নড়াইলের হবখালী হামিদুন্নেছা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি পদ দখলে রাখতে অপতৎপরতা!

0
75
নড়াইলের হবখালী হামিদুন্নেছা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি পদ দখলে রাখতে অপতৎপরতা!

স্টাফ রিপোর্টার

নড়াইল সদর উপজেলার হবখালী হামিদুন্নেছা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অনিয়মতান্ত্রিক ভাবে সভাপতি’র বোনকে দাতা সদস্য করার পায়তারা চলছে। স্থানীয়দের অভিযোগ জেলার অন্যতম এ বিদ্যালয়টি দীর্ঘকাল ধরে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন স্থানীয় হবখালী এলাকার সৈয়দ আনোয়ারুল আলম সেন্টু। তিনি বছরের পর বছর সভাপতির পদ দখল করে আছেন। এ পদ দখল করে তিনি স্বেচ্ছাচারী ভাবে স্কুল পরিচালনা করে আসছেন। অভিযোগ উঠেছে চাচাতো বোন জলি খাতুনকে অনিয়মতান্ত্রিক ভাবে দাতা সদস্য করে সভাপতি’র পদ দখলে রাখার জন্য তিনি পায়তারা করছেন।

বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি গঠনের লক্ষ্যে সম্প্রতি দাতা সদস্য আহবান করে প্রধান শিক্ষক আবু ছামিন বিশ্বাস একটি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেন। ওই বিজ্ঞপ্তির আলোকে আজীবন দাতা সদস্য হওয়ার জন্য বিদ্যূালয়ের বর্তমান সভাপতি সৈয়দ আনোয়ারুল আলম সেন্টু চেকের মাধ্যমে ২ লাখ টাকা জমা দিয়েছেন। সঞ্চিতা হক ও পলি খাতুন নামে অপর দু’জন এক কালীন দাতা সদস্য হওয়ার জন্য ২০ হাজার টাকা করে বিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসেবে জমা দিয়ে যথাসময়ের মধ্যে জমা রশিদের মুল কপি প্রধান শিক্ষকের নিকট জমা দিয়েছেন।

দাতা সদস্য হওয়ার জন্য টাকা জমা দেয়ার শেষ দিন ছিল গত ৮জুন । ওই দিন বিকেল ৪টার পরে সাংবাদিক ও স্থানীয় লোকজন কমিটি গঠন ও দাতা সদস্য’র টাকা জমার বিষয়ে জানার জন্য প্রধান শিক্ষকের অফিস কক্ষে গেলে প্রধান শিক্ষক তথ্য দিতে গড়িমসি করেন। নানাভাবে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে প্রধান শিক্ষক তথ্য প্রদানকালে আরোও জানান, এ পর্যন্ত মাত্র ৩ জন দাতা সদস্য হওয়ার জন্য টাকা প্রদান করে মুল রশিদ জমা দিয়েছেন । তাদের নাম রেজিষ্ট্রার খাতায় তোলা হয়েছে। এ সংক্রান্ত গণবিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী পরবর্তীতে কেউ টাকা জমা দিলে বা টাকা জমার রশিদ দিলে তা-গ্রহন করা হবে না। সাংবাদিক ও লোকজন বিদ্যালয় ত্যাগ করার সাথে সাথে সবকিছু বিদ্যালয়ের সভাপতিকে অবহিত করেন প্রধান শিক্ষক ছামিন ও সহকারি শিক্ষক নির্মল।

সুচতুর সভাপতি সেন্টু ও তার বোন জলি শুক্রবার (৯ জুন) থেকে এলাকায় প্রচার শুরু করেছেন জলি খাতুন’র নামে অনলাইনে বিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসেবে ২০ হাজার টাকা জমা দেয়া হয়েছে দাতা সদস্য হওয়ার জন্য। বিশেষ কারনে যথাসময়ের মধ্যে জমা রশিদ প্রধান শিক্ষকের নিকট জমা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ ২ যুগ ধরে বর্তমান সভাপতি সৈয়দ আনোয়ারুল আলম সেন্টু এ বিদ্যালয় নিয়ন্ত্রণ ও শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে আসছেন।

গুঞ্জণ আছে স্থানীয় সংখ্যালঘু পরিবারের জায়গায় বিদ্যালয়টি স্থাপিত হলেও তাদের কোন মূল্যায়ন করা হয় না। বিদ্যালয়ের সবকিছুতে নিজেদের অবদানের কথা প্রচার করে সভাপতি নিজেই সব ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করেন। কারো মতামতের কোন মূল্যায়ন করেন না। এলাকায় চাউর আছে এ পর্যন্ত তিনি বেশ কিছু শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে বিপুল পরিমান টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। আর সেই টাকা হতে ২ লাখ টাকা জমা দিয়ে আজীবন দাতা সদস্য হয়েছেন।

সভাপতির পদ দখলে রাখতে তিনি চাচাতো বোনকে দিয়ে এক কালীন দাতা সদস্য হওয়ার জন্য টাকা জমা দেয়ার শেষ দিন ২০ হাজার টাকা জমা দিয়েছেন। কিন্তু নিজের হাতে ক্ষমতা থাকায় নিয়ম নীতি উপক্ষো করে নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত হলেও টাকা জমা দেয়ার মুল রশিদ প্রধান শিক্ষককে দেননি। তার এমন ধরনের খাম খেয়ালী আচরন ও হুমকি ধামকিতে তটস্থ থাকেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও সাধারণ মানুষ তার আচরনে মারাত্মক ক্ষুব্ধ। তবে তার দু’জন চামচা আছে,তারাই তাকে কু-পরামর্শ দিয়ে থাকে। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে তিনি শিক্ষক সুশান্ত কুমারকে স্কুল সময়ে নিজ বাড়িতে প্রাইভেট পড়াতে বাধ্য করেন। কর্মচারীদের দিয়ে অসময়ে ব্যক্তিগত কাজ করান। প্রতিবার ম্যানেজিং কমিটি গঠনের সময় নিজের পছন্দের শিক্ষকদের টিআর নির্বাচিত করেন। নিজের পছন্দের লোকদের অভিভাবক সদস্য করেন। পূর্বের মত আবারও সেই একই কায়দায় বিনা ভোটে বিদ্যালয়ের সভাপতি হওয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত আছেন বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। তারই ধারাবাহিকতায় চাচাতো বোনকে অনিয়মের মধ্য দিয়ে দাতা সদস্য করার পায়তারা করছেন। স্থানীয়রা জানান, আনোয়ারুল আলম সেন্টু সভাপতি’র পদ দখলে রাখার জন্য নানা কুটকৌশল করছেন। নিজের চাচাতো বোনকে দাতা সদস্য করার চেষ্টা করছেন। এবার কোন অবস্থাতেই তাকে চোরাই পথে কমিটি করতে দেয়া হবে না। যথাযথ নিয়েমে স্বচ্ছতা ও ব্যালটে ভোটের মাধ্যমে কমিটি গঠনে এলাকাবাসি বদ্ধপরিকর। এসব অভিযোগের ব্যাপারে সভাপতি সৈয়দ আনোয়ারুল আলম সেন্টু’র নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরাসরি দেখা করে সব বিষয়ে জবাব দিবেন। কিন্তু তিনি পরবর্তীতে আর আসেননি।

প্রধান শিক্ষকের নিকট মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দাতা সদস্য হওয়ার জন্য জলি খাতুন নামে ব্যাংকে টাকা জমা দেয়ার কোন মুল রশিদ কেউ তাকে দেয়নি। তবে তিনি শুনেছেন ওই নামে টাকা জমা হয়েছে। নির্দিষ্ট সময় পরে টাকা জমার রশিদ দিলে গ্রহনযোগ্য হবে কি-না ? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী আর কারো নিকট হতে কোন রশিদ বা নগদ টাকা নেয়ার কোন সুযোগ নেই। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সুলতান মাহমুদ বলেন, কোন কিছুর বিনিময়ে প্রধান শিক্ষক যদি অনিয়মে দাতা সদস্য করেন বা কমিটি গঠনে কোন অনিয়ম করেন, সে দায়ভার তাকেই নিতে হবে।