স্টাফ রিপোর্টার
নড়াইলের কালিয়া উপজেলার চাঁচুড়ী পুরুলিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে টিকা প্রদানের রেজিস্ট্রেশন এবং টিকা কেন্দ্রে যাতায়াত খরচ বাবদ মাথাপিছু ১০০ টাকা করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রধান শিক্ষক আশরাফুল ইসলামের বিরুদ্ধে। এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত উপজেলার প্রায় ১৯ হাজারের অধিক জন শিক্ষার্থীর মধ্যে করোনার টিকা দেওয়া হয়েছে।
এতে প্রথম পর্যায়ে ৬ জানুয়ারি ৬ষ্ঠ থেকে এসএসসি-২০২১ পরীক্ষার্থীদের নড়াইল নার্সিং ইনস্টিটিউট টিকা কেন্দ্রে উপজেলার চাঁচুড়ী পুরুলিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রায় সহস্রাধিক শিক্ষার্থীর টিকা নেওয়ার নির্ধারিত তারিখ ছিল। এজন্য ৫ জানুয়ারি প্রধান শিক্ষক আশরাফুল ইসলাম ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী সকল শিক্ষার্থীকে তাদের জন্মনিবন্ধনের দুই কপি ফটোকপিসহ ১০০ টাকা করে নিয়ে বিদ্যালয়ে হাজির হওয়ার জন্য বিশেষভাবে নির্দেশ প্রদান করেন।
এরপর ওইসব শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাদ পড়াদের ১২ জানুয়ারি তারিখে টিকা প্রদান করা হয়। এজন্য ১১ জানুয়ারি তাদের নিকট থেকেও প্রধান শিক্ষক আশরাফুল ইসলাম জন্মনিবন্ধনের দুই কপি ফটোকপিসহ ১০০ টাকা করে রেজিস্ট্রেশন ও যাতায়াত খরচ বাবদ গ্রহণ করেন।
চাঁচুড়ী গ্রামের শিক্ষার্থী সাজিদ মোল্যা, রকিবুল ইসলাম রাতুল, খাদিজা,চাপুলিয়া গ্রামের শিক্ষার্থী লামিয়া,মিতুন জিরা,ববিতা,সাদিকুর নাহার তমা ও মারিয়াসহ একাধিক শিক্ষার্থী জানায়, ৫ জানুয়ারি প্রধান শিক্ষক আশরাফুল ইসলাম বিদ্যালয়ের অধ্যয়নরত প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ১০০ টাকা নিয়ে বিদ্যালয়ে হাজির হতে বলেন। করোনা টিকার রেজিস্ট্রেশনের জন্য এবং টিকাকেন্দ্রে যেতে যাতায়াত খরচ বাবদ ওই টাকা লাগবে বলে জানানো হয়। প্রধান শিক্ষকের নির্দেশনা অনুযায়ী সব শিক্ষার্থীরা রেজিস্ট্রেশনের জন্য নির্ধারিত তারিখে টাকাসহ লাইনে দাঁড়ানোর পর শিক্ষকরা টাকা নেয়।
ওই বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থীর অভিযোগ, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অনেকের নিকট থেকে করোনার টিকার রেজিস্ট্রেশনের নামে ১০০ টাকা করে আদায় করেছেন। ঘটনা আঁচ করতে পেরে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আশরাফুল ইসলাম ১০০ টাকা করে শিক্ষার্থীর জন্য যাতায়াত খরচ বলে চালিয়ে দেন। অথচ শিক্ষার্থীদেরকে জেল খানার কয়েদিদের মতো গাদাগাদি করে নিন্মমানের বাস ভাড়া করে টিকাকেন্দ্রে নিয়ে যান। এতে নামমাত্র টাকা ব্যয় করে বাকি টাকা তিনি আত্মসাত করেছেন।
অভিযোগের বিষয়ে চাঁচুড়ী পুরুলিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আশরাফুল ইসলাম ১০০ টাকা নেওয়ার অভিযোগ স্বীকার করে যুগান্তরকে বলেন,‘শিক্ষার্থীদের টিকাকেন্দ্র যাতায়াতের জন্য খরচ বাবদ মাথা পিছু ১০০ টাকা করে নেয়া হয়েছে। টিকা গ্রহণের জন্য টাকা নেওয়ার নিয়ম আছে কিনা জানতে চাইলে এড়িয়ে যান তিনি।’
কালিয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ শাহাজান মিয়া বলেন, ‘টিকাকেন্দ্রে যাতায়াত খরচ নেয়ার বিষয়ে সরকারিভাবে আমাদের কাছে কোন নির্দেশনা আসেনি। আমরা এটা নেয়ার ব্যাপারে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকেও এ ধরণের কোন নির্দেশনা দেয়নি। প্রকৃতপক্ষে বিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থাপনা কমিটি শিক্ষার্থীদের টিকা কেন্দ্রে যাতায়াতের ব্যবস্থা নিশ্চিত করবেন। বিধায় টিকা রেজিস্ট্রেশন বা টিকাকেন্দ্রে যাতায়াত খরচ কিংবা ভিন্ন কোন নামে টাকা আদায়ের নিয়ম নেই। সুতরাং টিকা দেওয়ার অজুহাতে কেউ টাকা আদায় করতে পারেন না। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো.আরিফুল ইসলাম এ ব্যাপারে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে বলেন, ‘বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে টিকা রেজিস্ট্রেশন বা টিকা নেওয়ার জন্য যাতায়াত খরচ কিংবা ভিন্ন নামে কোন প্রকার টাকা আদায়ের নিয়ম নাই। লিখিত অভিযোগ পেলে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।’