করোনাকালে মানবতার সেবায় নড়াইল যুব রেডক্রিসেন্টের একদল স্বেচ্ছাসেবক

788
1
করোনা মোকাবেলায় নড়াইলে নিরলস কাজ করছে রেডক্রিসেন্টের স্বেচ্ছাসেবী দল
করোনা মোকাবেলায় নড়াইলে নিরলস কাজ করছে রেডক্রিসেন্টের স্বেচ্ছাসেবী দল

স্টাফ রিপোর্টার

করোনাকালে মানবতার সেবায় অবিরাম ছুটে চলেছে নড়াইল যুব রেডক্রিসেন্টের একদল স্বেচ্ছাসেবক। রেডক্রিসেন্টের হটলাইনে ফোন আসলেই দিন-রাত ২৪ ঘন্টাই ছুটে যাচ্ছেন করোনা রোগীর পাশে। কখনো এ্যাম্বুলেন্স সেবা, কখনো অক্সিজেন সেবা, আবার কখনো ত্রাণ নিয়ে ছুটে যাচ্ছেন। জীবনের ঝুকি নিয়ে সেবার বিনিময়ে পাচ্ছেন মানষিক তৃপ্তি ও রোগীর স্বজনদের ভালবাসা। আর এতেই খুশি যুব রেড ক্রিসেন্টের সদস্যরা।

যুব রেড ক্রিসেন্টের স্বেচ্ছাসেবক দলে রয়েছে শামীম, বাবর, চৈতী, অমিত, দেবাশীষ, সারজিল, অভিজিৎ, লিওন, শর্মিষ্ঠা, শক্তি, হোসাইন, অধরা, তিথি, প্রীতি, রেবা, দীপ, আকাশ, শিপন, রিয়াদ, তাজমা, সিনথিয়া, সুমী, সুমী কর্মকার, জীবন, সবিদ, সাদিয়া, মৌলী সহ মোট ২৮ জন। এদের মধ্যে ১২ জন মেয়ে এবং ১৬ জন ছেলে। । বেশীরভাগ স্বেচ্ছাসেবকের বয়স ২০বছরের নীচে এবং সবাই শিক্ষার্থী। অধিকাংশ স্বেচ্ছাসেবক উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থী। টীম লিডারের দায়িত্বে রয়েছেন শামীম আহম্মেদ শুভ।

করোনাকালে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এখন পড়াশোনার চাপ নেই। তাই করোনার এই সংকটময় মুহুর্তে মানবতার সেবায় রেড ক্রিসেন্ট নড়াইল ইউনিটের অধীন যুব রেড ক্রিসেন্টে যোগ দিয়ে এরা নেমেছে মানব সেবায়। করোণাকালে মানব সেবাই যেন এদের প্রধান কাজ। দিন রাতে খুব বেশী পার্থক্য নেই এদের কাছে। তবে মেয়ে স্বেচ্ছাসেবকরা, জরুরী প্রয়োজন ছাড়া রাতে অফিসের বাইরের বের হয় না।
গত বছর থেকেই করোনা প্রতিরোধে জনসাধারণেল মাঝে মাস্ক, স্যানিটাইজারসহ কোভিড-১৯ স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ, প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে আসছেন।
এবছর লকডাউনে অসহায়, কর্মক্ষম ও ভামসান শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে রান্না করা খাবার বিতরণ, বিনামূল্যে রোগীর বাড়িতে যেয়ে অক্সিজেন সেবা প্রদান, অক্সিজেন ফুরিয়ে গেলে সেটা পরিবর্তন করা, বিভিন্ন লোকসমাগমের স্থানে গিয়ে সচেতনতার জন্য প্রচার-প্রচারণা কার্যক্রম সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত রেড ক্রিসেন্ট অফিসে বিনাসুল্যে টিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মাঝে সচেতনতামূলক প্রচার ও চিকিৎসককে সহায়তা করা ও বিনামূল্যে এ্যাম্বুলেন্সে রোগী বহন করে চলেছে।

যুব রেড ক্রিসেন্ট ইউনিটের টীম লিডার শামীম আহম্মেদ শুভ বলেন, ‘ এই মুহুর্তে নড়াইল রেড ক্রিসেন্ট ইউনিটের এ্যাম্বুলেন্স সেবা ও অক্সিজেন সেবার চাহিদা খুবই বেশি। করোনায় আক্রান্তদের অনেকেই বাড়ীতে অবস্থান করছেন। শ্বাসকষ্ট হলেই অক্সিজেনের প্রয়োজন হচ্ছে। এমতাবস্থায় নড়াইল রেডক্রিসেন্ট ইউনিটের মোবাইল নম্বরে (হট লাইন) ফোন দিলেই আমরা যুব রেডক্রিসেন্ট সদস্যরা অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে বাসায় হাজির হচ্ছি। রোগীর অক্সিজেন লেবেল পরিমাপ করে অক্সিজেন সেট করে দিয়ে আসছি। এছাড়া অক্সিজেন ফুরিয়ে গেলে পুনরায় সিলিন্ডার নিয়ে সেট করে দিয়ে আসছি। তাছাড়া এ্যাম্বুলেন্স নিয়ে দিন-রাত ২৪ঘন্টা সেবা দিয়ে যাচ্ছি। অসুস্থ্য করোনা রোগীকে বাসা হতে হাসপাতালে ভর্তি আবার হাসপাতাল থেকে যশোর, খুলনা সহ বিভিন্ন স্থানে হাসপাতালে আনা-নেওয়া করতে হচ্ছে। করোনা রোগীকে বহনের সময় অক্সিজেন লেবেল কম থাকায় অতিরিক্ত ২/৩টি অক্সিজেন সিলিন্ডার সঙ্গে নিতে হচ্ছে।’

স্বেচ্ছাসেবক অভিজিৎ বলেন, সারাদিন কাজ করে রাতেও আমরা পালাক্রমে অফিসের মেঝেতে শুয়ে থাকি। রাতে মানুষের প্রয়োজন হয়। রাত ১২টার পরেও ফোন আসলে সেখানে অক্সিজেন সেবা ও এ্যাম্বুলেন্স সেবা নিয়ে দৌড়াতে হয়। তাই আমরা বাড়ি না গিয়ে অফিসেই রাত্রিযাপন করি।’

আরেক যুব রেড ক্রিসেণ্ট কর্মী চৈতী বলেন, এই দু:সময়ে মানুষকে সহযোগিতা করতে পেরে আমরা নিজেদের ধন্য মনে করছি। আমাদের আঙ্কেলরা বিশেষ করে জেলা ইউনিটের সভাপতি সোহরাব হোসেন বিশ্বাস ও সাধারণ সম্পাদক কাজী ইসমাইল হেসেন লিটন আমাদের একাজে সহযোগিতা ও অনুপ্রেরণা দিয়ে যাচ্ছেন। অন্য যুব কর্মীরাও খুব সহমর্মী, এ পর্যন্ত ছেলে মেয়ে একসাথে কাজ করতে যেয়ে কোন বিব্রতকর অবস্থার সম্মুখীন হতে হয়নি।’

রেড ক্রিসেণ্ট নড়াইল ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক কাজী ইসমাইল হোসেন লিটন বলেন, এরকম এক ঝাক তরুণ কর্মী পেয়েছি বলে রেড ক্রিসেন্টের কর্মসূচী সফল করতে পারছি। তাদের হাতে কিছু অর্থ দিতে পারলে ভালো হত। মে মাসে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান তাদের সকলের জন্য ১০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন, জেলা প্রশাসক মহোদয় দুএকদিনের মধ্যে তাদের আর্থিক সহযোগিতা করবেন বলে জানিয়েছেন।
এদিকে স্বেচ্ছাসেবকদের প্রশংসনীয় কাজে মুগ্ধ হয়ে আমেরিকা প্রবাসী নেওয়াজ মাহমুদ ভিকু গত সপ্তাহে উপহার দিয়েছেন। নেওয়াজ মাহমুদ ভিকু বলেন, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির স্বেচ্ছাসেবকরা কোন স্বার্থ ছাড়াই দিন-রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। তাদের জন্য আমি সামান্য উপহার পাঠিয়েছি। আশা করি তাদের কাজের আগ্রহ বাড়বে।’

নড়াইল জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, ‘ যুব রেড ক্রিসেন্টের স্বেচ্ছাসেবকরা মানবতার সেবায় কাজ করে চলেছে। এই সংকটময় মুহুর্তে তাদের কার্যক্রম প্রশংসনীয়। তাদের যাতায়াতের জন্য অর্থের প্রয়োজন হয়। আমি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদেরকে কিছুটা সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছি। আশা করি তাদের এই সেবামুলক কাজে আরো গতি বাড়বে। পাশাপাশি জীবনের ঝুকি নিয়ে তাদেরকে সেবামুলক কাজে অংশ নেওয়ার অনুমতি দেওয়ায় অভিভাবকদের প্রতি ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আসুন আমরা সবাই মিলে কোভিড-১৯ মোকাবেলা করি।’