স্টাফ রিপোর্টার
যখনই যে ধরণের ব্যারিকেড (প্রতিবন্ধক বা বাধা) দেয়া হচ্ছে, তা বার বারই ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে। কোনো কিছুতেই ঠেকানো যাচ্ছে না ‘শেখ রাসেল সেতু’তে ভারী যানবাহনের চলাচল। ফলে যখন-তখন সেতুতে ছোট-বড় ট্রাক, পিকআপসহ অন্যান্য যানবাহন ঢুকে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। কারণ, সেতুর পূর্বপ্রান্ত মালিবাগ মোড় থেকে যে কোনো ধরণের যানবাহন শেখ রাসেল সেতুতে একবার প্রবেশ করলে পশ্চিমপ্রান্ত দিয়ে বের হতে পারছে না। এতে পুরো সেতু জুড়ে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। এ যানজটের প্রভাব শহরের সড়কেও পড়ছে। দিনের বেলা প্রায়ই এ ধরণের ঘটনা ঘটছে। আর রাতের বেলা ছোট-বড় ট্রাক, পিকআপসহ অন্যান্য যানবাহন দুইপ্রান্তের ব্যারিকেড ভেঙ্গে সেতুর ওপর দিয়ে চলাচল করছে। সবশেষ গতরাতেও সেতুর পূর্বপ্রান্তের ব্যারিকেড ভেঙ্গে শেখ রাসেল সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল করেছে। অথচ তিনদিন আগে নতুন করে এই ব্যারিকেড দিয়েছে ট্রাফিক পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এর আগেও একাধিকবার বিভিন্ন ধরণের ব্যারিকেড দেয় কর্তৃপক্ষ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শেখ রাসেল সেতুর পূর্বপ্রান্তে নড়াইল-লোহাগড়া-মহাসড়কের ওপর রড আর কংক্রিটের ঢালাই করা ছয়টি পিলার বসানো হয়েছে। যাতে করে শেখ রাসেল সেতুর ওপর দিয়ে বাস, ছোট-বড় ট্রাক, পিকআপসহ অন্যান্য যানবাহন চলাচল করতে না পারে। তবে এই ব্যারিকেডকে তুচ্ছ করে তা ভেঙ্গে দিয়ে রোববার রাতের আধারে যাবাহন চলাচল করেছে।
স্থানীয় সিমাখালী গ্রামের বাসিন্দা টিপু খন্দকার বলেন, শেখ রাসেল সেতু চালুর পর থেকে কোনো ভাবেই ট্রাক, পিকআপসহ অন্যান্য যানবাহন চলাচল ঠোকানো যাচ্ছে না। বারবার ব্যারিকেড ভেঙ্গে ‘শেখ রাসেল সেতু’তে যানবাহন প্রবেশ করছে। ফলে শহরে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। বারবার ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে ব্যারিকেডগুলো।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর, ট্রাফিক পুলিশ, এবং নড়াইল পৌর কর্তৃপক্ষ জানায়, শহরে যানজটমুক্ত রাখার লক্ষ্যে শেখ রাসেল সেতু দিয়ে যাত্রীবাহী বাস, ট্রাক, পিকআপসহ অন্যান্য যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে বাইসাইকেল, ভ্যান, মোটরসাইকেল, ইজিবাইক, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাসসহ ছোট যানবাহন চলাচলের অনুমতি রয়েছে। কিন্তু, সুযোগ পেলেই বড় যানবাহনগুলো ব্যারিকেড ভেঙ্গে সেতুতে ঢুকে পড়ছে। এক বছরের ব্যবধানে অন্তত ১৫বার ব্যারিকেড ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে।
বিভিন্ন ধরণের যানবাহন চালকেরা বলেন, ঢাকা-মাওয়া-পদ্মা-মধুমতি সেতু-বেনাপোল জাতীয় মহাসড়কের নড়াইল অংশের মালিবাগ মোড় থেকে শহর বাইপাস সড়ক শুরু হয়েছে। এখানে ত্রিমুখী সড়ক থাকলেও কোন সড়ক দিয়ে কোথায় যেতে হবে, কোথায় প্রবেশ করা যাবে না; তেমন নির্দেশনা দেয়া হয়নি। আর মালিবাগ মোড় গোলচত্বরে কিছু নির্দেশনা দেয়া থাকলেও রাজনৈতিক বিলবোর্ডের কারণে তা ডেকে গেছে। ফলে যানবাহন চালকেরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই মালিবাগ মোড় থেকে সোজা শেখ রাসেল সেতুতে যানবাহন চালিয়ে দিচ্ছেন। সরু সেতুতে যানবাহন উঠার পর পেছন দিকে যেতে না পেরে একপর্যায়ে সেতুর ব্যারিকেড ভেঙ্গে দিচ্ছেন চালকেরা। রাতের বেলা এ সমস্যা বেশি হচ্ছে। সড়কে বিভিন্ন নির্দেশনার ক্ষেত্রে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর, ট্রাফিক বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছেন যানবাহন চালকেরা। এদিকে, মালিবাগ মোড় থেকে প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার বাইপাস সড়ক রূপগঞ্জ হাতিরবাগান মোড়ে এসে শেষ হয়েছে। এখানেও তেমন কোনো দিক-নির্দেশনামূলক সাইনবোর্ড দেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর নড়াইলের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুজ্জামানকে ফোন করা হলে তিনি সাড়া দেননি।
এদিকে জেলা ট্রাফিক পুলিশ পরিদর্শক কাজী হাসানুজ্জামান বলেন, গতরাতে ব্যারিকেড পিলার ভেঙ্গে কোন ধরণের যানবাহন শেখ রাসেল সেতুতে প্রবেশ করেছে, তা শনাক্ত করা যায়নি। এ ঘটনায় কেউ আটক হয়নি।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ১১ অক্টোবর সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নড়াইলের চিত্রা নদীর ওপর নির্মিত ‘শেখ রাসেল সেতু’ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের আগে ২০১৭ সালের ২৬ মার্চ জনসাধারণের জন্য সেতুটি উন্মুক্ত করা হয়। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) বাস্তবায়নে নড়াইলের ফেরিঘাট এলাকায় ২৯ কোটি ১১ লাখ টাকা ব্যয়ে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে।