বাঘারপাড়া (যশোর) প্রতিনিধি
বাঘারপাড়ার বাকড়ি মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে তে-ভাগা আন্দোলনের কিংবদন্তি নেতা, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাবেক সভাপতি কমরেড অমল সেনের বিশতম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারী) কিংবদন্তী এ কৃষক দরদী চির কুমার এ নেতার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বেলা দুইটায় অমল সেন স্মৃতিস্তম্ভে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি, যশোর জেলা কমিটি, নড়াইল জেলা কমিটি, খুলনা মহানগর ও জেলা কমিটি, ঢাকা মহানগর কমিটিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন পুষ্পমাল্য অর্পন করেছেন।
পুষ্পস্তবক অর্পন শেষে ‘কমরেড অমল সেন স্মৃতি রক্ষা কমিটি’র সভাপতি কৃষ্ণপদ বিশ্বাসের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা সাতক্ষীরা-১ আসনের এমপি এড. মোস্তফা লুৎফুল্লাহ, নড়াইল ২ আসনের সাবেক এমপি শেখ হাফিজুর রহমান, ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শুভঙ্কর সাহা দিপু, ঢাকা মহানগর কমিটির আহবায়ক কিশোর রায়, নড়াইল জেলা কমিটির সভাপতি এড. নজরুল ইসলাম, সাতক্ষীরা জেলা কমিটির সভাপতি মহিবুল্লাহ মোড়ল, নড়াইল জেলা জাসদের সভাপতি এড. হেমায়েত উল্লাহ হিরু, বীর মুক্তিযোদ্ধা এস এ মতিন প্রমুখ।
কমরেড অমল সেন ১৯১৪ সালের ১৯ শে জুলাই নড়াইলের আউড়িয়ার প্রখ্যাত রায় পরিবারে মামা বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন নড়াইলের আফরার জমিদার পরিবারের সন্তান। নবম শ্রেণীতে অধ্যয়নরত অবস্থায় বৃটিশবিরোধী সশস্ত্র বিপ্লবী ‘অনুশীলন’ গ্রুপের সঙ্গে সম্পর্কিত হন। দৌলতপুর বিএল কলেজে গনিতশাস্ত্রে অনার্স অধ্যয়নরত অবস্থায় মার্কসবাদী আদর্শে উদ্বুদ্ধ হন এবং নড়াইলে ফিরে এসে কৃষক আব্দোলন করার কাজে আত্মনিয়োগ করেন।
কমরেড অমল সেন মনে প্রাণে বিশ্বাস করতেন মানব জীবনের সর্বোচ্চ প্রাপ্তি হতে পারে মানব সমাজের কল্যাণে আত্মনিয়োগ করা তথা শ্রমজীবী মানুষের শোষণ মুক্তির লড়াইতে অংশগ্রহণ করা। তিনি সারাজীবন নিজেকে এ সংগ্রামে নিয়োজিত রাখেন। পাকিস্তান শাসনামলের ২৪ বছরের মধ্যে ১৯ বছরই তাঁকে কারাগ্রে কাটাতে হয়েছে। ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ মুক্তিকামী জনতা তাঁকে যশোর কারাগার ভেঙ্গে মুক্ত করে । এরপর স্বাধীনতা আন্দোলনে তিনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
২০০৩ সালের ১৭ জানুয়ারি বার্ধক্যজনিত কারণে ঢাকা কমিউনিটি হাসপাতালে অকৃতদার এই বিপ্লবী নেতা মৃত্যুবরণ করেন। তিনি যৌবনে ভোগ-বিলাসিতা ত্যাগ করে বাড়ী ছেড়ে বাঘারপাড়ার বাকড়ী গ্রামে এসে এক কৃষক পরিবারে আশ্রয় নিয়েছিলেন। সেই গ্রামে অবস্থিত বাকড়ী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পার্শে বাংলাদেশ ও ভারতের অসংখ্য অনুসারী ও ভ্রাতৃপ্রতিম পার্টির নেতা কর্মীদের উপস্থিতিতে তাকে সমাহিত করা হয়।
সমাধিস্থলে প্রতিবছর ১৭ ও ১৮ জানুয়ারী অমল সেন মেলা অনুষ্টিত হয় যেখানে সারা দেশের বামপন্থী রাজনীতির নেতা কর্মীরা মিলিত হন। সেখানে আলোচনা অনুষ্ঠান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও গ্রামীন মেলার আয়োজন করা হয়।