো জমি নেই। এখন খাব কি ?
একই ইউনিয়নের মধুরগাতি গ্রামের প্রয়াত জারি শিল্পী ইসমাইল বয়াতির স্ত্রী ভূমিহীন পিঞ্জিরা বেগম গত তিন বছর কার্ডের মাধ্যমে চাল উত্তোলন করলেও এবার তার নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় একাধিক ইউপি মেম্বর অভিযোগ করে বলেন, নতুন করে কার্ডধারীদের তালিকা তৈরীর সময় চেয়ারম্যান ও ইউপি সচিব তাদের কাছ থেকে পরামর্শ নেয়নি।
জানা গেছে, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন খাদ্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের আয়োজনে খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির আওতায় ১০টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি শুরু হয়েছে। একজন কার্ডধারী প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল তুলতে পারবেন।
কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, বিছালী ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ আনিচুর রহমান প্রভাব খাটিয়ে তার পছন্দের লোক নিয়ে এ তালিকা তৈরি করেছেন। এছাড়া চেয়ারম্যান ইউনিয়নের উন্নয়নমূলক যেকোনো কাজে মেম্বরদের বাদ দিয়ে নিজের ইচ্ছেমতো ব্যক্তিদের নিয়ে করেন। গত ২০১৮ সালে ইউনিয়নের মেম্বররা জেলা প্রশাসকের কাছে এসব বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেন।
বিছালী ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড মেম্বর বিছালী গ্রামের কালাম মোল্যা বলেন, আমরা শুনেছি নতুন কার্ড হয়েছে। কিন্তু চেয়ারম্যান আমাদের কাছ থেকে দুস্থদের কোনো নাম চায়নি এবং পরামর্শও করেনি। হতদরিদ্র কয়েকজন আমাকে জানিয়েছে তাদের কার্ড বাদ হয়ে গেছে। চেয়ারম্যানের এসব অসহযোগিতা এবং অনিয়মনের বিষয়টি গত দেড় বছর পূর্বে পুরুষ ৯ মেম্বর মিলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং জেলা প্রশাসক মহোদয়কে লিখিতভাবে জানিয়েছিলাম।
৬নং ওয়ার্ড মেম্বর বড়াল-আটঘরা গ্রামের আবু হানিফ বিশ্বাস জানান, আমি এক নম্বর প্যানেল চেয়ারম্যান হলেও আমাকে কোনো মূল্যায়ন করে না বা ডাকেও না। শুনেছি কার্ড রদবদল হয়েছে। ৪-৫জন বলেছে তাদের নাম কার্ড থেকে বাদ গিয়েছে। সমস্ত মেম্বররা তাকে ভয় পায়। চেয়ারম্যান থাকে ঢাকায়। দু’তিন মেম্বরকে নিয়ে তিনি সবকিছু করেন।
বিছালী ইউপি ৫নং ওয়ার্ড মেম্বর মধুরগাতি গ্রামের মঞ্জুর হোসেন বলেন, নতুন কার্ডধারীদের তালিকা করার ব্যাপারে চেয়ারম্যান আমিসহ অধিকাংশ মেম্বরের সাথে কোনো পরামর্শ করেননি। পুরোনো তালিকা থেকে কমপক্ষে প্রকৃত ১৫জনের নাম বাদ গেছে।
বিছালী ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ আনিচুল ইসলাম বিভিন্ন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, মেম্বরদের কাছ থেকে তালিকা নিয়ে এ কার্ড পূনর্বিন্যাস করা হয়েছে। যারা মারা গিয়েছে এবং যারা এলাকায় নেই তাদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। প্রকৃত দুস্থরা কার্ড পেয়েছে বলে দাবি করেন।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) মনিরুল হাসান বলেন, ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদ সচিব, স্থানীয় মেম্বর এবং গণ্যমান্য ব্যক্তির সমন্বয়ে একটি কমিটি এ কার্ডের তালিকা তৈরি করে। সম্প্রতি গত ১ মাস পূর্বে এ তালিকা পূনর্বিন্যাস করা হয়েছে। কেউ যদি বাদ যায় তাহলে সরকারের জিআরসহ অন্যান্য প্রকল্প থেকে তাদের সহায়তা করা হবে। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা সেলিম বলেন, বিষয়টি আমি দেখছি।