স্টাফ রিপোর্টার
নড়াইলের কি’শোর সাদাত রহমান সাকিব আন্তর্জাতিক শি’শু শান্তি পুরস্কার পাওয়ায় নড়াইলে আনন্দের ব’ন্যা ব’ইছে। নড়াইলের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে প্রশংসায় ভা’সছে সাদাত রহমান। শি’শুদের র’ক্ষায় সচে’তনতামূলক অ্যাপ উদ্ভাবনের জন্য নোবেল খ্যাত এ পুরস্কার পেলেন।
গত শুক্রবার নেদারল্যান্ডস এর হে’গে এক অনানুষ্ঠানিক অনুষ্ঠানে বিজয়ীর নাম ঘোষণা করেন শান্তিতে নোবেল জয়ী মালালা ইউসুফ জাই। নেদারল্যান্ডসে সাদাত রহমান সরাসরি উপস্থিত থেকে এই পুরস্কার গ্রহণ করেন । ৪২টি দেশের ১৪২জন শি’শুর মনোনয়নের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল বিশ্ব মঞ্চে উঠে আসার এই দৌড়। আন্তর্জাতিক শি’শু শান্তি পুরস্কারের সেই দৌ’ড়ে সব শে’ষ টি’কে ছিল বাংলাদেশসহ তিন দেশের ৩জন, যাদের একজন নড়াইলের কিশোর সাদাত রহমান। শি’শুদের অধি’কার, উন্নয়ন ও নিরাপ’ত্তা র’ক্ষায় অসাধারণ অবদানের জন্য প্রতি বছর আন্তর্জাতিক শি’শু শা’ন্তি পুরস্কার দেওয়া হয়।
জানা যায়, ২০১৯ সালের ৩০ আগস্ট পিরোজপুরের ভান্ডারিয়ার সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রে’ণির ছাত্রী রোকাইয়া রূপা সাইবার বু’লিং-এর শি’কার হয়ে আ’ত্মহন’নের পথ বেছে নেয়। বিষয়টি তাকে না’ড়া দেয়। এ ধরনের ঘটনা দেশে প্রতিনিয়তই ঘটছে। এক হিসেবে দেখা যায় দেশে ৪৯শতাংশ কি’শোর-কি’শোরী সাইবার বু’লিং-এর শি’কার হচ্ছে। কিন্তু এ বিষয়গুলি পুলিশতো দূরের কথা বা’বা-*মাকেও ব’লতে পারে না। শেষ পর্যন্ত অনেকেই আ’ত্মহ’ত্যার পথ বে’ছে নেয়।
এ ধরণের উপলব্ধি থেকে সাইবার বু’লিং-এর শি’কার হওয়া শি’শু-কিশো’রদের সাহায্য করার জন্য অনলাইন প্লাটফরম ‘সাইবার টি’নস নড়াইল’-এর যাত্রা শুরু হয় গত বছরের অক্টোবর মাসে। নড়াইল ভলেন্টিয়ার্স সংগঠনটি বেসরকারী সংস্থা এক’শান এই’ডের ‘ই’য়ুথ ইনোভেশন চ্যা’লেঞ্জ’-২০১৯ এ বিজয়ী হয়ে একটি তহবিল পায়। এই তহবিলের মাধ্যমে তারা গত বছরের অক্টোবর মাসে অনলাইন প্লাটফরম ‘সাইবার টি’নস’ নামে মোবাইল অ্যাপ তৈরি করে। এই অ্যাপের মাধ্যমে জানতে পারে কিভাবে কিশো’র-কিশো’রীরা ইন্টারনেট দুনিয়ায় সুর’ক্ষিত থাকা সম্ভব।
এই অ্যাপের মাধ্যমে ভূ’ক্তভো’গী কিশো’র-কিশো’রীদের সাথে আ’ইন প্রয়ো’গকারী সংস্থার সাথে যোগাযোগ সৃষ্টি করা হয়। প্রথমত ভূ’ক্তভো’গীকে মান’সিক সাপো’র্ট দেওয়া হয়। পরে অভিযু’ক্তকে নিবৃ’ত করার চেষ্টা করা হয়। বিষয়টি অ’পরা’ধের পর্যায়ে পৌছালে পুলিশ বিভাগকে জানানো হয়। প্রায় ১ হাজার ৮শ কি’শোর কিশো’রী এই অ্যা’প ব্যবহার করছে। বর্তমানে সাদাত ‘সে’ফ ইন্টারনেট’ ‘সে’ফ টি’নএজার’ নামে একটি কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। সে এবং তার বন্ধুরা ইন্টারনেট নিরা’পত্তা বাড়াতে স্কুলে স্কুলে সেমিনার-কর্মশালা করছে। তারা বিভিন্ন স্কুলে ‘ডিজিটাল স্বাক্ষরতা ক্লাব’ প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু করেছে। সাদাত সম্পর্কে কি’ডস রা’ইটস-এর ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, সাদাত একজন চে’ঞ্জমেকার এবং সমাজ সং’স্কারক।
জানা গেছে, ১৭ বছর বয়’সী সাদাত রহমান নড়াইল আব্দুল হাই সিটি কলেজের দ্বাদশ বর্ষের ছাত্র। তার বাবা সাখাওয়াত হোসেন ডেপুটি পো’স্ট মা’স্টার হিসেবে কর্মরত। বর্তমানে তিনি কুষ্টিয়ায় কর্মরত রয়েছেন। গত দু’বছর পূর্বে সে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে সেচ্ছাসেবী সংগঠন নড়াইল ভলেন্টি’য়ার্স গ’ড়ে তোলে। প্রথম থেকেই সে তার বন্ধুদের উদ্ভা’বনী শ’ক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন সামাজিক সম’স্যাকে চি’হিৃত করে তা সমাধানের চেষ্টা করে আসছে।
২০১৮ সালের ২৩ নভেম্বর ই’য়াং বাংলা সি.আর.আই আয়োজিত ‘লেট টক উইথ শেখ হাসিনা’এক অনুষ্ঠানে সাদাত ই’য়াং লি’ডার হিসেবে দাওয়াত পান। একই বছরে সামাজিক কাজে বিশেষ অবদান রাখার জন্য ‘জয় বাংলা ই’য়ুথ অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে সংগঠনটি।
বিভিন্ন সময় সংগঠনটির কর্মীরা শীতব’স্ত্র বিত’রণ,পরিস্কার পরি’চ্ছন্নতা অভিযা’ন, শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন ধরণের সেমিনার, পরিবেশ সুর’ক্ষা, র’ক্তদান কর্মসূচী, ই’ভটি’জিং ও বা’ল্যবি’বাহ রো’ধে বিভিন্ন প্রকার সচেত’নতামূলক কর্মশালা এবং ভিডিও তৈরি, অ’স’হায় পথ শি’শুদের নিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠান এবং সহযোগিতাসহ সে’বামূলক কাজ করে আসছে। এছাড়া করো’নাভা’ইরাস প্রতিরো’ধে সংগঠনটি প্রথম থেকেই নড়াইলের পি’ছিয়ে প’ড়া জ’নগো’ষ্ঠী, শহরের বিভিন্ন মসজিদ, মন্দির ও গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি হ্যা’ন্ড ও’য়াশ স্থাপন করে সবার প্রশংসা কু’ড়ায়।
সাদাত নেদারল্যান্ডস-এ যাওয়ার পূর্বে নড়াইল প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের সাথে অ’নানুষ্ঠানিক এক মতবিনিময়ে জানিয়েছিলেন, পুরস্কারের সঙ্গে পাওয়া ১লাখ ইউরো এই প্রজেক্টে অ্যাপটির উন্নয়নে ব্যয় করার ইচ্ছা তার। তিনি আশা করছেন, এটি পুরো বিশ্বের জন্য একটি মডেল হবে।
নড়াইল ভলেন্টিয়ার্স এবং সাইবার টি’নস, নড়াইল-এর দু’কর্মী সাদাতের বন্ধু অর্নব ঘোষ এবং শফিকুল ইসলাম জানান, কিশোর-কিশোরীরা সাইবার বু’লিং-এর শি’কার হলে তারা কাওকে বলতে পারে না। আবার তাদের সাহায্য করতে কেউ এগিয়ে আসে না। ফলে অনেকেই আ’ত্মহ’ত্যার পথ নেয়। এর থেকে পরিত্রা’নের কথা চিন্তা করেই আমাদের একটি ওয়ে’বসাইট এবং অ্যাপ তৈরি করা। তাদের এই সাফল্য গো’টা দেশবাসীর। এই সাফল্য তাদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে অনেক অনুপ্রেরণা যোগাবে বলে জানান।
সাদাতের মা মলিনা খাতুন ছেলের এই সাফল্যের কথা ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, সে নড়াইল তথা দেশের সুনাম বয়ে এনেছে। এজন্য আমরা খুবই আনন্দিত। সাদাতের সাথে তার বাবাও রয়েছে। আগামি ১৬-১৭ নভেম্বর দেশে আসবে বলে জানান।
নড়াইলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন পিপিএম জানান, ‘মুুজিববর্ষের অঙ্গিকার পুলিশ হবে জনতার’ এই শ্লোগানকে সামনে রেখে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সাদাতের আইডিয়া আমাদের অ্যা’কশান। এটা আমাদের একটি বড়ো সাফল্য। এ পর্যন্ত সাইবার টি’নস-এর মাধ্যমে প্রায় ৫০টির মতো অভিযোগের মি’মাং’সা হয়েছে। ১২টির মতো সাইবার অ’প’রাধীর বিরু’দ্ধে মা’ম’লা হয়েছে। কয়েকজনকে গ্রেফ’তার করা হয়েছে। অনেককে বুঝিয়ে, তাদের সাথে কাউন্সিলিং করে এবং অভিভাবককে জানিয়ে এ সমস্যা মোকা’বেলা করা হয়েছে। সাদাতের এই উদ্ভাবনের দ্বারা সারা দেশবাসী উপকৃত হবে। তার সাফল্যে আমরা গর্বিত।
জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ একটি দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখছেন। সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের হাতিয়ার হচ্ছে তরু’ণ সমাজ। প্রধানমন্ত্রী এ ত’রুণ সমাজকে এগিয়ে নিতে তথ্য ও প্রযুক্তির দিকে বেশী ন’জর দিয়েছেন। তারই ধারাবাহিকতায় আমরা সাদাতের মতো একজন তরুণ উদ্যোক্তাকে সাহায্য করছি। সাইবার বু’লিং-এর শি’কার কি’শোর-কিশো’রীদের র’ক্ষার জন্য যে অ্যাপ তৈরি করেছে তা অভা’বনীয়। আমরা এ আইডিয়ার সাথে প্রথম থেকে রয়েছি। তার টিমকে জেলা শিল্পকলা ভবনে একটি ক’ক্ষ দেওয়া হয়েছে কাজ করার জন্য। অনেক ক্ষেত্রে তাকে আর্থিক সহা’য়তাও দেওয়া হয়েছে। আগামীতেও আমাদের তরফ থেকে সম্ভাব্য সব ধরনের সাহায্য সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। এভাবে এক সাদাতের মাধ্যমে সারা বাংলাদেশ উঠে আসবে। সাদাত নড়াইলে আসলে তাকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে জানান।
নড়াইল-২ আসনের এমপি সাবেক জাতীয় ক্রিকেট দলের সফল অধিনায়ক মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তার পেজে লিখেছেন, তোমার (সাদাত) এই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি নড়াইলের প্রতিটি মানুষের জন্য গ’র্বের এবং আনন্দের।