শামীমূল ইসলাম
নড়াইল সদর হাসপাতালের ৭০ লাখ টাকা আতœসাতের ঘটনায় বুধবার (১৩ এপ্রিল) তদন্ত প্রতিবেদনে ৩৪টি জাল চালানের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। এর জন্য হাসপাতালের হিসাবরক্ষক জাহান আরা লাকিকে দায়ি করা হয়েছে। এদিকে অভিযুক্ত হিসাবরক্ষক ৪ মাসের ইউজার ফিয়ের ৩লাখ ৯৬ হাজার ৯৭০টাকা ব্যাংকে জমা দিয়েছেন। এদিকে এ ঘটনায় ফের নতুন করে খুলনা বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। মাগুরা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. স্বপন কুমার কুন্ডুকে প্রধান করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিট গঠন করা হয়েছে।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক অফিস ও সোনালী ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, জাহান আরা খানম লাকির বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ১৮ জুলাই থেকে গত মার্চ মাস পর্যন্ত হাসপাতালের ইউজার ফিয়ের (রোগি ভর্তি ফি, ওটি চার্জ, চিকিৎসা ফি, প্যাথলজি, অ্যাম্বুলেন্স, কেবিন ফিসহ বিভিন্ন খাতের) ২১ মাসের ৭০ লাখ টাকা সোনালী ব্যাংকে জমা না দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার থেকে হাসপাতালের হিসাবরক্ষক লাকিকে স্টেশন ত্যাগ করতে নিষেধ এবং তার দায়িত্ব থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়। বিষয়টি তদন্তের জন্য ৫ সদস্যের একটি কমিটি করা হয়।
নড়াইল সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার মো. আবু সেলিম জানান, সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মহোদয় আমাদের নিকট ৪৩টি চালান প্রদর্শন করেন, চালানগুলো কয়েকবার পরীক্ষা করে দেখা গেছে, ৯টি চালান সঠিক এবং বাকি চালানের সিল ও স্বাক্ষর জাল। এসব চালানে মোট ১৩লাখ ১২হাজার ৫২০টাকা ব্যাংকে জমা পড়েছে। বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে গত সোমবার লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, নতুন ৪টি এবং পূর্বের ৯টিসহ মোট ১৩টি চালানে ইউজার ফিয়ের ১৭ লাখ ৯ হাজার ৪৯০ টাকা ব্যাংকে জমা হয়েছে। বাকি আরও ৩০টি চালানে ৪০-৪৫ হাজার টাকা ব্যাংকে জমা দেওয়া হয়নি। প্রসঙ্গত ইতিপূর্বে সদর হাসপাতালে ১ কোটি ৭০লাখ টাকার ইউজার ফি আ/ত্মসাতের ঘটনায় পূর্বের হিসাবরক্ষক মাহফুজুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলাটি দুদকে বিচারাধীন রয়েছে।
এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব ডাঃ আ.ফ.ম মশিউর রহমান বাবু এ প্রতিনিধিকে বলেন, তদন্তে ৩৪টি জাল চালানের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে এবং এর জন্য হিসাবরক্ষককে দায়ী করা হয়েছে। প্রতিবেদন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে।
অভিযুক্ত হিসাবরক্ষক জাহান আরা খানম লাকি এ প্রতিনিধিকে বলেছেন, সোমবার (১২এপ্রিল) গত মার্চ মাসসহ তার কাছে থাকা ৪ মাসের ইউজার ফিয়ের ৩,৯৬,৯৭০ টাকা টাকা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এছাড়া বাকি মাসের টাকার হিসাব তার কাছে নেই। এসব মাসের টাকা তত্ত্বাবধায়ক স্যার কাকে দিয়ে ব্যাংকে পাঠিয়েছেন তা তিনি বলতে পারবেন। এ দায়ভার আমার নয়।
সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আব্দুর শাকুর বলেন, নড়াইলে গঠিত তদন্ত কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। এ বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু বলতে চাননি। অপর এক প্রশ্নে বলেন, হিসাবরক্ষক প্রতি মাসে একটি চালান প্রস্তুত করে আমার কাছে উপস্থাপন করেন। আমি সেটা যাচাই-বাছাই করে চালানের নীচে স্ব-হস্তে লিখে দেওয়া হয় ‘সমুদয় টাকা সরকারি কোষাগাওে জমা প্রদানের জন্য বলা হলো’। এরপর আমি স্বাক্ষর করি। এই চালানে উল্লেখিত টাকা হিসাবরক্ষকের দায়িত্ব সোনালী ব্যাংকে গিয়ে জমা দেওয়া এবং চালানটি নথিজাত করা। এ দায় তার। তিনি আরও বলেন, শুনেছি নতুন করে একটি বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। তবে এখনও কোনো চিঠি পাইনি।