ইসলাম ডেস্ক/এমএস
ঘূর্ণিঝ*ড় আম্ফানের তী*ব্রতা কে*টে যাওয়ার পরই “আবারো বাংলাদেশকে বাঁচিয়ে দিলো সুন্দরবন” শিরোনামে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। এরপর থেকেই ইসলাম ধর্ম অনুসারী মুসলিম জনগোষ্ঠী বিষয়টিকে শিরকের সাথে তুলনা করতে থাকেন যেটা দ্বারা বোঝানো হয়েছে “আল্লাহর অস্তিত্ব ও গুণরাজির সাথে কাউকে শরীক করে নেয়া।”
ইসলামী আলোচক ও জনপ্রিয় ইউটিউবার ডাঃ মুহাম্মদ ইব্রাহিম বিষয়টিতে আলোকপাত করেন পবিত্র কুরআনের সূরা আল আন’আম এর ৬৪ নং আয়াতের উদ্ধৃতি তুলে ধরে,
قُلِ اللّٰہُ یُنَجِّیۡکُمۡ مِّنۡہَا وَ مِنۡ کُلِّ کَرۡبٍ ثُمَّ اَنۡتُمۡ تُشۡرِکُوۡنَ
“অর্থঃ তুমি /মুহাম্মদ (সাঃ)/ বলে দাওঃ আল্লাহই তোমাদেরকে ঐ বিপদ এবং অন্যান্য প্রতিটি বিপদ আপদ থেকে রক্ষা করেন, কিন্তু এরপরও তোমরা শিরক কর।”
বক্তা এখানে “বাংলাদেশকে বাঁচিয়েছে সুন্দরবন” শিরোনামটিকে সরাসরি শিরিকের সাথে তুলনা করে সমালোচনা করে বলেন, এখানে আল্লাহ’র কর্তৃত্বের সাথে তুলনা করা হয়েছে। কীভাবে বিষয়টি শিরক এ সম্বন্ধে তিনি সূরা ইমরানের ২৬ নং আয়াত থেকে উদ্ধৃতি দেন
اِنَّکَ عَلٰی کُلِّ شَیۡءٍ قَدِیۡرٌ (অর্থঃ “নিশ্চয়ই আপনিই সর্ব বিষয়ে ক্ষ*মতাবান”) এবং মন্তব্য করেন, “ভাবা হচ্ছে যে সুন্দরবন সকলকে বাঁচিয়েছে, কিন্তু সর্বশক্তিমান বা সর্ব বিষয়ে ক্ষ*মতাবান কে? আপনি বিষয়টি কোনদিকে ঘুরিয়ে দিলেন? সুন্দরবনের দিকে। এই হিসেবে এটা শিরকের অন্তর্ভুক্ত।”
তিনি জানান, সকলের শিরক থেকে বাঁচতে হবে। অধিকাংশ মানুষই ঈমানের সাথে শিরক করে ফেলে। এ প্রসঙ্গে তিনি পবিত্র কুরআনের সূরা ইউসুফের ১০৬ নং আয়াতের উদ্ধৃতি দেন, وَ مَا یُؤۡمِنُ اَکۡثَرُہُمۡ بِاللّٰہِ اِلَّا وَ ہُمۡ مُّشۡرِکُوۡنَ (অর্থঃ “তাদের অধিকাংশ আল্লাহকে বিশ্বাস করে, কিন্তু তাঁর সাথে শরীক করে।”) ইব্রাহিম বলেন, এমনটাই ঘটলো। আল্লাহ তা’আলা আমাদের বাঁচালেন আর শিরক করা শুরু হয়ে গেল।
ইব্রাহিম তার আলোচনায় সূরা ইমরানের ১৪০ নং আয়াত থেকে উল্লেখ করেন, “যদি তোমাদের আঘা*ত লেগে থাকে তাহলে নিশ্চয়ই সেই সম্প্রদায়েরও তদ্রুপ আঘা*ত লেগেছে, এবং এই দিনসমূহকে আমি মানবগণের মধ্যে পরিক্রমণ করাই; এবং যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে তাদেরকে আল্লাহ এই রূপে প্রকাশ করেন…”।
তিনি বলেন যে আল্লাহ ঘূর্ণিঝ*ড় আম্ফান আমাদের দিয়েছেন। আল্লাহ তা’আলা ঈমানদারদের নির্বাচিত করবেন, ঠিক ঐসময় আপনি এমন শিরোনাম ব্যবহার করলেন যে সুন্দরবন আপনাকে বাঁচিয়েছে! এই মন্তব্যের মাধ্যমে আপনি পথভ্র*ষ্ট হয়ে গেলেন। এই বিষয়গুলো মুসলমানদের পরিহা*র করতে হবে।
বক্তা ইব্রাহীম শিরকের বিপ*ক্ষে আল্লাহ’র রাসূল হযরত মোহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রতিক্রিয়া জানাতে সহীহ বুখারী থেকে একটি হাদীসের রেফারেন্স দেন। হাদীসটি অলঙ্কারবর্জি*তরূপে তুলে ধরা হলোঃ
যায়দ ইবনু খালিদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, হুদাইবিয়ার বছর আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সঙ্গে বের হলাম। এক রাতে খুব বৃষ্টি হল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিয়ে ফজরের সালাত আদায় করলেন। এরপরে আমাদের দিকে ফিরে বললেন, তোমরা জান কি তোমাদের রব কী বলেছেন? আমরা বললাম, আল্লাহ ও আল্লাহ্র রসূলই অধিক জানেন।
তখন তিনি বললেন, আল্লাহ তা’আলা বলেছেন (বৃষ্টির কারণে) আমার কতিপয় বান্দা আমার প্রতি ঈমান এনেছে, আর কেউ কেউ আমাকে অমা*ন্য করেছে। যারা বলেছে, আল্লাহ্র রহমত, আল্লাহ্র দয়া এবং আল্লাহ্র ফযলে আমাদের প্রতি বৃষ্টি হয়েছে, তারা আমার প্রতি বিশ্বাস স্থাপনকারী মু’মিন এবং তারা নক্ষত্রের প্রভাব অস্বী*কারকারী। আর যারা বলেছে যে অমুক তারকার কারণে বৃষ্টি হয়েছে, তারা তারকার প্রতি ঈমান এনেছে এবং আমাকে অস্বী*কারকারী কাফি*র (৪১৪৭)।
আলোচক সম্বন্ধ স্থাপন করে বলেন, এরপরও যদি আপনি বিশ্বাস করেন যে সুন্দরবনের জন্য আপনি বেঁচে গেছেন বিষয়টি শিরকের অন্তর্ভুক্ত। আপনাকে বিশ্বাস করতে হবে একমাত্র আল্লাহই আপনাকে বাঁচিয়েছেন, সুন্দরবন একটা ওছিলা মাত্র।
ইব্রাহীম সূরা নিসার ৪৮ নং আয়াতের অর্থ উল্লেখ করেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা তার সাথে শিরক করার অপরাধ ক্ষমা করবেন না। এছাড়া অন্য সকল গু*নাহ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করে দিবেন।” তিনি বলেন, ইসলামে শিরক হল একটি অমা*র্জনীয় অপ*রাধ। মৃ*ত্যু হবার পূর্বে আল্লাহর নিকট এই অপরাধের জন্য যদি ক্ষমা না চাওয়া হয় তাহলে তার জন্য আল্লাহ’র কোন অনুগ্রহ নেই।
মনে রাখতে হবে আল্লাহ পরম দয়ালু ও অতিশয় ক্ষমাশীল। তাঁর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা বা তওবা করলে নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমা করে দেন। এজন্য একেবারে ভ*য় পাবার কিছু নেই জানিয়ে শিরকের মত অমা*র্জনীয় গুনা*হ হতে মুসলমানদের দূরে থাকার আহবান জানান এবং তার আলোচনার জন্য মন্তব্য আশা করেন। নিচে ভিডিওটির পূর্ণরূপঃ
সুন্দরবন বাঁচিয়েছে বলা শিরক,বলুন আল্লাহ বাঁচিয়েছে | সুন্দরবন উছিলা মাত্র . YouTube- https://www.youtube.com/watch?v=fX9xDPRXUOs
Posted by Muhammad Ibrahim on Thursday, May 21, 2020