গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
‘মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার’ লেখাটিতে রয়েছে নানা অসংগতি ও বানানের বিকৃতি। দৃষ্টিনন্দন ভবনে এ বাক্যটি সুন্দরভাবে লেখার জন্য বরাদ্ধ থাকলেও টাকা বাঁচাতে পেশাদার চিত্রশিল্পীর পরিবর্তে অনভিজ্ঞ লোক দিয়ে কাজটি করান সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার। ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার মইলাকান্দা ইউনিয়নের সাতপাই গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশিদের জন্য নির্মিত বীর নিবাসের চিত্র এটি। বুধবার (২৫ জানুয়ারি) বীর নিবাস পরিদর্শনকালে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফৌজিয়া নাজনীনসহ স্থানীয় সাংবাদিকদের চোখে ধরা পড়ে এ অসংগতি।
প্রসঙ্গত মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আবাসন নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় সারাদেশে নির্মিত হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন বীর নিবাস। এ উপজেলায় ইতিমধ্যে প্রথম ধাপে তালিকাভুক্ত ৯টি বীর নিবাস নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে আরও ১৩টি বীর নিবাসের নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
অভিযোগ ওঠেছে এসব বীর নিবাস নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ও উপকরণ। সঠিক তদারকির অভাব ও প্রাক্কলন অনুযায়ী কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় এ নিয়ে স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের মাঝে মাঝে ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
বীর নিবাস বরাদ্দ পাওয়া একাধিক বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের পরিবারের দাবি- শুরু থেকেই প্রাক্কলন অনুযায়ী কাজ করার তাগিদ দিলেও, সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার তাদের কথা আমলে নেননি। উল্টো তাদেরকে কাজ বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দেন। এ কাজের তদারকির দায়িত্বে থাকা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে এসব অনিয়মের বিষয়ে জানানোর পর কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেননি তিনি।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, প্রতিটি বীর নিবাস নির্মাণের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪ লাখ ১০ হাজার টাকা। প্রাক্কলন অনুযায়ী প্রতিটি বীর নিবাস হবে দৃষ্টিনন্দন ও ঢালাইয়ের পাকা ছাদ। এতে থাকবে তিনটি বেড রুম, একটি গেস্ট রুম, দুটি বাথরুম ও একটি কিচেন রুম, বিদ্যুত ও পানীয় জলের সু ব্যবস্থাসহ আরও অনেক সুযোগ-সুবিধা।
বীর নিবাস বরাদ্দ পাওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশিদ সাংবাদিকদের জানান- ভবনটি নির্মাণে ঠিকাদার নিম্নমানের ইট, বালু, সিমেন্ট, রডসহ অন্যান্য উপকরণ ব্যবহার করেছেন। ভবনের কিছু উপকরণ নিজ খরচে ফিটিং করেছেন। এছাড়া ভবন নির্মাণের বিভিন্ন মালামাল আনার ভাড়া নিজেকে পরিশোধ করতে হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
উল্লিখিত বীর নিবাস নির্মাণের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রোজা ট্রেডার্স এর প্রতিনিধি জহিরুল ইসলাম ছোটন জানান- ত্রুটিগুলো দ্রুত সংশোধন করে দিবেন তিনি।
গৌরীপুর উপজেলা প্রকপ্ল বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) সোহেল রানা পাপ্পু সাংবাদিকদের জানান- বীর নিবাসে লেখাগুলোর বানানে অসংগতি ও ত্রুটির দায়ভার সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের। ঠিকাদারকে তা দ্রুত সংশোধন করতে বলা হয়েছে।
গৌরীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফৌজিয়া নাজনীন সাংবাদিকদের জানান- বীর নিবাস নির্মাণে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।