শিক্ষাকে কেন জাতির মেরুদণ্ড বলা হয়?

269
922
শিক্ষাকে কেন জাতির মেরুদণ্ড বলা হয়?
শিক্ষাকে কেন জাতির মেরুদণ্ড বলা হয়?

মীর আব্দুল গণি, জার্মানি প্রবাসী

শিক্ষাকে কেন জাতির মেরুদণ্ড বলা হয় জানতে হলে আমাদের অবশ্যই স্বতন্ত্র ব্যক্তি মানুষের আচরণ সক্ষমতা তথা ব্যক্তি আচরণের আলোচ্য মূল্যবোধসমূহ অর্জনের বৈশিষ্ট্য জানা একান্ত প্রয়োজন।

প্রাণীসত্তা রূপে স্বতন্ত্র ব্যক্তি মানুষের আচরণ সক্ষমতা অর্জণের বৈশিষ্ট্য কোনোরূপ মূল্যবোধসম্পন্ন আচরণ সক্ষমতা নিয়ে মানুষ জন্মগ্রহণ করে না। মূলত “মানুষ জন্মগত গুণহীন বা মানবিক ও নৈতিক মূল্যবোধহীন প্রাণী।”

জন্মের পর হতে প্রতিটি প্রাণীই যেমন ক্রমান্বয়ে তার জন্মদান গোত্রের নিকট সত্তার বিশেষ করে মা-বাবার আচরণ অনুসরণ করে নিজেকে প্রকাশ ও পরিচালিত করতে থাকে তেমনি ব্যক্তি মানুষও তার পরিবারের নিকটসত্তার আচরণশীলতায় নিজেকে আচরণশীল বা প্রকাশ ও পরিচালিত করতে থাকে।

আমরা পরিবারের বোধ-চেতনাজাত আচরণশীলতার বাস্তব প্রেক্ষাপট তুলে ধরে আলোচনায় জেনেছি, ব্যক্তিসত্তায় রাষ্ট্রের কাঙ্খিত মূলবোধসম্পন্ন আচরণ উন্মেষে পরিবার অক্ষম। মূলত পরিবারের অক্ষমতার কারণেই ’’শিক্ষাদানে’’ ব্যক্তি আচরণে রাষ্ট্রের কাঙ্খিত মূল্যবোধসমূহের উন্মেষ সাধন করতে হয়।

“যেহেতু শিক্ষা দ্বারা ব্যক্তি আচরণে জাতি গঠনের মূল্যবোধসমূহের উন্মেষ সাধন করতে হয় সেহেতু শিক্ষাকে জাতির মেরুদণ্ড বলা হয়।” শিক্ষাকে কেন জাতির মেরুদন্ড বলা হয় আলোচনায় যুক্তিসহ তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।

উপরিউক্ত আলোচনায় প্রাপ্ত সিন্ধান্ত শিক্ষা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ একটা ঈঙ্গিত বহন করে। ইঙ্গিতটি হলো শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড হলে- জাতি গঠনের মূল্যবোধসমূহ (শিক্ষার প্রয়োজনীয় বিষয়) ব্যক্তি আচরণে উন্মেষ সাধনের যথাযথ প্রক্রিয়া শিক্ষাদানে অবশ্যই গ্রহণ ও অনুসরণ করতে হবে।

’’কেন মূল্যবোধসমূহ উন্মেষের প্রক্রিয়া গ্রহণ ও অনুসরণ করতে হবে তা একটি উপামার সাহায্যে তুলে ধরা যায়।’’উপমা- মনে করি শিক্ষার শুরু হতে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ‘সময়টিই’ হলো বিভিন্ন ফুল ও ফলের একটি বাগান। মনে করি বাগানটির শুরু ট শেষ হলো ঠ। ট।— সময়বাগান । —ঠ

অর্থাৎ শিক্ষার শুরু হতে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত।
ব্যক্তি আচরণের মানবিক ও নৈতিক মূল্যবোধসমূহ হলো উক্ত বাগানের ফুল ও ফল (প্রতীকী)। মনে করি, শিক্ষার্থী হলো ফুল ও ফল রাখার ঝুড়ি (প্রতীকী)।

শিক্ষক হলেন ঝুড়ি বহনকারী এবং ফুল ও ফল সংগ্রহকারী। তিনি ট হতে ঠ গন্তব্যে পৌঁছানো পর্যন্ত যে কয়টি ফুল ও ফল (ব্যক্তি আচরণের মূল্যবোধসমূহ উন্মেষ সাধন করবেন) ঝুড়িতে রাখবেন সেই কয়টিরই প্রাপ্তি ঘটবে।

অর্থাৎ শিক্ষক ঐ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শিক্ষার্থীর আচরণে যেসকল মূল্যবোধ-সমূহের উন্মেষ সাধনের প্রক্রিয়া গ্রহণ করবেন শেষে সেই সকল মূল্যবোধসম্পন্ন আচরণশীল ব্যক্তিরই প্রাপ্তি ঘটবে। অন্যথা নয়। আমাদের অবশ্যই বিবেচনায় নিতে হবে একটা পর্যায পর্যন্ত শিক্ষার্থী হলো শূন্য পাত্র সমতুল্য। তার সেই শূন্য পর্যায় হতে তার মানসপটে কাক্সিক্ষত গুণ বা মূল্যবোধসমূহ পর্যায়ক্রমে জাগ্রত করে তুলতে শিক্ষককে কৌশল গ্রহণ করতে হয়। মূল্যবোধসমূহ উন্মেষের সেই প্রয়োজনীয় কৌশলই হলো-’’শিক্ষাদান প্রক্রিয়া।’’ যাকে আমরা প্রক্রিয়াজাত শিক্ষাদানব্যবস্থা বলে উল্লেখ করতে পারি। (মূলত: উক্ত কারণেই শিক্ষাকে জাতির মেরুদন্ড বলা হয়।)

যে শিক্ষাব্যবস্থা ব্যক্তি আচরণে জাতির মেরুদণ্ড গঠনের মূল্যবোধসমূহের উন্মেষ সাধনের ’’শিক্ষাদান প্রক্রিয়া’’ গৃহিত হয় না সেই শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড এমন দাবি গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। অথবা আমরা বলতে পারি যে শিক্ষাব্যবস্থা শিক্ষার্থীর মানসপটে কাঙ্খিত গুণ বা মূল্যবোধসমূহ পর্যায়ক্রমে জাগ্রত করে তুলতে প্রয়োজনীয় কৌশল গ্রহণ করে না সেই শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড গঠন করে এমন দাবি গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

প্রশ্ন ছিল সুবৃহৎ রাষ্ট্রীয় পরিমণ্ডলে ব্যক্তি মানুষকে রাষ্ট্রের কাঙ্খিত আচরণ সক্ষম করে তোলার উপায় কী? উপরিউক্ত আলোচনাসমূহের প্রেক্ষিতে প্রতিয়মান হয় একমাত্র উপায় হলো- শিক্ষাব্যবস্থাকে যথাযথ প্রক্রিয়াজাত করে শিক্ষাদান করা। অর্থাৎ ব্যক্তি সমষ্টিকে ’’প্রক্রিয়াজাত শিক্ষাদানব্যবস্থার আওতাভুক্ত বা বৃত্তভুক্ত করে শিক্ষাদান করা।’’ (চলবে) পূর্ব লেখাঃ

ব্যক্তি আচরণের মানবিক ও নৈতিক মূল্যবোধসমূহ