নড়াইলের লোহাগড়ায় আদালতের ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে এক একর জমির পাট নিধন- জমি দখলের চেষ্টা

0
17
নড়াইলের লোহাগড়ায় আদালতের ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে এক একর জমির পাট নিধন- জমি দখলের চেষ্টা
নড়াইলের লোহাগড়ায় আদালতের ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে এক একর জমির পাট নিধন- জমি দখলের চেষ্টা

স্টাফ রিপোর্টার

নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার লাহুড়িয়া ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামে এক একর জমির পাট একই গ্রামের মৃত নান্নু মোল্যার ছেলে উতার মোল্যা (রিপন) ও তার লোকজন আদালতের দেওয়া ১৪৪ ধারা অমান্য করে সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে ট্রাক্টর দিয়ে চাষ করে ধ্বংস করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, রাজাপুর গ্রামের মৃত কাশেম মোল্যার স্ত্রী মোসা: ঠান্ডা বিবি, ২০ নং কল্যাণপুর ও ২৫ নং বাতাসি মৌজায় এস এ ৯০০, ৮৯৬ ও ৭০৫ খতিয়ান, ৯৬৫,৯৬৪,৮৬৮ ও ৯৭০ নং দাগ আর এস মাঠ জরিপ ২৭ খতিয়ান ৮০১, হাল ৪৩২ ও ৪২৯ দাগে ধানী ১০৮ শতক জমির সত্ত্বপ্রাপ্ত হইয়া সরকারী কর ভোগ দখল ও চাষাবাদ করিয়া আসিতেছে।

উক্ত জমি হইতে বিগত ৭/১২/১৯৯৬ সালে মোসা: ঠান্ডা বিবি ১০৩ শতক জমি ৪২০৬ নং দলিলে তার ছেলে ফরিদ মোল্যার কাছে হস্তান্তর করেন। বংশানুক্রমে উক্ত জমাজমি প্রায় ৯০ বছর ফরিদ মোল্যা ও তার পরিবার ভোগ দখল করিয়া আসিতেছে। মো: উতার মোল্যা জাল জালিয়াতির মাধ্যমে লক্ষীপাশা সাব রেজিষ্ট্রি অফিসের সীলমোহরকৃত ৪ টি দলিল মুলে ৮৮ শতক জমি তার পিতা নান্নু মোল্যা সত্ত্বপ্রাপ্ত দাবী করিয়া বিগত ২০১১ ও ২০১২ সালে কৌশলে একটি আপিল মোকদ্দমা দায়ের করেন।

উক্ত আপিলে বিবাদীকে কোন প্রকার নোটিশ না করিয়া তঞ্চকির মাধ্যমে আর এস (চুড়ান্ত) ৪৩২ দাগ হইতে ৮৮ শতক জমি পৃথক ৮৯৮ খতিয়ানভূক্ত করে সত্ত্বপ্রাপ্ত দাবী করিয়া জমি দখলে নেওয়ার চেষ্টা করেন। উক্ত নালিশী জমি স্থিতিশীল ও শান্তি বজায় রাখতে গত ২ মে নড়াইলের বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালত উক্ত জমির উপর ১৪৪ ধারা জারী করেন।

আদালতের জারীকৃত নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে উতার মোল্যার নেতৃত্বে ১৫ থেকে ২০ জন বহিরাগত ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী উপস্থিত থেকে রাজাপুর গ্রামের এলেম শেখের ছেলে ট্রাক্টর চালক বায়েজিদ শেখ জমিতে ট্রাক্টর দিয়ে সম্পুর্ণ জমির উঠতি ১ফুট লম্বা পাট ক্ষেত চাষ দিয়ে বিনষ্ঠ করে। খবর পেয়ে লাহুড়িয়া পুলিশি তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছলে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে ট্রাক্টর নিয়ে সকলে পালিয়ে যায়।

উতার মোল্যার আপিল মোকদ্দমায় দাখিলকৃত ৪টি দলিলের সব কয়টি দলিল জাল জালিয়াতির মাধ্যমে প্রস্তুত করা হয়েছে। যাহার দাতা-গ্রহীতা ও মৌজায় গড়মিল দেখা যায়। দাখিলকৃত লক্ষীপাশা সাব রেজিস্ট্রি অফিসের ২৯/৩/১৯৮৩ ইং তারিখে রেজিষ্ট্রিকৃত ১০৮৭ নং দলিল মুলে জমি লোহাগড়া উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের ৬৫ নং ধোপাদাহ মৌজায় স্থিত গ্রহীতা মো: হাফিজারসহ চারজন, দাতা ছুটু বিবি। ৭/৪/১৯৮৮ ইং তারিখে রেজিষ্ট্রিকৃত ১৫০৪ নং দলিল মুলে জমি শালনগর ইউনিয়নের ২৫ নং বাতাসি মৌজায় স্থিত গ্রহীতা নান্নু মোল্যা, দাতা মনোহর চন্দ্র, জমির পরিমান ৮শতক। ১৮/১০/১৯৮৯ ইং তারিখে রেজিষ্ট্রিকৃত ১১৪৯ নং দলিল মুলে জমি ৩৮ নং শালনগর মৌজায় স্থিত গ্রহীতা: ছানোয়ার সরদার, দাতা: আয়তন নেছা। ২৪/১০/১৯৭৯ ইং তারিখে রেজিষ্ট্রিকৃত ৫১১৭ নং দলিল মুলে জমি দিঘলিয়া ইউনিয়নের ১১৪ নং নোয়াগ্রাম, ১১৯ বাটিকাবাড়ি ও ১১৮ নং কুমড়ি মৌজায় স্থিত গ্রহীতা: শাহিউল আলম, দাতা:হাজেরা খাতুন লিখিত রয়েছে। স্থানীয়দের দাবী কর্তপক্ষ যেন সঠিক তদন্ত করে জালিয়াত চক্রদের আইনের আওতায় এনে তাদের কঠোর শাস্তি প্রদান করেন।

লাহুড়িয়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ মো: সেলিম উদ্দিন ফসলি জমির পাট ট্রাক্টর দিয়ে চাষ করে বিনষ্টের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটানাস্থলে পৌছলে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে ট্রাক্টর নিয়ে সকলে পালিয়ে যায়। অপরাধিদের চিহ্নিত করে আটকের চেষ্টা চলছে। লাহুড়িয়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান প্রকৌশলী কামরান শিকদার বলেন, আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পাট ক্ষেত বিনষ্ঠ করে তারা অপরাধ করেছে, শাস্তি হওয়া দরকার।
এ বিষয়ে লোহাগড়া উপজেলা সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার নিত্যানন্দ চৌধুরী বলেন, এই আপিল মোকদ্দমার সমস্ত নথি যশোর রয়েছে। নথি না দেখে তিনি কিছু বলতে পারব না।