নিজস্ব প্রতিবেদক
গ্রাম্য একটি প্রবাদ আছে নামেই তাল পুকুর, ঘটি ডোবে না। নড়াইলে ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত পানি শোধনাগারের এই অবস্থা। শুধু নামেই এটি এখন ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট। উদ্বোধনের পর মাত্র ৩ মাস এটি কোনো রকম খুড়িয়ে খুড়িয়ে চললেও পরে আর চলেনি। ১ বছর ধরে তা বন্ধ। পানি শোধনের বিভিন্ন ধাপগুলোতে এখন পানি পচে শ্যাওলা জমেছে, মশা উৎপাদনের কারখানায় পরিণত হয়েছে। নষ্ট হচ্ছে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ও অবকাঠামো। পানি শোধনের পাইপে ধুলাবালি ও মরিচা পড়েছে। প্রায় ১ বছর পানি শোধনাগারের নিজস্ব বিদ্যুৎ ট্রান্সফরমারের তার পুড়ে গেলেও তা আর ঠিক করা হয়নি। পৌরবাসীর প্রশ্ন ১০ কোটি টাকার এই পানি শোধনাগার কি পানিতেই যাবে!
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ‘৩৭ জেলা শহরে পানি সরবরাহ প্রকল্পের আওতায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্বাবধানে ২০১৪ সালের অক্টোবর থেকে নড়াইল পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের গো-হাটখোলা এলাকায় ৯ কোটি ৮৭ লাখ ৩৩ হাজার ১৯০টাকা ব্যয়ে উন্নত প্রযুক্তি ও উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন এ ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের কাজ শুরু হয়। কাজটির দায়িত্ব পায় গোপালগঞ্জের শি-এমটি এন্ড এস এস কনসোর্টিয়াম নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। পাম্প হাউজ নির্মাণ, বর্জ্য পানি অপসারনের জন্য ড্রেনেজ ব্যবস্থা, জমি জটিলতাসহ নানা কারনে নির্মাণ কাজ দেরিতে সম্পন্ন হয়। পরে ২০১৯ সালের ১৯ নভেম্বর তৎকালীন জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা এটির উদ্বোধন করেন। এ সময় আনুষ্ঠানিকভাবে নড়াইল পৌরসভার কাছে প্লান্টটি হস্তান্তর করা হয়।
জানা যায়, প্রতি ঘন্টায় ৩৫০ ঘনমিটার পানি শোধনের ক্ষমতা রয়েছে এ ট্রিটমেন্ট প্লান্টের। সার্বক্ষনিক তিনটি পানি পাম্প থেকে পানি শোধানাগারে আসবে। তারপর মোট ৬টি ধাপ শেষে এ পানি শোধন হবে। এ শোধানাগার চালুর ফলে পৌরসভার ১৩ কিঃমিঃ এলাকার ২ লক্ষাধিক মানুষ পাইপ লাইনের মাধ্যমে নিরাপদ পানি পানের আওতায় আসার কথা ছিল।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নড়াইলের নির্বাহী প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব) এম.এম আবু সালেহ জানান, প্লান্টটি হস্তান্তরের পর এটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব এখন নড়াইল পৌরসভার। তাই পানি শোধনের পর এর দূষিত ময়লা পানি অপসারণ, ব্যাক ওয়াশ, সার্ভিসিং, প্রয়োজনীয় কর্মচারি রাখা এবং তাদের বেতন ইত্যাদি বিষয়গুলো দেখতে হয়। এসব বিষয়ে পৌরসভার নজরদারির ঘাটতি রয়েছে বলে তিনি মনে করেন। নড়াইল পৌরসভার পানিতে অতিরিক্ত আয়রণ এবং ময়লা। এই পানি পান করলে পানি বাহিত বিভিন্ন রোগ হতে পারে। সেজন্য বিশুদ্ধ পানি পেতে পৌর কর্তৃপক্ষ আমাদের কাছে টেকনিক্যাল কোনো সাহায্য চাইলে সেটা আমরা করব।
নড়াইল জজ কোর্টের অতিরিক্ত পিপি আ্যাডভোকেট আলমগীর সিদ্দিকী বলেন, উদ্বোধনের পর মাত্র ৩ মাস চালুর পর তা আবার বন্ধ হয়ে যায়। এতে সাধারন মানুষ বিশুদ্ধ খাবার পানি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তিনি এটি দ্রুত চালুর আহব্বান জানান। প্লান্টটি চালু হলে পৌরবাসী বিশেষ নাগরিক সুবিধা পাবেন।
নড়াইল পৌরসভার নব নির্বাচিত মেয়র আনজুমান আরা বলেন, পৌরসভার দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার পর ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট পরিদর্শন করে দেখেছি পানি পাম্প, বিদ্যুৎ ব্যবস্থাসহ অনেক কিছুই নষ্ট হয়ে পড়ে আছে এবং নষ্ট হবার পথে। “পৌরবাসীকে কথা দিয়েছি সুপেয় পানি পান করাব, এখন চেষ্টা করছি সব কিছু ঠিকঠাক করে দ্রুতই শোধানাগারটি চালু করার”। পূর্ববর্তী পৌর পরিষদের কোনো অবহেলা ছিল কিনা এ ব্যাপারে তিনি বলেন সেটা বলতে পারব না।