নিজস্ব প্রতিবেদক
নড়াইলে শেখহাটী বাজারের কাছে আফরা এলাকায় বুড়ি ভৈরব নদের ওপর সেতুর অভাবে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। যাতায়াত সুবিধার জন্য নিজস্ব অর্থায়নে স্বেচ্ছাশ্রমে নদীটির ওপর নির্মিত বাঁশের সেতু দিয়ে সদর উপজেলার শেখহাটি ইউনিয়নের আটটি এবং যশোর সদর উপজেলার বসুন্দিয়া ইউনিয়নের আটটি গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে।
এলাকাবাসী জানায়, ভৈরব নদের উভয় পারের স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ নদী পারাপারে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছিলেন। শেখহাটি এলাকার অনেক শ্রমিককে নদীর পশ্চিম পারের যশোরের নওয়াপাড়া ও বসুন্দিয়া এলাকায় শিল্প-কারখানায় কাজ করে অনেক রাতে বাড়ি ফিরতে খেয়া নৌকার অপেক্ষায় থাকতে হতো। এলাকাবাসীর কষ্টের কথা ভেবে শেখহাটি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান সেলিম রেজা ওরফে মাসুম গাজী সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে অনেক দেনদরবার করেও ব্যর্থ হন। অবশেষে ২০১২ সালে নিজের প্রায় দেড় লাখ টাকায় ইউনিয়নের আফরা এলাকায় বুড়ি ভৈরব নদের ওপর কাঠ ও বাঁশ দিয়ে ১০০ ফুট দীর্ঘ ও ২০ ফুট প্রশস্ত একটি সেতু নির্মাণ করা হয়। তবে অতিরিক্ত চাপের কারণে কিছুদিনের মধ্যেই বাঁশের সেতুটি ভেঙে পড়ে।
এরপর জোড়াতালি দিয়ে কোনো রকমে কাজ চালানো হচ্ছে। মাঝে মাঝে এলাকাবাসীর স্বেচ্ছাশ্রমে মেরামত করা হলেও বর্তমানে বাঁশের সেতুটির অবস্থা জরাজীর্ণ। সেতুর অনেক জায়গায় বাঁশ কাঠ পচে নষ্ট হয়ে গিয়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে এবং সেতুটি হেলে পড়েছে। কাঠের পাটাতন ও বাঁশের লম্বা বাতার ভাঙা অংশে পড়ে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। সেতুর উপর কোন মানুষ কিংবা যানবাহন উঠলেই দুলতে থাকে। বাঁশের সেতুটি যে কোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে। তবুও এ সেতু দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৪/৫ হাজার মানুষ চলাচল করছে। নির্মিত বাঁশের সেতুটি যে কোন মূহুর্তে নদীগর্ভে বিলিন হয়ে যেতে পারে এমন আশঙ্কা এলাকাবাসীর।
সরেজমিনে দেখা যায়, কাঠ ও বাঁশ দিয়ে তৈরি প্রায় ১০০ ফুট দীর্ঘ সেতুটির দুই পাশে রেলিং নেই। কংক্রিটের দুইটি পিলার ভেঙ্গে গেছে; বাকি পিলারগুলো হেলে পড়েছে। সেতুর কাঠ এবং বাঁশের পাটাতনের বিভিন্ন স্থান ভেঙে গেছে। সেটি উঁচু-নিচু অবস্থায় আছে। লোকজন উঠলেই সেটি দোলে। সেতুর ওপর দিয়ে ভ্যান ও মোটরসাইকেলসহ লোকজন ভয়ে ভয়ে নিয়ে চলাচল করছে।
আফরা গ্রামের বাসিন্দা সাধন বিশ্বাস বলেন, ‘নদীর পশ্চিম পারের যশোর অংশে প্রায় ৮/১০ গ্রামের অসংখ্য কৃষকের কৃষি জমি রয়েছে পূর্বপারে অর্থ্যাৎ নড়াইল অংশে। যে কারণে সেতুর ওপর দিয়ে উভয় পারের কৃষকেরা বিভিন্ন কৃষিপণ্য আনা-নেওয়া করেন। এছাড়া স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়েসহ অসংখ্য মানুষ আসা-যাওয়া করেন এই সেতু দিয়ে।’
আফরা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবির ইসলাম ও সুমনা বলেন‘ আমাদের ঝুঁকি নিয়ে নদীর এপার-ওপারে যেতে হয়। আগে স্কুলে যেতে দুটি খেয়া নৌকা পার হতে হতো। এখন নৌকা পারের ঝামেলা না থাকলেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাঁশের সেতু পার হতে হচ্ছে। অনেকে প্রায়ই সাইকেল নিয়ে যাওয়ার সময় পানিতে পড়ে যায়।’
স্থানীয় জগন্নাথপুরের বাসিন্দা ও বিকেবি নড়াইল শাখার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আহাদ আলী খান যুগান্তরকে বলেন, ‘আমি খুব কম সময়ে সেতু দিয়ে নিয়মিত অফিস করি। কিন্তু সেতুটির নড়বড়ে অবস্থা হওয়ায় মোটরসাইকেল নিয়ে ভয়ে পার হতে হয়।’
শেখহাটি ইউপি চেয়ারম্যান গোলক বিশ্বাস বলেন, ‘মাঝে সেতু ভেঙ্গে গেলে আমরা নিজ উদ্যোগে বাঁশ দিয়ে মেরামত করে কোনরকম চলাচলের ব্যবস্থা করেছি। দুই জেলার সীমান্তবর্তী নদীর ওপর সেতু নির্মাণের বিষয়টি অত্যন্ত জনগুরুত্বপূর্ণ। এর আগে নড়াইল স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরে লিখিতভাবে আবেদন করেছি। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।’
জানতে চাইলে এলজিইডির নড়াইল সদর উপজেলা প্রকৌশলী মো. জহীর মেহেদী হাসান বলেন, ‘সেতুটি নড়াইল ও যশোরের মানুষের মধ্যে মেলবন্ধন হিসেবে কাজ করে। বুড়ি ভৈরব নদের ওপর সেতু নির্মাণের জন্য স্থানীয় চেয়ারম্যানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। অর্থ বরাদ্দ পাওয়া গেলে সেতুটি নির্মাণ করা সম্ভব হবে।