স্টাফ রিপোর্টার
দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত নড়াইল জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সাবেক পৌরমেয়র অ্যাডভোকেট সোহরাব হোসেন বিশ্বাসকে অপসারন করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয়। স্থানীয় সরকার বিভাগ। জেলা পরিষদ শাখা থেকে রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে উপসচিব মোহাম্মদ তানভীর আজম ছিদ্দকী ৩০ মার্চ প্রজ্ঞাপন স্বাক্ষর করেন। প্রজ্ঞাপনে স্মারক নং- ৬.০০.৬৫০০.০৪২.২৭.০০২.১৭.৫০৮।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সোহরাব হোসেন বিশ্বাস, পিতা মৃত নুর হোসেন বিশ্বাস গ্রাম কুড়িগ্রাম, ডাকঘর রতনগঞ্জ, নড়াইল। নড়াইল পৌরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান এবং জেলা পরিষদ নড়াইল এর বর্তমান চেয়ারম্যান। যেহেতেু তার বিরুদ্ধে ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি দমন প্রতিরোধ আইনে দায়েরকৃত বিজ্ঞ স্পেশাল জজ (জেলা ও দায়রা জজ)আদালতে দায়েরকৃত স্পেশাল মামলা নং-১২/২০০৯ মুলে দন্ডবিধির ৪০৯/১০৯ ধারার অপরাধের অভিযোগ সন্দেহতিতভাবে প্রমানিত হওয়ায় ৫ বছরের সশ্রম কারাদন্ড এবং ১০ হাজার টাকা অর্থদন্ড অনাদায়ে আরও ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা হয়।
জেলা পরিষদ আইন, ২০০০ এর ধারা ১০ এর উপধারা (১)(গ) তে উলে¬খ্য করা হয়, চেয়ারম্যান বা কোন সদস্য তাহার স্বীয় পদ হইতে অপসারন যোগ্য হইবেন, যদি তিনি-(গ) দুর্নীতি বা অসদাচারন বা নৈতিক স্থলনজনিত কোন ফৌজদারী অপরাধে দোষী সাবস্ত হইয়া আদালত কর্তৃক দন্ডপ্রাপ্ত হন।
জেলা পরিষদ আইন, ২০০০ এর ধারা ১০ এর উপধারা (১)(গ) অনুযায়ী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন বিশ্বাসকে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদ হতে অপসারন করা হলো। যথাযথ কর্তৃপক্ষে অনুমোদনক্রমে এ আদেশ জারি করা হলো। এ ব্যাপারে অব্যাহতি পাওয়া জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সোহবাব হোসেনকে ফোন করলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন বিশ্বাসকে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদ হতে অপসারনের চিঠি পাওয়ার বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন। এর আগে গত ১মার্চ হাইকোর্ট থেকে তিনি জামিন পান। উল্লেখ্য, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি দুনীর্তির মামলায় নড়াইল পৌর সভার সাবেক মেয়র বর্তমান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সোহরাব হোসেন বিশ্বাসসহ ১১জনকে ৫ বছর করে কারাদন্ড ও ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করে আদালত।
সাজাপ্রাপ্ত অন্য আসামীরা হলেন, সাবেক কাউন্সিলর খন্দকার আল মনসুর বিল্লাহ, সাবেক কাউন্সিলর আহম্মদ আলী খান, সাবেক কাউন্সিলর তেলায়েত হোসেন, ইজারাদার রফিকুল ইসলাম, ইজারাদার রাধে কুন্ডু, ইজাজুল হাসান বাবু, ইজারাদার জিলুর রহমান, ইজারাদার এইচএম সোহেল রানা, তৎকালিন পৌর সচিব শফিকুল আলম, সাবেক সহকারী প্রকৌশলী ওয়াজিহুর রহমান।
মামলার অভিযোগে জানা গেছে, আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে আসামিরা হাট বাজার ইজারা দেয় ১৪১২(বাংলা) সালে। আসামিরা নড়াইল পৌরসভার রূপগঞ্জ সাধারণ হাট ও নড়াইল বাস টার্মিনাল ইজারা দিয়ে ৭ লাখ ৮১ হাজার ২০ টাকা ও ১৪১১ সালে একই হাট ৪ লাখ ৪১ হাজার টাকা আদায় করে। সর্বমোট ১২ লাখ ২২শ ৮০ টাকা পৌরসভায় জমা না দিয়ে তারা আত্মসাৎ করে। এব্যাপারে দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত যশোর জেলা কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক ওয়াজেদ আলী গাজী দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে ২০০৮ সালের ৭ আগস্ট নড়াইল সদর থানায় মামলা করেন। এ মামলার তদন্ত শেষে তদন্ত কারী কর্মকর্তা সহকারি পরিচালক ওয়াজেদ আলী গাজী পৌর মেয়র, কাউন্সিলর, ইঞ্জিনিয়ার সচিবসহ১১ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট জমা দেন।
পরবর্তিতে মামলাটি বিচারের জন্য স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল জজ আদালতে প্রেরণ করা হয়। এই মামলায় সাক্ষী গ্রহণ শেষে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমানিত হওয়ায় বিচারক প্রত্যেককে ৫ বছর করে সশ্রম কারাদন্ড ও ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা প্রদান করেন। অনাদায়ে ৬ মাস করে সশ্রম কারাদন্ডের আদেশ দেন। একইসাথে আত্মসাৎকৃত ১২ লাখ ২২শ ৮০ টাকার মধ্যে আসামী জিলুর রহমান ১ লাখ ৮৬ হাজার ৬০ টাকা, সোহেল রানা ৩ লাখ ৫২ হাজার ১শ ২০ টাকা, রাধেকুন্ডু ৩ লাখ ৫০ হাজার, রকিবুল ইসলাম ১ লাখ ৮৫ হাজার, ইজাজুল হাসান ১ লাখ ৪৮ হাজার ৯শ টাকা পরিশোধ করবে বলে রায়ে উল্লেখ্য করা হয়।