স্টাফ রিপোর্টার
নড়াইলে ভুয়া আইডি ব্যাহার করে ৪ কোটি টাকার জমি লিখে নেওয়ার অভিযোগে দলিল লেখক ভূমি দস্যু আরমান কে বরখাস্ত করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ( ২মার্চ) জেলা রেজিস্ট্রার অফিসার মোহাম্মদ সেলিম মোল্লিকের সাক্ষরিত এক অফিস আদেশ পত্রে দলিল লেখক ভূমি দস্যু আরমান কে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। সেই সাথে মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম ও ফারুক হোসেনকে দলিল লেখার কাজ হতে বিরত রাখতে বলা হয় আদেশে।
অফিস আদেশ সূত্রে জানা গেছে , দুর্নীতি দমন কমিশন প্রধান কার্যালয় ঢাকা দৈনিক সা¤প্রতিক অভিযোগ সেল হতে ১৬/০২/২০২৩ খ্রিঃ তারিখের ০০.০১.০০০০.৫০৩.২৬.০৫৪.২৩-৬১৩৮ নং স্মারক পত্রের মাধ্যমে একখানা অভিযোগ পত্র অত্র কার্যালয়ে প্রেরণ করা হয়। উক্ত অভিযোগে সংযুক্তি সত্যের সন্ধানে দৈনিক যশোর পত্রিকায় প্রকাশের ভিত্তিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের অভিযোগ ক্রমিক নং-৭২ তারিখঃ-০৪/০১/২০২৩ খ্রিঃ। উক্ত পত্রিকা দৃষ্টে মোঃ আরমান আলী, দলিল লেখক,নড়াইল সদর সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয় এর বিরুদ্ধে ২৭/০৬/২০১২ খ্রিঃ তারিখের ৩৯৪৯ নং আম-মোক্তারনামা দলিল এবং ০৬/০৬/২০১৮ খ্রিঃ তারিখের ২৪৪৩ কবলা দলিল দ্বয়ে ভুয়া আইডি ব্যবহার এবং ৪ কোটি টাকার জমি লিখে নেওয়ার অভিযোগর প্রেক্ষিতে নড়াইল সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক মোঃ আরমান আলী, সনদ নং ৭৮ কে বিভাগীয় তদন্ত কার্য রুজু সাপেক্ষে সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখার কাজ হতে সাময়িক ভাবে বরখাস্ত করা হ’ল এবং উক্ত দলিল গুলির মুসাবিদাকারী দলিল লেখকগন মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম, সনদ নং-১০৯ এবং মোঃ ফারুক হোসেন, সনদ নং-১৭২ কে দলিল লেখার কাজ হতে বিরত রাখা হ’ল । এর আগে গত বছরের ডিসেম্বর মাসে ‘নড়াইলে ভুয়া আইডি ব্যাহার করে ৪ কোটি টাকার জমি লিখে নেওয়ার অভিযোগ ’ স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় এই শিরোনামে সংবাদ পকাশ হয়।
এদিকে, জমির প্রকৃত মালিক ১৯৭১ সাল থেকে ভারতে স্থায়ী ভাবে বসবাস করছেন। পৈতৃক সূত্রে পাওয়া প্রায় ৪ কোটি টাকার সম্পত্তি বিক্রি হয়ে গিয়েছে অথচ তিনি নিজেই জানেন না। ভুয়া আইডি কার্ড তৈরী ও দাতা সাজিয়ে ভওয়াখালী ও দূর্গাপুর-ডুমুরতলা মৌজার ৪ কোটি টাকার সেই জমি লিখে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে দলিল লেখক ভূমিদস্যু আরমান খান, তার আপন ভাই এবং দুলাল চন্দ্র সিংহসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে।
বিষয়টি নিয়ে দূর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন এলাকার সচেতন মহল। চাঞ্চল্যকর এই বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। দ্রæত বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ ব্যাবস্থা নেওয়ার দাবী ও জানিয়েছিলেন এলাকাবাসী।
জানা গেছে, দলিল লেখক আরমান দলিলের শ্রেণী পরিবর্তনসহ নানা অনিয়ম দূর্নীতি করে সল্প সময়ে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ইতোমধ্যে দূর্নীতির দায়ে ভিন্ন অভিযোগেও তদন্ত চলছে আরমানের বিরুদ্ধে। আরও জানা গেছে, আরমানসহ কয়েকজ যোগসাজসে ভূয়া দাতা সাজিয়ে ২৭-৬-২০১২ ইং তারিখে নড়াইল সাব রেষ্ট্রি অফিসে ৩৯৪৯ নং আম-মোক্তারমানা দলিল করে নেন। দলিলটিতে দাতাদের যে আইডি কার্ড (আইডি নং ৬৫২৭৬০৪১০৬৮৯০ এবং ৬৫২৭৬০৪১০৬৮৯০৪ ) ব্যাবহার করা হয়েছে তাদের সেই আইডি কার্ড দলিলের দাতাদের নয়। জমির প্রকৃত মালিক ১৯৭১ সাল থেকে ভারতে স্থায়ী ভাবে বসবাস করছেন। বাংলাদেশে তাদের কোন পরিচয় পত্র (নাগরিকত্ব নেই)। দলিলটি লেখক কলমে আরমানের আপন ভাই আনারুল ইসলাম খান স্বাক্ষর করেছেন।
৩৯৪৯ নং আম-মোক্তারমানা দলিলের গ্রহিতা দুলাল চন্দ্র সিংহ এর সাথে কথা হলে তিনি নিউজ না করার জন্য অনুরোধ ও জানিয়েছিলেন।
সাব রেজিষ্ট্রি অফিস সুত্রে জানাগেছে, ৬-৬-২০১৮ ইং তারিখে ২৪৪৩ নং কবলা দলিলের শ্রেণী পরিবর্তন করে প্রায় দুই লক্ষ টাকা রাজেস্ব ফাঁকি দেওয়া হয়েছে। এই দলিলের দাতা এই আরমান নিজেই। অভিযোগ রয়েছে উক্ত দলিলের লেখক কলমে নকল (লেখকের অজান্তে) সহি করানো হয়েছে।
এলাকাবাসী ও রেজিষ্ট্রি অফিস সংশ্লিষ্ঠরা জানান, নাশকতা মামলার আসামী বিএনপি নেতা আরমান ভূমি দস্যু হিসাবে পরিচিত হয়েছে অনেক আগেই। দরিদ্র পরিবারে সন্তান ভূমি খেকো আরমান বিভিন্ন সময়ে দলিলের শ্রেণী পরিবর্তনসহ বিভিন্ন অনিয়ম করে সল্প সময়ে কোটি টাকার মালিক হয়েছেন বলে তাদের অভিযোগ।
সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে দূর্গাপুর এলাকায় তিনতলা বিশিষ্ট বিলাসবহুল একটি বহুতল ভবন নির্মান সহ আশেপাশে কোটি টাকার জমি ক্রয় করেছেন বলে অভিযোগ এই আরমানের বিরুদ্ধে।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে এক দলিল লেখক জানান, আরমান যখন লেখক সমিতি সম্পাদক ছিলেন মূলত তখনই বিভিন্ন অনিয়ম ও দূর্নীতি করে রাতারাতি কোটিপতি হয়েছেন।
এলাকার এক আওয়ামীলীগ নেতা জানান, আরমানের আসল রুপ বিএনপি হলেও বর্তমানে সে সরকার দলীয় এক প্রভাবশালী নেতার ছত্র ছায়ায় থেকে বিভিন্ন অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে।