স্টাফ রিপোর্টার
স্বপ্নের ‘পদ্মা সেতু’র পর এবার উদ্বোধনের অপেক্ষায় দেশের প্রথম ৬ লেনের দৃষ্টি নন্দন কালনা সেতু। ভাগ্য বদলাবে লোহাগড়া-নড়াইলবাসীর। লোহাগড়া উপজেলার ‘কালনা সেতু’র দ্বার উন্মোচন হতে যাচ্ছে আগামি অক্টোবর মাসে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলবাসীর আরেকটি স্বপ্নপূরণ হচ্ছে। সেতুর মূল কাজ শেষ হওয়ার পর এখন ছোটখাটো কিছু কাজ চলছে।
গতকাল সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) সকালে কালনা সেতু এলাকা ঘুরে জানা গেছে, আগামি অক্টোবর মাসেই যানবাহন চলাচলের জন্য সেতু সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত করা হচ্ছে। তবে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে তারিখ ঘোষণা হলেই চূড়ান্ত হবে উদ্বোধনের দিনক্ষণ। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইম্প্রুভমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে কালনা সেতু নির্মিত হয়েছে। কালনা সেতুর প্রকল্প ব্যবস্থাপক এবং সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) নড়াইলের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুজ্জামান বলেন,প্রথম ছয় লেনের সেতু কালনা। নেলসন লোস আর্চ টাইপের (ধনুকের মতো বাঁকা) সেতু এটি। সেতুটির দৈর্ঘ্য ৬৯০ মিটার এবং প্রস্থ ২৭ দশমিক ১ মিটার। উভয় পাশে ছয় লেনের সংযোগ সড়ক প্রায় সাড়ে ৪ কিলোমিটার। সেতু নির্মাণে মোট ব্যয় প্রায় ৯৬০ কোটি টাকা। এশিয়ান হাইওয়ের ওপর অবস্থিত এটি। সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে সিলেটের তামাবিল হয়ে ঢাকা, ভাঙ্গা, নড়াইল, যশোর, বেনাপোল, কোলকাতা পর্যন্ত সরাসরি ভূমিকা রাখবে। তবে এতোদিন কালনা পয়েন্টে মধুমতি নদী দ্বারা বিছিন্ন ছিল। সেতু নির্মাণের ফলে সেই বিছিন্নতা আর রইল না। কালনা সেতু চালু হলে শুধু জাতীয় ক্ষেত্রেই নয়, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে। ভারত, কোলকাতা, আসামসহ দেশের মধ্যে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর, বেনাপোল ও নোয়াপাড়া নদীবন্দরের মধ্যে যোগাযোগের মাইলফলক রচিত হবে। লোহাগড়ার সাথে যোগাযোগের জন্য থাকছে স্থলপথ,নৌপথ ও রেলপথ। ইপিজেড (রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল) চালুসহ ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ও ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। ফলে ভাগ্য বদলাবে লোহাগড়া-নড়াইলবাসীর।
গত ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘কালনা সেতু’র ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। কালনাঘাট থেকে ঢাকার দুরত্ব মাত্র ১০৮ কিলোমিটার। বর্তমান কালনা থেকে ঢাকায় যেতে সময় লাগছে মাত্র দেড় ঘন্টা। পদ্মা সেতু চালুর আগে লাগতো ৭/৮ ঘন্টা ,সময় ভেদে ৩৬ থেকে ৪৮ ঘন্টা। ফলে ঢাকার সঙ্গে নড়াইল, বেনাপোল, যশোর, খুলনাসহ আশেপাশের সড়ক যোগাযোগ কোথাও ১০০ কিলোমিটার, কোথাও আবার ২০০ কিলোমিটার কমে যাবে। তবে ঢাকা থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ‘এক্সপ্রেস ওয়ে’ নির্মাণ করা হলেও ভাঙ্গা থেকে বেনাপোল পর্যন্ত এ ধরণের সড়ক নির্মিত হয়নি। ফলে ‘এক্সপ্রেস ওয়ে’র সুফল পাচ্ছে না দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বড় একটি অংশ। ভাঙ্গা থেকে কালনা-লোহাগড়া-নড়াইল-যশোর-বেনাপোল পর্যন্ত বর্তমানে দুই লেন সড়ক চালু আছে। এই অংশে ‘এক্সপ্রেস ওয়ে’ সড়ক নির্মাণের বিষয়টি প্রকল্পাধীন বলে জানিয়েছেন কালনা সেতুর প্রকল্প ব্যবস্থাপক আশরাফুজ্জামান। তিনি বলেন, কালনা সেতু চালু হলে যানবাহনের চাপ বেড়ে যাবে। তাই আপাতত যশোরের মনিহার সিনেমা হল চত্বর থেকে নড়াইলের কালনাঘাট পর্যন্ত ৫২ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্ত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বর্তমানে সড়কটি ১৮ফুট প্রশস্ত থাকলেও তা বাড়িয়ে ২৪ ফুট করা হবে। দরপত্রের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। দরপত্র অনুমোদন হলে দুই সপ্তাহের মধ্যে ওয়ার্কঅর্ডার দেওয়া হবে। নড়াইল অংশে প্রায় ৪৭ কোটি এবং যশোর অংশে ৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়ক প্রশস্তকরণ করা হবে। এক বছরের মধ্যে কাজ শেষ করা হবে।
নড়াইল জজ কোর্টের আইনজীবী এ্যাড.আব্দুস ছালাম বলেন, পদ্মা সেতুর সঙ্গে কালনা সেতুর অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক রয়েছে। লোকজনের কালনা ফেরিঘাটের অপেক্ষা আর যন্ত্রণা সহ্য করতে হবে না। যাত্রীসাধারণের পাশাপাশি কৃষিপণ্য বেচাকেনার ক্ষেত্রেও সহজ হবে। পাশাপাশি পদ্মা ও কালনাঘাট এলাকায় শিল্প-কলকারখানা গড়ে উঠবে। ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এলাকায়।
লেখক ও সাংবাদিক আকরামুজ্জামান মিলু বলেন, কালনা সেতু চালু হলে যশোর, বেনাপোল, সাতক্ষীরা, মেহেরপুর, মাগুরাসহ পাশের জেলাগুলোর সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বদলে যাবে। খুব সহজেই রাজধানী ঢাকার সঙ্গে যাতায়াত করা যাবে।