উন্নত দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় বিশেষ লক্ষণীয়; শিক্ষকের ব্যক্তি বৈশিষ্ট্য ও তার যোগ্যতার গুরুত্ব

806
53
উন্নত দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় বিশেষ লক্ষণীয়; শিক্ষকের ব্যক্তি বৈশিষ্ট্য ও তার যোগ্যতার গুরুত্ব
উন্নত দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় বিশেষ লক্ষণীয়; শিক্ষকের ব্যক্তি বৈশিষ্ট্য ও তার যোগ্যতার গুরুত্ব

মীর আব্দুল গণি, জার্মানি প্রবাসী

উন্নত দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় বিশেষ লক্ষণীয়
শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় নিলে প্রথমেই বিবেচনায় নিতে হবে ব্যক্তির মৌলিক শিক্ষার বিষয়সমূহকে। (মৌলিক শিক্ষার বিষয় মূলত: সার্বজনীন শিক্ষার বিষয়। বলা যায় অনেক বিষয়ের শিক্ষা সবার জন্য বাধ্যতামূলক। অর্থাৎ অনেক বিষয় আছে যা সবাইকে বাধ্যতামূলক শিক্ষা দিতে হয়।) উন্নত দেশের শিক্ষাদান ব্যবস্থা পর্যালোচনা করলে স্পষ্ট দেখা যায়-

শিক্ষিত বলতে যে মূল্যবোধসম্পন্ন ব্যক্তির আচরণ বুঝায় উক্ত মূল্যবোধসমূহ অর্থাৎ সর্বজনীন (মৌলিক) শিক্ষার বিষয়সমূহ প্রক্রিয়াজাত শিক্ষাদানের মাধ্যমে শিক্ষা-জীবনের শুরু হতে একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই শিক্ষা দিয়ে থাকে। উদাহরস্বরূপ অতি জরুরি ও সহজ এক-দুটি বিষয় উল্লেখ করব।

যেমন- একটা বয়সে সাঁতার শিখানোর জন্য মা-বাবাকে তাগিদ দেওয়া হয় এবং শিখিয়েছেন জেনে স্কুল কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত হন। ট্রাফিক নিয়ম মেনে কীভাবে রাস্তায় চলতে ও সাইকেল চালাতে হয় কিন্ডারগার্টেনেই শিশুদেরকে এ ব্যাপারে শিক্ষা দেওয়াসহ পরীক্ষা নেওয়া হয়। (ট্রাফিক আইনের প্রতি অনুগত ও উৎসাহিত করার জন্য সাইকেল চালনোর লাইসেন্সও শিশুদেরকে দেওয়া হয়।) বাধ্যতামূলক পড়ালেখা শেখার সময়ের মধ্যেই ব্যক্তির মৌলিক শিক্ষার বিষয়সমূহে পরিপূর্ণরূপে এবং শিক্ষার্থীকে (ইচ্ছাকৃত) পেশাগত বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া হয়।

উক্ত কারণে দেখা যায়, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় একে অপরের সমতুল্য না হলেও নাগরিক আচরণে সবাই সমমানের হয়ে থাকেন। এবং প্রত্যেকেই
পেশাগত নিশ্চয়তা পেয়ে থাকেন।

৯। শিক্ষকের ব্যক্তি বৈশিষ্ট্য ও শিক্ষাদানে তার যোগ্যতার গুরুত্বঃ মানুষ হিসাবে শিক্ষকের ব্যক্তি-বৈশিষ্ট্য কেমন হবে তা বিবেচনায় নেওয়া একান্ত প্রয়োজন। শিক্ষকের ব্যক্তি বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে প্লেটোরেপাবলিকে উল্লেখ করেছেন- এমন গুণগত শিক্ষার দায়িত্ব কাদের দেওয়া হবে- “এদের মেজাজ হতে হবে মহৎ ও উদার এবং এদের মধ্যে এমন সহজাত গুণ থাকতে হবে যে গুণ তাদের শিক্ষাকে সহজ করে তুলবে।” (প্লেটো, রিপাবলিক, পৃ. ৩৬২)

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন- “বিদ্যা যে দেবে এবং বিদ্যা যে নেবে তাদের উভয়ের মাঝখানে যে সেতু সেই সেতুটি হচ্ছে ভক্তি স্নেহের সম্বন্ধ। সেই আত্মীয়তার সম্বন্ধ না থেকে যদি কেবল শুষ্ক কর্তব্য বা ব্যবসায়ের সম্বন্ধ থাকে তাহলে যারা পায় তারা হতভাগ্য, যারা দেয় তারাও হতভাগ্য।” (জনকণ্ঠ হতে, ২৬.০১.১১) উল্লিখিত বাণীসমূহে দেখা যায়, মনীষীগণও গুরুত্ব আরোপ করেছেন- শিক্ষক হবেন বিশেষ বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত বিশেষ ব্যক্তি।

শিক্ষাদানে শিক্ষকের যোগ্যতার গুরুত্ব : শিক্ষাদানে শিক্ষকের যোগ্যতা হলো- শিক্ষাদান-প্রক্রিয়ার মূল উপাদান। যার যোগ্যতার উপর সমগ্র ব্যবস্থাটির সাফল্য নির্ভর করে। শিক্ষকের যোগ্যতার গুরুত্ব বুঝতে সহজ হবে যদি আমরা বস্তুগত অবয়বের নকশা বাস্তবায়নে নির্মাণ কর্মীর যোগ্যতার গুরুত্ব অনুধাবন করি। নির্মাণ কর্মী যথাযথ যোগ্য না হলে কোনো নির্মাণই যেমন নকশা-সম্মত ও মানসম্পন্ন হবে না তেমনি যথাযথ যোগ্য শিক্ষক না হলে মানুষ গড়া তথা সত্তার কাঙ্খিত আচরণ গঠন সম্ভব হবে না।

শিক্ষকের যোগ্যতার বৈশিষ্ট্য : শিক্ষকের যোগ্যতার বৈশিষ্ট্য বুঝতে সহজ হবে যদি কারিগরের যোগ্যতার বৈশিষ্ট্য আলোচনা করা হয়। কারিগর হলেন তিনি যিনি কোনো গড়ন বা গঠনে কাঙ্খিত আকার দানে সক্ষম। শিক্ষকের সক্ষমতা হলো কাঙ্খিত মানসিক গঠনদানে যেসকল প্রক্রিয়াগতশর্ত যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হয় সেই সকল প্রক্রিয়াগত শর্তসমূহ জানা ও তা যথাযথ অনুসরণের সক্ষমতা। প্রক্রিয়া অনুসরণের প্রয়োজনীয়তা প্রচলিত একটি বাক্যে তুলে ধরা যায়।

যেমন- (‘হিট দা আইরন হোয়েন ইট ইজ রেড।) লৌহখণ্ড যখন তপ্ত তখন (সময়ের গুরুত্ব), আঘাত কর- (উদ্দেশ্য)- আকার দাও। উপরিউক্ত বাক্যটি গড়ন ও গঠনে কারিগরের প্রক্রিয়া অনুসরণের গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে। অর্থাৎ শুধু আঘাত করলেই হবে না, যথাসময় ও প্রত্যাশিত নকশা জ্ঞাত হতে হবে। মানুষ গড়া মূলত ব্যক্তি সত্তায় কাঙ্খিত মানসিক গঠনদান।

যে গঠনের বৈশিষসত্তার অন্তস্থ অদৃশ্য মনোজগতের এক নিখুঁত নকশা-শৈলীর কাঙ্খিত গঠনদান। অর্থাৎ সত্তার আঁধারে সুপ্ত বা ঘুমন্ত সক্ষমতাকে কাঙ্খিত পর্যায়ে সুশৃঙ্খলভাবে জাগ্রত করে তোলা। মূলত যা জটিল প্রক্রিয়ানির্ভর। উক্ত জটিল প্রক্রিয়া যিনি জানেন তিনিই হলেন মানুষ গড়ার কারিগর।

শিক্ষক কাঙ্খিত মানসিক গঠনের প্রক্রিয়াগত শর্তানুসরণে সক্ষম এমন ধারণার কারণেই শিক্ষককে মানুষ গড়ার কারিগর বলে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। উপরিউক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে আমরা উল্লেখ করতে পারি- কারিগরের বৈশিষ্ট্য হলো- ‘গড়ন বা গঠনে কাঙ্খিত আকার দানের যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণের সক্ষমতা।’ শিক্ষকের বৈশিষ্ট্য হলো-’’সত্তার আঁধারে সুপ্ত বা ঘুমন্ত সক্ষমতাকে কাঙ্খিত পর্যায়ে সুশৃঙ্খলভাবে জাগ্রত করে তোলার সক্ষমতা।’’ (চলবে) পূর্ব লেখাঃ

জার্মানির কিন্ডারগার্টেন ব্যবস্থার লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্যসমূহ