নড়াইলে মোবাইল কোর্টের খড়গ এখন গণমাধ্যমকর্মীদের দিকে!

4
75
নড়াইলে মোবাইল কোর্টের খড়গ এখন গণমাধ্যমকর্মীদের দিকে!
নড়াইলে মোবাইল কোর্টের খড়গ এখন গণমাধ্যমকর্মীদের দিকে!

স্টাফ রিপোর্টার

গত ১০ দিনে নড়াইলে মোবাইল কোর্টের টা*র্গেট হয়েছে গণমাধ্যমকর্মীরা! অভিযোগ উঠেছে প্রেসক্লাবের সভাপতি, টেলিভিশন সাংবাদিক, পত্রিকার সম্পাদক, এমনকি রিপোটার্স ইউনিটিও বাদ যাচ্ছে না। জরিমানাও গুনতে হয়েছে কয়েকজন সংবাদকর্মীকে। করোনাকালীন মোবাইল কোর্ট পরিচালনার ছবি তুলতে বাধা দেয়া নিয়ে যে সব ভিডিও সাংবাদিকদের কাছ থেকে নিয়ে মু*ছে ফেলতে বাধ্য করা হয়েছে। আর এই অবস্থা তৈরী হয়েছে পত্রিকায় মোবাইল কোর্টের হাতে মা*র খাওয়া ব্যবসায়ীদের প্রতিবেদন করার পর থেকে। এ নিয়ে জেলায় কর্মরত সাংবাদিকদের মধ্যে চর*ম ক্ষো*ভ বিরাজ করছে।

গত ১৩ মে সন্ধ্যায় একুশে টিভির জেলা প্রতিনিধি ফরহাদ হোসেন এবং বণিক বার্তার জেলা প্রতিনিধি ইমরান হোসেন রূপগঞ্জ এলাকায় বাজারের খবর সংগ্রহে যান। মুচিপোল এলাকায় মোবাইল কোর্টের দ্বায়িত্ব পালনকারী ম্যাজিষ্ট্রেট হেলমেট নেই এই অপ*রাধে ওই দুইজনকে ৫শ’টাকা জরিমানা করেন।

সাংবাদিক ইমরানের বক্তব্য ইফতারির ১৫ মিনিট আগে আধাঘন্টা দাড় করিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের কারণে সময়মতো তার ইফতারকরা সম্ভব হয়নি, ভ্রাম্যমাণ আদালতের নামে এটি একটি অ*মানবিক ব্যাপার।

১১ মে সদর হাসপাতাল এলাকায় মোবাইল কোর্টের ছবি তুলে ম্যাজিষ্ট্রেট এর কাছে হে*নস্থা হন বিটিভির ক্যামেরায় কাজ করা শুভ সরকার। কেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের ছবি তোলা হলো, এই অভিযোগে তার ক্যামেরায় থাকা ছবি পুলিশ দিয়ে মুছে দেন ওই কর্মকর্তা। শুভ সরকারের অভিযোগ, ভ্রাম্যমাণ আদালত মুখ চিনে মোটর সাইকেল আট*কাচ্ছিলেন, পরিচিত হলে তাদের ছে*ড়ে দিচ্ছিলেন সেই ছবি ধারণ করায় ধম*কে আমার ক্যামেরার ছবি জো*র করে মু*ছে দিয়েছেন। একই রকমভাবে ভ্রাম্যমাণ আদালতের ছবি তোলায় দৈনিক অনির্বাণ এর জেলা প্রতিনিধি মিলন বিশ্বাসকে পুলিশের মাধ্যমে হেন*স্থা করেছে এবং ছবি মু*ছে দিতে বা*ধ্য করা হয়েছে।

১০ মে দুপুরে রূপগঞ্জ চৌরাস্তায় ওয়ালটন মোড়ে ভ্রাম্যমান আদালত স্থানীয় দৈনিক বিডি খবর এর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক এ্যাডঃ রাজীব এর মোটর সাইকেল নিয়ে তাকে হ্যা*নাস্তা করা হয়। এ ব্যাপারে ম্যাজিষ্ট্রেটের সামনে পুলিশের সাথে এ বিষয়ে বাক বিত*ন্ডা হয় জেলা রিপোটার্স ইউনিটির সভাপতি এশিয়ান টিভির জেলা প্রতিনিধি হুমায়ুন কবীর রিন্টুর সাথে।

এখানেই শেষ নয়, ৮মে জরুরী সংবাদ সংগ্রহের জন্য যাচ্ছিলেন নড়াইল প্রেসক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক আমাদের সময় জেলা প্রতিনিধিএনামুল কবীর টুকু ও এনটিভির জেলা প্রতিনিধি মুনীর চৌধুরী। নিশিনাথ তলা এলাকায় ভ্রাম্যমাণ ম্যাজিস্ট্রেট তাদের আ* টকিয়ে হেলমেট এর প্রসঙ্গে হেন*স্থা করেন। একজন সিনিয়র সাংবাদিকের সাথে এহেন আচরণে ক্ষু*ব্ধ হন মুনীর চৌধুরী।

নড়াইল প্রেসক্লাবের সভাপতি এনামুল কবীরটুকু বলেন, করোনার সময় ঝুঁ*কি নিয়ে সাংবাদিকরা কাজ করেন। এরপর জরুরী ক্ষেত্রে হেলমেট পরা একটু ক*ষ্টকর। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা কারী ম্যাজিষ্ট্রেট যে ব্যবহার করছেন তা অত্যন্ত অবমা*ননাকর। মনে হয় সাংবাদিকদের ওপর তারা কোন প্রতিশো*ধ নিচ্ছেন। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসককের অবগত করা হয়েছে।

৬মে ধোপাখোলা মোড়ে এক হাজার টাকা জরিমানা গুনতে হয়েছে গাজী টিভি’র জেলা প্রতিনিধি মীর্জা মাহামুদ হোসেন রন্টুকে। ম্যাজিস্ট্রেট তার কোন ওজোর আপত্তি শুনেননি। অথচ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকারী ম্যাজিষ্ট্রেট এর সামনে দিয়ে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ নম্বর প্লেট ও হেলমেট বিহীন ভাবে মটর সাইকেল চালালেও তাদেরকে জিজ্ঞাসাও করেননি।

ভূ*ক্তভো*গী গণমাধ্যম কর্মীরা এ ব্যাপারে কয়েক দফা সভা করে। সাংবাদিকদের অভিযোগ, ৩ মে মাইজপাড়া বাজাওে ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিরু*দ্ধে ব্যবসায়ীদের অভিযোগে সংবাদ সংগ্রহ করতে যায় স্থানীয় সাংবাদিকেরা। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ইজিবাইক চালকের মাথারচুল কা*টা, কৃষকের হাত ভে*ঙ্গে দেয়া, আদালতের দ্বায়িত্ব রত পুলিশের মা*র খেয়ে কয়েক ব্যবসায়ীর শরীরে কাল*সি*টে দা*গের তথ্য তুলে ধরে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় কয়েকটি দৈনিক ও অনলাইনে।

ভ্রাম্যমাণ আদালতের মা*র খাওয়া একজনকে ডিসিঅফিসে গোপনে ডেকে আর্থিক ও খাদ্য সহায়তা দিয়ে সাদা কাগজে স্বাক্ষর রাখা হয়। এর পর থেকেই মুলতঃ ভ্রাম্যমাণ আদালতের ক্ষো*ভ নেমে আসে গণ মাধ্যম কর্মীদেও ওপর। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের দ্বায়িত্বে থাকা ম্যাজিষ্ট্রেট দা*য় এড়াতে পারেনা-এমন বক্তব্য দিলেও ব্যবসায়ীদের মা*রার ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নেননি জেলা প্রশাসক। উল্টো “সাংবাদিকরা বা নিয়ে সংবাদ প্রচার করেছে এমন অভিযোগ দাড় করিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সায়েস্তা করতেই মাঠে ভ্রাম্যমান আদালত বলে মনে করছেন সংবাদকর্মীগণ।

করোনার দুর্দিনে প্রথমসারির যোদ্ধা সাংবাদিকদের প্রতিশো*ধমূলক হে*নস্থা করার ব্যাপারে প্রশ্ন তুলেছেন নড়াইল কণ্ঠ সম্পাদক কাজী হাফিজুর রহমান, বিডি খবর সম্পাদক লিটন দত্ত, দৈনিক নড়াইল প্রতিদিন সম্পাদক শরীফুল ইসলাম বাবলু, নড়াইল বার্তা সম্পাদক হাফিজুর রহমান, নড়াইল প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি সৈয়দ নাইমুর রহমান ফিরোজসহ সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ।

সিনিয়র সাংবাদিকরা বলেন, নড়াইল এখন সিসি ক্যামেরার আওতায়। প্রশাসন প্রয়োজনে সিসি ক্যামেরা হতে এ তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন। গণ মাধ্যম মানুষের ক*ষ্টের কথা লিখবে এটাই স্বাভাবিক।জনপ্রশাসন যদি সাধারণ মানুষের ওপর অ*ত্যাচার চালায় তবে দায় তাদের। এই অ*যুহাতে গণমাধ্যম কর্মীদের প্রতি হিং*সা মূলক হেনস্তা করা দুঃখজনক।এভাবে চললে সাংবাদিকরা কাজ করবে কিভাবে? নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মোঃ জাহিদ হাসান মোবাইল কোর্টে সাংবাদিকদের টার্গেট করার কথা অ*স্বীকার করে বলেন, এসব অভিযোগ তীব্র নি*ন্দার সাথে প্র*ত্যাখ্যান করছি।

অভিযোগ বিষয়ে জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা বলেন, মোবাইল কোর্টের বিষয়গুলো আপনারা অন্য ভাবে নিলে আমরা ভ্রাম্যামাণ আদালত পরিচালনা করবো না। মাইজপাড়ার ঘটনার ব্যাপারে আমি আমাদের ম্যাজিষ্ট্রেটদের ক*ঠোর হুঁ*শিয়ারি দিয়েছি। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে সাংবাদিক কেন কারো ব্যক্তিস্বার্থ ক্ষু*ন্ন হয় সেটা আমাদের কাম্য নয়।