স্টাফ রিপোর্টার
কৃষকদের তে-ভাগা আন্দোলনের অগ্রপথিক, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাবেক সভাপতি কমরেড অমল সেনের বিংশ মৃত্যুবার্ষিকী আজ (১৭ জানুয়ারি)। ২০০৩ সালের ১৭ জানুয়ারি বার্ধক্যজনিত কারণে ঢাকা কমিউনিটি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। এ উপলক্ষে নড়াইল যশোর সীমান্তবর্তী বাঁকড়ীতে আজ মঙ্গলবার দুপুরে অমল সেনের সমাধিতে পুস্পস্তবক অর্পণ, কৃষক সমাবেশ, আলোচনা এবং সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান রয়েছে। ‘কমরেড অমল সেন স্মৃতি রক্ষা কমিটি’র উদ্যোগে দু’দিনব্যাপি (মঙ্গলবার ও বুধবার) মেলাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
‘কমরেড অমল সেন স্মৃতি রক্ষা কমিটি’র সভাপতি কৃষ্ণপদ বিশ্বাস জানিয়েছেন, প্রথমদিন (১৭ জানুয়ারী) মঙ্গলবার সকাল দশটায় তুলারামপুরে শেখহাটি তুলাপামপুর সড়কটিকে ’অমল সেন সড়ক’ হিসাবে নামকরণের ফলক উন্মোচন করবেন তুলারামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান টিপু সুলতান ও শেখহাটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলক চন্দ্র বিশ্বাস। সকাল ১১টায় বাকড়ি অমল সেন স্মৃতিস্তম্ভের পাশে ’অমল সেন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের’ শুভ উদ্বোধন করা হবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এলাকার থ্যাতনামা চিকিৎসকসহ বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ উপস্থিত থাকবেন। বেলা একটায় অমল সেনের সমাধিতে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক দল শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করবেন। বেলা তিনটায় কমরেড অমল সেনের সমাধি চত্তরে সরলা সিং মঞ্চে অমল সেনের জীবন ও কর্ম নিয়ে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। আলোচনা সভায় অন্যানের মধ্যে ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা সাতক্ষীরা-১ আসনের এমপি এ্যাডভোকেট মোস্তফা লুৎফুল্লাহ, নড়াইল ২ আসনের সাবেক এমপি শেখ হাফিজুর রহমান, এডভোকেট নজরুল ইসলাম প্রমুখ অংশগ্রহণ করবেন।
আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে সন্ধ্যায় অমল সেনের সমাধিতে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন, সরলা সিং মঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। পরদিন ১৮ জানুয়ারী বুধবার সকাল ১০টায় ’শিক্ষক অমল সেনের শিক্ষা ও আমাদের করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানী ও মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর রবিউল ইসলাম। এছাড়া বিপ্লবী কমিউনিষ্ট লীগ ও অমল সেন স্মৃতি রক্ষা কমিটি (নড়াইল যশোর) অমল সেনের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সপ্তাহব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করছে।
কমরেড অমল সেন ১৯১৪ সালের ১৯ শে জুলাই আউড়িয়ার প্রখ্যাত রায় পরিবারে মামা বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন নড়াইলের আফরার জমিদার পরিবারেরর সন্তান। নবম শ্রেণীতে অধ্যয়নরত অবস্থায় বৃটিশবিরোধী সশস্ত্র বিপ্লবী ‘অনুশীলন’ গ্রুপের সঙ্গে সম্পর্কিত হন। দৌলতপুর বিএল কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় মার্কসবাদী আদর্শে উদ্বুদ্ধ হন এবং গণিত শাস্ত্রে অনার্স পড়াকালীন সময়ে নড়াইলে ফিরে এসে কমিনস্ট আব্দোলন করার কাজে আত্মনিয়োগ করেন।তিনি মনে প্রাণে বিশ্বাস করতেন মানব জীবনের সর্বেŸাচ্চ প্রাপ্তি হতে পারে মানব সমাজের কল্যাণে আত্মনিয়োগ করা তথা শ্রমজীবী মানুষের শোষণ মুক্তির লড়াইতে অংশগ্রহণ করা। আর সে কাজটি কমিউনিস্ট আন্দোলনের লক্ষ্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে তিনি মনে করতেন।তাই তিনি সারাজীবন নিজেকে তিনি এ সংগ্রাম নিয়জিত রাখেন।
বলার অপেক্ষা রাখে না যে, তিনিই নড়াইলের প্রথম কমিউনিস্ট আন্দোলনের সংগঠক। ১৯৩৩ সালে নড়াইলের সরসপুর গ্রামের মৎস্যজীবীদের জলার উপর অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি মৎস্যজীবীদের সংগঠন গড়ে তোলেন। কিছুদিনের মধ্যে তিনি ইজারা প্রথা, হাটতোলা ইত্যাদি খাজনা বন্ধের জন্য গোবরা, আগদিয়া, তুলারামপুর, ধলগ্রাম, মাইজপাড়া এবং মাদ্রাসার হাটসহ ব্যাপক অঞ্চলে হাটতোলা বন্ধের আন্দোলনে কৃষকদের সংগঠিত করেন এবং বিজয়লাভ করেন। এই আন্দোলনে বিজয় পাকিস্তান সৃষ্টির র্পও কৃষকরা ধরে রেখেছিল। কংগ্রেস নেতা সৈয়দ নওশের আলী ১৯৩০ সালে কৃষকদের তেভাগা দাবি উত্থাপন করেছিলেন। কিন্তু ঐ আন্দোলন বেশিদূর এগোতে পারেনি। কমরেড অমল সেন তেভাগা সংগ্রামে কৃষকদের ব্যাপকভাবে সংগঠিত করাবার জন্য বাকড়ি, হাতিয়াড়া, গোয়াখোলা, বাকলি, মালিয়াট, দোগাছি, ঘোড়ানাচ, কমলাপুরসহ এগারোখানের গ্রামগুলি বড়েন্দার, বীড়গ্রাম, উজিরপুর, চাঁদপুর, দুর্গাপুর, ডুমুরতলা, দলজিৎপুর এ সকল গ্রামের কৃষকদের সংগঠিত করেন। এই তেভাগা আন্দোলন সংগঠিত করতে গিয়ে গরীব কৃষকদের মধ্য থেকে একঝাঁক বিপ্লবী কর্মী গড়ে তোলেন। আন্দোলনের নীতি ও কৌশলের সফলতার কারণে নড়াইলের তেভাগা আন্দোলন সফল ও সার্থক হয়েছিল।