একদিনের জন্যও সাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়নি। দু’বছর ধরে রক্ষণাবেক্ষণ ও তদারকির কেউ নেই। এদিকে স্থাপনার দেয়ালে লেখা রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের বিকৃত ইতিহাস।
স্টাফ রিপোর্টার
নড়াইল শহরে দু’বছর পূর্বে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি স্থাপনা নির্মিত হলেও এখন তা ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। এখানে মানুষ মূলমূত্র ত্যাগ করছে এবং পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। এটি নির্মানের পর কখনও জনসাধারনণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়নি। এখানে শিশুদের বিনোদনের জন্য ষ্টিলের দুটি দোলনা, বসার ব্যবস্থা, টয়লেট, বেসিন, পানির ব্যবস্থা, লাইট, চারপাশের বাউন্ডারিসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা থাকলেও এখন তা নষ্ট হবার পথে। বৈদ্যুতিক মটর, লাইটসহ ইলেকট্রিক্যাল অনেক জিনিসপত্র খোয়া গেছে। এদিকে এই স্থাপনার দেয়ালে নড়াইল জেলার মুক্তিযোদ্ধাদের এক সংক্ষিপ্ত ইতিহাস দেওয়া থাকলেও তা অসম্পূর্ণ এবং ভুল।
জানা গেছে, মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক স্থানসমূহ সংরক্ষণ ও মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি যাদুঘর প্রকল্পের আওতায় নড়াইল-গোবরা সড়কের পাশের চিত্রা নদীর তীরে নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের জায়গায় প্রায় ১৫ শতাংশ জায়গার ওপর এ মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি স্থাপনা তৈরী হয়। নড়াইল এলজিইডি বিভাগের তত্ত্বাবধানে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মার্শাল ট্রেডার্স ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০২০ সালের জুন মাসে এ কাজটি সমাপ্ত করে।
এদিকে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি স্থাপনায় নড়াইল জেলার মুক্তিযোদ্ধাদের একটি সংক্ষিপ্ত ইতিহাস দেওয়া থাকলেও তা অসম্পূর্ণ এবং ভুল। এখানে ১নম্বর পয়েন্টে লেখা হয়েছে ‘১৯৭১ সালের ২৯ মার্চ নড়াইল ট্রেজারী ভেঙ্গে অস্ত্র নিয়ে যায় মুক্তিযোদ্ধারা’। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধারা জানিয়েছেন ২৭ মার্চ নড়াইল ট্রেজারি ভাঙ্গা হয়। ২নম্বর পয়েন্টে লেখা হয়েছে ‘৮ই মে ৮জন ও ২৩মে ৪৯জন ইতনা গণহত্যায় শহীদ হন ৫৭জন’ । কিন্তু নড়াইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের অভ্যন্তরে (তৎকালীন ওয়াপদা ভাবন) এই গণকবরের নামফলকে লেখা রয়েছে, ‘২০জুলাই ৮জন মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করা হয়’। লোহাগড়া উপজেলার ইতনা গ্রামে ২৩ মে গণহত্যার নামফলকে ‘স্বাধীনতাকামী ৩৯জন এবং স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আরও ১১শহীদদের নামের তালিকা রয়েছে’। ৪, ৫ ও ৬ নম্বরে লোহাগড়া উপজেলা, কালিয়া উপজেলা এবং নড়াইল মুক্ত দিবসের যে তথ্য দেওয়া হয়েছে তা খন্ডিত ও অসম্পূর্ণ। নড়াইল জজ আদালতের পেছনে চিত্রা নদীর তীরে নড়াইল লঞ্চ ঘাটের পন্টুনের ওপর ৩ হাজারের বেশী মানুষকে জবাই করে চিত্রা নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হলেও এখানে তার কোনো তথ্য নেই। এছাড়া দীর্ঘ ৯মাস জুড়ে জেলায় প্রায় ৩শ মুক্তিযোদ্ধা এবং প্রায় ৬ হাজার মানুষকে হত্যা করা হলেও সে সম্পর্কে কোনো তথ্য নেই। মজার বিষয় হলো কোন বিভাগ থেকে এ তথ্য দেওয়া হয়েছে তা এখানে উল্লেখ নাই।
এ প্রসঙ্গে মার্শাল ট্রেডার্সের স্বত্ত্বাধিকারী এ কাজের ঠিকাদার তরিকুল বিশ্বাস (০১৭৪১-২৭৬৩৬০) বলেন, কাজটি সমাপ্ত হবার ২মাস পর নড়াইল এলজিইডি বিভাগের তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী, উপজেলা প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে কাজটি বুঝে দেওয়া হয়। মুক্তিযুযোদ্ধাদের সংক্ষিপ্ত ইাতহাসের তথ্য কে দিয়েছে এমন প্রশ্নে ঠিকাদার বলেন, তৎকালীন উপজেলা প্রকৌশলীর মাধ্যমে যে তথ্য দেওয়া হয়, তার ভিত্তিতে এটি লেখা হয়েছে ।
এ প্রসঙ্গে নড়াইল এলজিইডি বিভাগের বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী বিশ্বজিৎ কুমার কুন্ডু বলেন, যেহেতু এ প্রকল্প মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের সেহেতু এর তত্ত্বাবধায়ন সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের করা উচিত বলে মন্তব্য করেন।
এ প্রসঙ্গে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদসের ডেপুটি জেলা কমান্ডার (সর্বশেষ কমিটি) অ্যাডভোকেট এস.এ মতিন বলেন, আমি কয়েকদিন ওই স্থানে গিয়ে দেখেছি ময়লা আবর্জনায় ভরে গেছে। আশেপাশের্^র পরিবেশও নষ্ট হচ্ছে। কোন্ বিভাগ এটি নির্মাণ করেছে, কারা এর তত্ত্বাবধায়ন কারা করবে, এখানে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস কে লিখেছে আমরা কিছুই জানিনা, আমি মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শরীফ হুমায়ুন কবীরসহ কয়েক মুক্তিযোদ্ধার সাথে কথা বলেছি, তারা কেউ জানেননা। আমরা বিষয়টি সম্পর্কে সম্পূর্ণ অন্ধকারে। শনিবার (১ অক্টোবর) জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সাথে কথা বলেছি । তিনি বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিয়ে ব্যবস্থা নিবেন বলে জানিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে জানার জন্য জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, রোববার (২অক্টোবর) ও সোমবারের মধ্যে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।