ডেস্ক রিপোর্ট
আওয়ামী লীগের এমপি এবং সাবেক মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের মৃ*ত্যুতে গভীর শো*ক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, দেশ ও জাতির কল্যাণে প্রচেষ্টা ও অবদানের জন্য মরহুম নাসিম স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। শনিবার (১৩ জুন) এক শো’কবার্তায় জাতীয় চার নেতার একজন ক্যাপ্টেন মনসুর আলীর পুত্র, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুতে গভীর শো’ক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং এক বিবৃতিতে এ কথা নিশ্চিত করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে মোহাম্মদ নাসিম তার পিতার মতোই দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করে গেছেন।’ তিনি বলেন, ‘দেশে স্বাধীনতা যু’দ্ধের চেতনা এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় তিনি অসামান্য অবদান রেখেছেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মোহাম্মদ নাসিমের মৃ’ত্যুতে বাংলাদেশ একজন সত্যিকার দেশপ্রেমিক ও গণমুখী নেতাকে হারা’লো এবং আমি নিজে একজন সহযো’দ্ধাকে হা’রিয়েছি।’ প্রধানমন্ত্রী মরহুমের রু’হের মাগফেরাত কামনা করেন এবং শো’ক স’ন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান।
সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম শনিবার সকালে ঢাকার শ্যামলীতে বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে হাসপাতালে মা’রা যান। ইন্না লিল্লাহী ওয়া ইন্না ইলাহী রাজিউন। তিনি পহেলা জুন থেকে এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরে করোনা টেস্টে তার পজিটিভ পাওয়া যায়, চিকিৎসাধীন অবস্থায় দ্বিতীয় টেস্টে নে’গেটিভ পাওয়া যায়। পরে তিনি স্ট্রো’কে আ’ক্রান্ত হন এবং তার অ’স্ত্রো’পচার সফল হয়। আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য এডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক সাংবাদিকদের জনান, আগামীকাল সকাল সাড়ে ১০ টায় বনানী কবরস্থান মসজিদে নামাজে জা’নাজা অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে জা’নাজা শেষে বনানী ক’বরস্থানে তাকে দা’ফন করা হবে।
করোনা পরিস্থিতিতে মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে তানভীর শাকিল জয় আগামীকালের জা’নাজায় দলীয়- নেতাকর্মীদের ব্যাপকভাবে উপস্থিত না হওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। মোহাম্মদ নাসিমের বয়স হয়েছিল ৭২ বছর। তিনি স্ত্রী, তিন ছেলেসহ অসংখ্য নেতা-কর্মী, আত্মীয়-স্বজন ও গুনগ্রাহী রেখে গেছেন।
এই রাজনীতিবিদের মৃ’ত্যুতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্পিকার ড. শিরীন শারমীন চৌধুরী, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ডা. এস এ মালেক ও আমির হোসেন আমু, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ,ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি হাসানুল হকইনুসহ মন্ত্রী সভার সদস্য, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা গভীর শো’ক ও দু:খ প্রকাশ করেছেন।
১৯৪৮ সালের ২ এপ্রিল সিরাজগঞ্জ জেলার কাজীপুর উপজেলায় এক সম্ভান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন মোহাম্মদ নাসিম। তার পিতা শহীদ ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন। যিনি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে গঠিত বাংলাদেশ সরকারে অর্থ, শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এবং স্বাধীনতা পরবর্তী বঙ্গবন্ধু সরকারের মন্ত্রীসভায় প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন। জাতীয় চার নেতার অন্যতম এম মনসুর আলী ৩ নভেম্বর জেলখানায়য় ঘা*’তকদের হাতে নিহ*ত হন। মোহাম্মদ নাসিমের মায়ের নাম মোসাম্মৎ আমিনা খাতুন, যিনি আমেনা মনসুর হিসেবেই পরিচিত। তিনি একজন গৃহিণী ছিলেন।
পারিবারিক জীবনে মোহাম্মদ নাসিম বিবাহিত এবং তিন সন্তানের জনক। তার স্ত্রীর নাম লায়লা আরজুমান্দ। মোহাম্মদ নাসিম জগন্নাথ কলেজ (বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
১৯৮৬, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালেও সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন মোহাম্মদ নাসিম। পরবর্তীতে ২০১৪ সালে তিনি সিরাজগঞ্জ-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন এবং ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। এছাড়াও ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি সিরাজগঞ্জ-১ আসন থেকে বিপুল ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বর্তমানে তিনি খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
এর আগে ১৯৯৬ সালের সরকারে তিনি স্বরাষ্ট্র, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে সাফল্যের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি ১৪ দলীয় মহাজোটের মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। মোহাম্মদ নাসিম বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য। তিনি রাজনীতির পাশাপাশি সমাজকল্যাণমূলক বিভিন্ন কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ঢাকাসহ নিজ এলাকা সিরাজগঞ্জে বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছেন। (সূত্রঃ বাসস)