স্টাফ রিপোর্টার
ঢাকা-বেনাপোল ভায়া ভাঙ্গা-লোহাগড়া-নড়াইল-যশোর মহাসড়কের কালনা পয়েন্টে মধুমতি নদীর উপর নির্মিত মধুমতি সেতু চালু হলেও সংশ্লিষ্ট মহাসড়কের কালনা ঘাট থেকে যশোরের মনিহার সিনেমা হল পর্যন্ত অংশটি প্রশস্তকরণের কাজ এখনও শুরু হয়নি। মহাসড়কের এই ৫৩ কিলোমিটার রাস্তার অধিকাংশই ১৮ ফুট প্রশস্ত। বিদ্যমান ১৮ ফুট সড়কের সাথে আরো ৬ ফুট প্রশস্তকরণের সিদ্ধান্ত হলেও তা বাস্তবায়নের কাজ এখনও শুরু হয়নি। ফলে মধুমতি সেতু চালু হলেও এ অঞ্চলের মানুষ এই সেতুর পুরোপুরি সুফল পাচ্ছে না। অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে সংশ্লিষ্ট মহাসড়কে সর্বদা যানজটসহ নানা ভোগান্তি লেগেই আছে।
কালনা সেতুর পশ্চিম পারে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলা এবং পূর্ব পারে গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলা। পদ্মা সেতুর চেয়ে দুই লেন বেশি প্রশস্ত এবং দেশের প্রথম ছয় লেন এই কালনা সেতু চালুর পর লোহাগড়া নড়াইলসহ যশোর সাতক্ষীরা ও বেনাপোল থেকে ঢাকাগামী যানবাহন মাগুরা-ফরিদপুর দৌলতদিয়া আরিচা পার হয়ে যাতায়াতের পরিবর্তে কালনা সেতু পার হয়ে সংক্ষিপ্ত পথেই ঢাকা যাচ্ছে। সঙ্গত কারণেই এই মহাসড়কে কয়েকগুন বেশি যানবাহন চলাচল করছে।
এশিয়ান হাইওয়ে ১ এর অংশ ছয়লেনের দৃষ্টিনন্দন এই সেতু খুলে দেওয়ায় দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলের ১০ জেলার মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। রাজধানী ঢাকার সাথে বিভাগীয় শহর খুলনার দুরত্ব ১২১ কিলোমিটার এবং যশোরের দুরত্ব ১১৩ কিলোমিটার কমে গেছে। দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোল থেকে কালনাসেতু হয়ে ঢাকার দুরত্ব হবে ২০১ কিলোমিটার এবং যশোর থেকে ঢাকার দুরত্ব হবে ১৬১ কিলোমিটার। বিভাগীয় শহর খুলনা থেকে ধলগা বসুন্দিয়া নড়াইল হয়ে ঢাকার দুরত্ব হবে ১৯০ কিলোমিটার। একইভাবে নড়াইলের দুরত্ব মাত্র ১২৫ কিলোমিটার অর্থ্যাৎ কমে গেছে ১৮০ কিলোমিটার। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অধীন ‘ক্রস বর্ডার রোড নেট ওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টে’র আওতায় জাইকার অর্থায়নে এ সেতু নির্মান করা হয়েছে। জাপানের টেককেন কর্পোরেশন ও ওয়াইবিসি এবং বাংলাদেশের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আবদুল মোনেম লিঃ যৌথভাবে সেতু নির্মানের কাজ করেছে।
বাংলাদেশের দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলের নড়াইল ,যশোর, খুলনা, সাতক্ষীরা, বেনাপোল ,কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর জেলাবাসীর কালনা সেতু পার হয়ে পদ্মাসেতুর উপর দিয়ে ঢাকা যাতায়াত সহজ ও সংক্ষিপ্ত হয়েছে। এছাড়া স্থল বন্দর বেনাপোলের আমদানী-রফতানি পণ্যাদি পরিবহনও এই সেতু দিয়ে হচ্ছে।
কালনাঘাট টু যশোর মহাসড়কে বাসের চালক টুটুল শেখ বলেন, অপ্রশস্ত এ রাস্তায় যে পরিমান যানবাহন বেড়েছে তাতে বাস চালিয়ে সময়মত গন্তব্যে পৌছানো কঠিন হয়ে গেছে। রাস্তা প্রশস্ত না করে কালনা সেতু চালু হওয়ায় কখন যে কী হয় আল্লাই ভালো জানেন। কালনাঘাট এলাকার ইউপি সদস্য মোঃ রসুল সিকদার বলেন৷ শুনেছি কালনা-যশোর মহাসড়ক ২৪ ফুট চওড়া হবে। কিন্তু এখনও তো কোন কাজ শুরু হলো না। তিনি মহাসড়কের সুবিধা পেতে দ্রুত কালনা-যশোর মহাসড়কসহ অপ্রশস্ত ফিডার সড়ক গুলিকে প্রশস্তকরণের দাবী জানান। নড়াইলের বিশিষ্ট আইনজীবী মোঃ আলমগীর সিদ্দিকী বলেন৷ এই সড়কের বিশেষ করে মালিরবাগ মোড় থেকে রূপগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত অংশটি মহাসড়ক হিসাবে ব্যবহারের সম্পূর্ণ অনুপোযোগি। সেতু চালুর আগেই সড়ক প্রশস্ত করা দরকার ছিল।
কালনা সেতুর প্রকল্প ব্যবস্থাপক মোঃ আশরাফুজ্জামান জানান-সব বাঁধা পেরিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গত ১০ অক্টোবর মধুমতি সেতুর উদ্বোধন করেছেন। সেতুর উপর দিয়ে যান চলাচল শুরু হয়েছে। রাস্তার কাজও শীঘ্রই শুরু হবে। এই কাজের অংশ হিসাবে রাস্তার দুই পাশের গাছ কাটার কাজ চলমান।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ নড়াইলের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী এ এম আতিকুল্লাহ জানান, কালনা ঘাট থেকে ভাঙ্গুড়া পর্যন্ত (নড়াইল জেলার অংশ) বিদ্যমান ১৮ ফুট মহাসড়ক ২৪ ফুটে উন্নীতকরণ কাজের টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। অনুমোদনের জন্য ফাইল মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেয়া হবে।