যশোরের বাঘারপাড়ায় ১২শ’ ৮০ মিটারেই যত ভোগান্তি

0
5
যশোরের বাঘারপাড়ায় ১২শ' ৮০ মিটারেই যত ভোগান্তি
যশোরের বাঘারপাড়ায় ১২শ' ৮০ মিটারেই যত ভোগান্তি

বাঘারপাড়া (যশোর) সংবাদদাতা

নির্মাণের ২৩ বছর পার হলেও আজও সংস্কার হয়নি যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার একটি বক্সকালভার্ট। উপজেলার জামদিয়া ইউনিয়নের দোগাছি গ্রামের কাটাখালের উপর এবং দোগাছি-বেনাহাটি রাস্তায় নির্মিত এ কালভার্ট এলাকার কৃষিপণ্য আনা-নেওয়া, ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থীদের আসা-যাওয়াসহ বিভিন্ন কাজে গুরুত্বপূর্ণ হলেও আজও টনক নড়েনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) বাঘারপাড়া অফিস ২০০১-২০০২ অর্থবছরে নির্মাণ করে সেতুটি। স্থানীয়দের অভিযোগ, এ কাঁচা রাস্তা ও কালভার্টের জন্য স্থানীয় সংসদসদস্য, জনপ্রতিনিধি ও এলজিইডি অফিসে কয়েকবার যোগাযোগ করা হলেও আজও এর কোনো প্রতিকার পাইনি।

এলজিইডি বাঘারপাড়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষানাবেক্ষণ প্রকল্পের আওতায় সেতুটি নির্মাণ করা হয়। এর দৈর্ঘ্য ১২মিটার এবং প্রস্থ সাড়ে ৪ মিটার। কালভার্টটি দোগাছি গ্রামের তরুন ভৌমিকের বাড়ি থেকে বেনাহাটি গ্রামের (নড়াইল সদর) শংকর বিশ্বাসের বাড়ি পর্যন্ত ১২’শ ৮০ মিটার রাস্তার মাঝে অবস্থিত। রাস্তাটির আইডি নম্বর (পরিচিতি নম্বর) ২৪১০৯৫১২১।

স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা গেছে, এগারোখান অঞ্চলের বাকড়ী, দোগাছি, ঘোড়ানাছ, কমলাপুর, রঘুরামপুর ও বেনাহাটি গ্রামের কৃষকদের কৃষিপণ্য ঘরে তোলা থেকে শুরু করে হাটে নেওয়ার জন্য এ রাস্তাটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে পাটের মৌসুমে কাঁচা পাট পঁচাতে এ খালই একমাত্র ভরসা। সে সময় এ কাঁচা রাস্তা ও কালভার্টটি কৃষকদের ভোগান্তিতে ফেলে। এছাড়াও শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী ও চাকুরীজীবীদেরও ভোগান্তির কারন এ কালভার্ট ও রাস্তা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ভাঙ্গুড়া-বসুন্দিয়া সড়কের দোগাছি গ্রাম থেকে পূর্ব দিকে নেমে গেছে এ কাঁচা সড়কটি। যা বাঘারপাড়ার দোগাছি গ্রাম (স্থানীয়দের মতে দাঁড়িরপর) ও নড়াইল সদরের বেনাহাটি গ্রামকে যুক্ত করেছে। সড়কটির বেনাহাটি গ্রামের অংশে সলিং এবং কার্পেটিং হলেও বাঘারপাড়ার অংশ পুরোটাই কাঁচা। বর্ষা মৌসুমের ভয়ংকর রূপ এখনো লেগে আছে কাঁচা সড়কটিতে। কালভার্টটির অবস্থা আরও ভয়ানক। কালভার্টটির রেলবার ভেঙ্গে লোহার মরিচাধরা রড বের হয়ে আছে। রেল পোস্টের অবস্থাও একই।

কালভার্টটির স্লাবের (উপরের অংশ) উপর পলেস্তারা নেই। স্থানীয়রা রডের উপর বাঁশ, কঞ্চি, চট, গাছের ডাল বিছিয়ে তার উপর মাটি দিয়ে কোনো রকমে চলাচল করছে। তারপরও সেখানে অনেকগুলো ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। কালভার্টে গর্তের কারনে দুর্ঘটনার আশংকা করছেন এলাকাবাসী।

এ বিষয়ে দোগাছি গ্রামের পাট চাষি নিলু দাস বলেন, আমার বেশীর ভাগ জমিতে পাট চাষ করি। সেই কাঁচা পাট পঁচানোর জন্য এ রাস্তা দিয়ে যাওয়া আশা করতে হয়। কিন্তু কাদায় গরুর গাড়িও চলতে পারে না। মাথায় করে এনে কাটা খালে পাট জাগ দি। এতে আমার খরচ ও সময় দুইই ব্যায় হয়। একই কথা বলেন একই গ্রামের পাটচাষি সুকুমার ভৌমিকও।

বাকড়ী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ঘোড়ানাছ গ্রামের অনন্যা বিশ্বাস, লতা লষ্কর ও বাকড়ী গ্রামের বর্ণলী বিশ্বাস প্রতিদিন বেনাহাটি গ্রামে অরবিন্দু স্যারের কাছে পড়তে যায়। তাঁরা জানায়, বর্ষার সময় এ রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে পারি না। কাদায় পায়ের হাটু পর্যন্ত ডুবে যায়। কালভার্টের গর্ত দেখলে ভয় পাই। যদি ওর ভিতর ঢুকে যাই!
উপজেলার জামদিয়া ইউনিয়নের করিমপুর গ্রামের ভাঙ্গাড়ি ব্যবসায়ী সুজল বিশ্বাস বলেন, আমি মাঝে মাঝে এ রাস্তায় আসি। কাদার সময় তা সম্ভব হয় না। এবং কালভার্টের অবস্থা আরও ভয়াবহ। এর গর্তে ভ্যানের চাকা একবার ঢুকে গেলে দুই-তিন জনের সাহায্য ছাড়া টেনে তোলা যায় না’।

কমলাপুর গ্রামের নিহার রঞ্জন গুপ্ত জানান, ‘বেনাহাটি ও দোগাছির (দাড়িরপর) ছেলেমেয়েরা এই রাস্তা দিয়ে বাকড়ীর স্কুল ও নড়াইল যশোর কলেজে পড়াশুনা করে। কাদার সময় তারা বিভিন্ন আত্মিয় বাড়ি থেকে পড়াশুনা করে। তিনি আরও বলেন, এই রাস্তা ও কালভার্টের জন্য ঢাকায় এলজিইডি’র হেড অফিসে যেয়ে রাস্তাটির পরিচিতি নম্বরও দিতে সক্ষম হয়েছি। কিন্তু অদৃশ্য কারনে আজও টেন্ডার হয়নি। এখন শুনছি, এক পর্দার ইটের সলিং হবে। এটা হলে ইট ভেঙ্গেচুরে রাস্তার অবস্থা আরও খারাপ হবে। কারন এখানে ভারি ভারি গরুর গাড়ি ও ট্রলি চলে’।

জামদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফুল ইসলাম তিব্বত বলেন,‘সলিং এর কথা আমি জানিনা তবে এই রাস্তা ও কালভার্টের বিষয়ে উপজেলা মাসিক মিটিংএ তুলেছিলাম, ইঞ্জিনিয়ার অফিস সরেজমিনে দেখতে চেয়েছে। তিনি আরও বলেন, পিআইও অফিস প্রকল্প পস্তুত করে ঢাকায় পাঠিয়েছে, অনুমোদন হলেই কাজ শুরু হবে’।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশল অফিসের উপসহকারি প্রকৌশলী সালেহ আকরাম বলেন,‘এখানে দুটো রাস্তা ও দুটো কালভার্ট আছে। যার আইডি নম্বর (পরিচিতি নম্বর) ২৪১০৯৫১২১ ও ২৪১০৯৫১২২। বেশ আগে এ গুলোর প্রস্তাব ঢাকা হেড অফিসে পাঠানো হয়েছিলো কিন্তু এখনো অনুমোদন হয়নি’।