দ্বিতীয়বারের মত ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করলো বাংলাদেশ

4
8
দ্বিতীয়বারের মত ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করলো বাংলাদেশ
দ্বিতীয়বারের মত ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করলো বাংলাদেশ

স্পোর্টস ডেস্ক

ওয়ানডে ক্রিকেটে দ্বিতীয়বারের মত ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করলো বাংলাদেশ। আজ সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে ম্যাচে ক্যারিবীয়দের ১২০ রানে বড় ব্যবধানে হারায় তামিম ইকবালের দল। ফলে তিন ম্যাচের সিরিজ ৩-০ ব্যবধানে জিতলো বাংলাদেশ। ২০০৯ সালে প্রথম ও শেষবারের মত ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তিন ম্যাচের সিরিজে হোয়াইটয়াশ করেছিলো বাংলাদেশ।

চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়ায় সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। অধিনায়ক তামিম ইকবাল-সাকিব আল হাসান-মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের হাফ-সেঞ্চুরিতে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ২৯৭ রান করে বাংলাদেশ। জবাবে ১৭৭ রানে অলআউট হয়ে হার বরণ করে নেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

শুরুটা মোটেই ভাল হয়নি টাইগারদের। প্রথম ওভারের পঞ্চম বলেই ওপেনার লিটন দাসকে হারায় বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ডান-হাতি পেসার আলজারি জোসেফের বলে লেগ বিফোর হন লিটন। রিভিউ নেয়ার জন্য অপরপ্রান্তে থাকা ওপেনার অধিনায়ক তামিম ইকবালের সাথে পরামর্শ করছিলেন। কিন্তু ততক্ষণ রিভিউ নেয়ার সময় শেষ হয়ে যায়। ফলে খালি হাতেই বিদায় নিতে হয় লিটনকে।

দলীয় ১ রানে প্রথম উইকেট হারানোর পর অপর ওপেনার তামিম ইকবালের সঙ্গী হন তিন নম্বরে নামা নাজমুল হোসেন শান্ত। শুরুর ধাক্কা সামলে ওঠার চেষ্টায় ছিলেন তামিম-শান্ত জুটি
পরের তিন ওভারে তিনটি চার মেরে আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন শান্ত। সতীর্থের তিনটি চার দেখার পর পঞ্চম ওভারে প্রথম বাউন্ডারি মারেন তামিমও। তাই শুরুর ধাক্কা সামলে উঠার পথেই ছিলেন তামিম-শান্ত। কিন্তু নবম ওভারের চতুর্থ বলে তামিম-শান্তর পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ান ডান-হাতি পেসার কাইল মায়ারস। নবম ওভারে মায়ারসের বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন শান্ত। কে ফিরিয়ে দেন মায়ারস। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে না পরলে ৩০ বলে ৩টি চারে ২০ রানে থামে তার ইনিংস। ভেঙ্গে যায় তামিম-শান্তর ৫০ বলে ৩৭ রানের জুটি।

শান্তর বিদায়ে চার নম্বরে ব্যাট হাতে নামেন সাকিব আল হাসান। উইকেটে সেট হতে খুব বেশি সময় নেয়নি তামিম-সাকিব জুটি। তাদের ব্যাটিং দৃঢ়তায় ২৩ ওভারে শতরানের কোটা স্পর্শ করে টাইগাররা।

তখন হাফ-সেঞ্চুরির দোড়গোড়ায় ছিলেন তামিম। ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়ক জেসন মোহাম্মদের করা ২৬তম ওভারের প্রথম ও নিজের মোকাবেলা ৭০তম বলে ১ রান নিয়ে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৪৯তম হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তামিম। দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও ৫০ রান করেছিলেন টাইগার অধিনায়ক। হাফ-সেঞ্চুরি পাওয়া ওভারেই ইনিংসের প্রথম ছক্কা মারেন তামিম।
তবে ২৮তম ওভারের শেষ বলে ব্যক্তিগ ৬৪ রানে আউট হন তামিম। আলজারি জোসেফের বলে মিড উইকেটে আকিল হোসেনের তালু বন্দি হওয়ার আগে ৮০ বলে ৩টি চার ও ১টি ছক্কা মারেন টাইগার অধিনায়ক। তৃতীয় উইকেটে সাকিবের সাথে ১২১ বলে ৯৩ রান যোগ করে বাংলাদেশকে ভালো অবস্থায় রেখে যান তামিম। ২৮ ওভার শেষে ৩ উইকেটে ১৩১ রান করে বাংলাদেশ।

অধিনায়ককে হারানোর পর সাবধানী হয়ে পড়েন সাকিব। সাথে ছিলেন মুশফিকুর রহিম। ২ ওভার উইকেটে কাটানোর পর দু’টি বাউন্ডারি মেরে ভালো শুরু করেন মুশফিক। এরপর সাকিবের সাথে রানের চাকা সচল রাখেন মুশফিক।

তবে ৩৬তম ওভারে স্বস্তির হাসি সাকিবের ব্যাটে। ওভারে শেষ বলে ১ রান নিয়ে ২০৯ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৪৮তম হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন বিশ্ব সেরা এ অলরাউন্ডার। আইসিসি কৃর্তক নিষিদ্ধ হবার আগে ২০১৯ সালের ৫ জুলাই লর্ডসে ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে সর্বশেষ হাফ-সেঞ্চুরিসহ ৬৪ রান করেছিলেন সাকিব। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরা সাকিব প্রথম দুই ম্যাচে যথাক্রমে ১৯ ও অপরাজিত ৪৩ রান করেন।

এ ম্যাচে ৭৮ বলে হাফ-সেঞ্চুরি পুর্ন করে শেষ পর্যন্ত রেমন রেইফারের বলে বোল্ড হওয়ার আগে ৮১ বলে ৩টি চারে ৫১ রান করেন সাকিব। চতুর্থ উইকেটে মুশফিক-সাকিব ৫৬ বলে ৪৮ রান যোগ করেন। ৩৭তম ওভারে দলীয় ১৭৯ রানে চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন সাকিব। এরপর মুশফিক-মাহমুদুল্লাহ দলের স্কোর বড় করতে থাকেন। ৪৪ ওভারের পর দ্রুত রান তোলায় মনোনিবেশ করেন তারা।

৪৪তম ওভারে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৩৯তম হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পান মুশফিক। ৪৭ বলে হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করে দ্রুত রান তোলার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখেন তিনি। রেইফারের করা ৪৭তম ওভারের প্রথম বলে ছক্কাও মারেন মুশি। তবে পরের বলেই আউট হন এ ডান-হাতি ব্যাটসম্যান। ৫৫ বলে ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ৬৪ রান করেন তিনি। আউট হওয়ার আগে মাহমুদুল্লাহ’র সাথে ৬১ বলে ৭২ রান যোগ করেন মুশফিক।

মুশফিকের বিদায়ের পর বাংলাদেশের রানের চাকা দ্রুত ঘুড়িয়েছেন মাহমুুদুল্লাহ। শেষ ওভারের প্রথম বলে ছক্কা দিয়ে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ২২তম অর্ধশতকের দেখা পান মাহমুদুল্লাহ। অভিষেক ম্যাচ খেরতে নামা ক্যারিবিয় পেসার কিওন হার্ডিং এর করা ইনিংসের শেষ ওভারে দু’টি ছক্কা মারেন মাহমুদুল্লাহ। তার ঝড়ো গতির ইনিংসে শেষ পর্যন্ত বাংলাদে ৬ উইকেটে ২৯৭ রানের পুঁজি পায় । ৩টি করে চার-ছক্কায় ৪৩ বলে ৬৪ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলেন মাহমুদুল্লাহ। সৌম্য সরকার ৭ রানে আউট হলেও, প্রথমবারের মত সিরিজে খেলতে নামা মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ২ বলে অপরাজিত ৫ রান করেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের জোসেফ- রেইফার ২টি করে উইকেট নেন।

২৯৮ রানের টার্গেটে দ্বিতীয় ওভারেই উইকেট হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ওপেনার কির্জন ওটেলিকে ১ রানে থামিয়ে দেন বাংলাদেশের পেসার মুস্তাফিজুর রহমান। আরেক ওপেনার সুনীল অ্যামব্রিসকেও শিকার করেন ফিজ। লেগ বিফোর হবার আগে ১৩ রান করেন তিনি।
এরপর মুস্তাফিজের সাথে উইকেট শিকারের আনন্দে মাতেন আগের ম্যাচের হিরো স্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ। চার নম্বরে নামা কাইল মায়ারসকে(১১) লেগ বিফোর ফাঁদে ফেলেন তিনি।এতে ৪৭ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

সেই চাপ আরও বাড়িয়ে দেন সাইফউদ্দিন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়ক মোহাম্মেদ ও এনকুমার বোনারকে বিদায় দেন সাইফউদ্দিন। বুনার ৩১ ও মোহাম্মেদ ১৭ রান করে আউট হন। ৯৩ রানে পাঁচ ব্যাটসম্যান প্যাভিলিয়নে ফিরে যাওয়ায় ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

দলকে ম্যাচে ফেরাতে এক প্রান্ত আগলে লড়াই করেন রোভম্যান পাওয়েল। তবে অপরপ্রান্ত দিয়ে একে একে ওয়েস্ট ইন্ডিজের উইকেট তুলে নিতে থাকেন বাংলাদেশের বোলাররা। সতীর্থদের সঙ্গ না না পওয়া পাওয়েল সপ্তম ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন পাওয়েল। তাকে ৪৭ রানে বিদায় দিয়ে বাংলাদেশের পথের শেষ কাটা তুলে ফেলেন সাত নম্বর বোলার হিসেবে আক্রমনে আসা মিডিয়াম পেসার সৌম্য সরকার।

পাওয়েলের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে কিছুটা লড়াই করেন রেইফার। তার ২৭ রান হারের ব্যবধানই কমিয়েছে। রেইফারকে নিজে ডেলিভারি নিজেই ক্যাচ নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংসের ইতি টানেন সিরিজে প্রথমবারের মত খেলতে নামা পেসার তাসকিন আহমেদ। শেষ পর্যন্ত ৪৪ দশমিক ২ ওভারে ১৭৭ রানে অলআউট হয় ক্যারিবীয়রা। এ ম্যাচে আটজন বোলার ব্যবহার করেছেন তামিম। এরমধ্যে সাইফউদ্দিন ৯ ওভারে ৫১ রানে ৩টি উইকেট নেন। এছাড়া মুস্তাফিজ-মিরাজ ২টি করে, তাসকিন-সৌম্য ১টি করে উইকেট নেন।

ম্যাচ সেরা হয়েছেন বাংলাদেশের মুশফিকুর রহিম। আর সিরিজ সেরা হন সাকিব। আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে চট্টগ্রামের এই ভেন্যুতে শুরু হবে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ।

স্কোর কার্ড :
বাংলাদেশ ইনিংস :
তামিম ইকবাল ক হোসেন ব জোসেফ ৬৪
লিটন দাস এলবিডব্লু ব জোসেফ ০
নাজমুল হোসেন শান্ত এলবিডব্লু ব মায়ারস ২০
সাকিব আল হাসান বোল্ড ব রেইফার ৫১
মুশফিকুর রহিম ক জোসেফ ব রেইফার ৬৪
মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ অপরাজিত ৬৪
সৌম্য সরকার রান আউট (হোসেন/হ্যামিল্টন) ৭
মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন অপরাজিত ৫
অতিরিক্ত (লে বা-৪, নো-৩, ও-১৫) ২২
মোট (৬ উইকেট, ৫০ ওভার) ২৯৭
উইকেট পতন : ১/১ (লিটন), ২/৩৮ (শান্ত), ৩/১৩১ (তামিম), ৪/১৭৯ (সাকিব), ৫/২৫১ (মুশফিক), ৬/২৮৩ (সৌম্য)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোলিং :
জোসেফ : ১০-০-৪৮-২ (ও-৩, নো-১),
হার্ডিং : ১০-০-৮৮-০ (ও-৭, নো-২),
মায়ারস : ৭-০-৩৪-১ (ও-১),
রেইফার : ১০-০-৬১-২,
হোসেন : ১০-০-৪৬-০ (ও-৩),
মোহাম্মেদ : ৩-০-১৬-০।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইনিংস :
ওটলি ক মুশফিক ব মুস্তাফিজুর ১
অ্যামব্রিস এলবিডব্লু ব মুস্তাফিজুর ১৩
বোনার বোল্ড ব সাইফউদ্দিন ৩১
মায়ারস এলবিডব্লু ব মিরাজ ১১
মোহাম্মেদ ক মুশফিক ব সাইফউদ্দিন ১৭
পাওয়েল এলবিডব্লু ব সৌম্য ৪৭
হ্যামিল্টন ক মুশফিক ব মিরাজ ৫
রেইফার ক এন্ড ব তাসকিন ২৭
জোসেফ রান আউট ১১
আকিল ক মুশফিক ব সাইফউদ্দিন ০
হার্ডিং অপরাজিত ১
অতিরিক্ত (বা-১, লে বা-২, নো-২, ও-৮) ১৩
মোট (অলআউ, ৪৪.২ ওভার) ১৭৭
উইকেট পতন : ১/৭ (ওটলি), ২/৩০ (অ্যামব্রিস), ৩/৪৭ (মায়ারস), ৪/৭৯ (মোহাম্মেদ), ৫/৯৩ (বোনার), ৬/১১৭ (হ্যামিল্টন), ৭/১৫৫ (পাওয়েল), ৮/১৭৪ (জোসেফ), ৯/১৭৫ (আকিল), ১০/১৭৭ (রেইফার)।
বাংলাদেশ বোলিং :
সাইফউদ্দিন : ৯-০-৫১-৩ (ও-২),
মুস্তাফিজুর : ৬-০-২৪-২ (ও-৪),
তাসকিন : ৮.২-১-৩২-১ (নো-২),
মিরাজ : ১০-২-১৮-২ (ও-১),
সাকিব : ৪.৫-০-১২-০ (ও-৩),
মাহমুদুল্লাহ : ২-০-১১-০ (ও-১,
সৌম্য : ৩.১-০-২২-১,
শান্ত : ১-০-৪-০।
ফল ; বাংলাদেশ ১২০ রানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : মুশফিকুর রহিম (বাংলাদেশ)।
সিরিজ সেরা : সাকিব আল হাসান (বাংলাদেশ)।
সিরিজ : তিন ম্যাচের সিরিজ ৩-০ ব্যবধানে জিতলো বাংলাদেশ। (সূত্রঃ বাসস)