নড়াইলে খাদ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ

0
51
নড়াইলে খাদ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ
নড়াইলে খাদ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার

নড়াইলের কালিয়া উপজেলার বড়দিয়া খাদ্য গুদামে ধান সংগ্রহে ব্যপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে উপজেলার বড়দিয়া খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লিটন মন্ডলের বিরুদ্ধে। প্রতি কার্ডে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা না দিলে বিভিন্ন সমস্যা দেখিয়ে ধান ফিরিয়ে দেন তিনি। খাশিয়াল ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, লিটন মোন্ডল ও কৃষকদের সাথে মিটিংয়ের মাধ্যমে প্রতি কার্ডে ২ হাজার টাকা, প্রতি বস্তায় ৪২ কেজি ধান ও আদ্রতা ১৬ হলেও নিতে হবে এমন সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে চলছে ধান সংগ্রহ। এ পর্যন্ত ১৮৬ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করে ৬২ জন কৃষকের কাছ থেকে ঘুষ হিসাবে ১ লক্ষ ২৪ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন ওই কর্মকর্তা। সম্প্রতি কৃষকদের সাথে খাদ্য কর্মকর্তার গোপন বৈঠকের ভিডিও ফাঁস হলে বিষয়টি জানা যায়।

ভিডিও ক্লিপে দেখা যায়, জনৈক কৃষক তার পারিবারিক সমস্যা উল্লেখ করে ঘুষের টাকা দিবেনা বলায় খাদ্য কর্মকর্তা উত্তেজিত হয়ে পড়েন এবং চেয়ারম্যানের রেফারেন্স দিয়ে বলেন, সকলে একসাথে মিটিং করে প্রতি কার্ডে ২ হাজার টাকা দেওয়ার কথা, আপনি কেন দিবেন না? এক পর্যায়ে আরো বলেন, টিসি ফুড ও ডিসিফুডকে টাকা না দিলে তারা স্বাক্ষর করেননা। এইতো সেদিনও টিসি ফুডকে ২২ হাজার টাকা দিয়েছি আবার ডিসি ফুডকে দিয়েছি ১০ হাজার টাকা। আপনাদের টাকা আমার কাছে তো রেখে দেইনা? এছাড়া কোন কৃষক ঘুষের টাকা না দিলে তাকে নানাভাবে হয়রানি করেন তিনি। বর্তমানে বস্তা সংকটের দোহাই দিয়ে ধান সংগ্রহ বন্ধ রাখায় ওই কৃষকদের সাথে লিটন মোন্ডলের উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হলে ভিডিওতে ভুক্তভোগী কৃষক সংবাদ সম্মেলন করার হুমকি দিয়েছেন। কিন্তু তাতেও লিটন মোন্ডল বিচলিত হননি।

জয়নগর ইউনিয়নের রামপুর গ্রামের লটারী প্রাপ্ত কৃষক নাজির জানান, বড়দিয়া গোডাউনে ৩টন ধান নিয়ে গেলে ৩ হাজার টাকা চান ওই কর্মকর্তা। আমি ১হাজার দিতে চাইলে নেয় নাই। পরে ধান ফেরত নিয়ে আসছি।

ওই গ্রামের মুনছুর শেখ জানান, লটারীতে নির্বাচীত হয়ে গোডাউনে ধান নিয়ে গেলে আমার কাছে ৩ হাজার টাকা চায়। ওই ধান ফিরিয়ে আনতে গেলে অনেক টাকা খরচ হয়ে যাবে তাই কথাবর্তা বলে ২ হাজার ৫ শত টাকা দিয়ে ধান দেই।

একই গ্রামের ইমাম খান জানান, বড়দিয়া গোডাউনে ধান দিতে চাইলে খাদ্য কর্মকর্তা আমাকে একাউন্ট খুলতে বললে আমি একাউন্ট খুলে ধান নিয়ে গেলে বলেন ৩ হাজার টাকা দিতে হবে। কিন্তু ওই টাকা দেওয়ার মত সংগতি আমার নেই বিধায় ধান নিয়ে ফেরত চলে আসি। পরবর্তীতে বিষয়টি স্থাণীয় সামাজিক ব্যক্তিত্ব আয়েদ আলী কাকাকে জানালে শুনে দেখবেন বলে জানান।

এ বিষয়ে আয়েদ আলী খান জানান, আমাদের গ্রামের অনেকেরই অনলাইনে ধান বেধেছিল বড়দিয়া গোডাউনে। তারা আমাকে জানালে গোডাউনে গিয়ে খাদ্য কর্মকর্তাকে অনেক অনুরোধ করলেও টাকা ছাড়া ধান নিতে পারবেনা বলে জানিয়ে দেয়। এরপর অনেকে ধান দিয়েছে আবার অনেকে ফিরিয়ে নিয়ে গেছে। এ বিষয় নিয়ে খাদ্য কর্মকর্তার সাথে আমার কথা কাটাকাটি হলে আমি সংবাদ সম্মেলন করবো বললে, সে বলে আপনার যা খুশী করেন।

এ ছাড়া নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ভুক্তভোগি কৃষক বলেন, ‘ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে গোডাউনে ধান দিলে এসব কোন কিছুই গুদাম কর্মকর্তা দেখেন না। সাধারণ কৃষক ধান নিয়ে আসলে নানা সমস্যা দেখিয়ে নেওয়া যাবেনা বলে ফিরিয়ে দেন। অথচ একই ধান ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে আসলে গুদাম কর্তৃপক্ষ নিয়ে নিচ্ছে টন প্রতি হাজার টাকার বিনিময়ে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করছেন তারা।

অফিস সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে ৭ মে থেকে সরকারিভাবে ধান সংগ্রহ শুরু হয়েছে এবং ৩১ আগষ্ট পর্যন্ত এ সংগ্রহ চলবে। চলতি আমন মৌসুমে নড়াগাতী থানার ৫ ইউনিয়নে মোট ১৩৭ জন লটারীপ্রাপ্ত কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি ৪১১ মেট্রিকটন ধান ক্রয় করা হবে। ৩০ টাকা কেজি দরে একজন কৃষক সর্বোচ্চ ৭৫ মন ধান দিতে পারবে। ২৪ জুলাই পর্যন্ত সংগ্রহ হয়েছে ১৮৬ মেঃ টন ধান। বস্তা সংকটের অজুহাতে বর্তমানে ধান সংগ্রহ বন্ধ থাকায় সাধারণ কৃষকের মাঝে দেখা দিয়েছে অসন্তোষ। এতে কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জন অসম্ভব হবে বলে সচেতন মহলের ধারনা। এ বিষয়ে খাশিয়াল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বি এম বরকতুল্লাহ বলেন, এ বিষয়ে তাঁর কোন সংশ্লিষ্টতা নেই।

এ বিষয়ে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোঃ মান্নান আলী বলেন, টাকা লেন-দেনের বিষয়টি সত্য নয়। ওই খাদ্য কর্মকর্তা টাকা পয়সার বিষয় নিয়ে কোথায় কি করেছে সেটা আমি জানিনা।

এ বিষয়ে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নিত্যানন্দ কুন্ডু বলেন, তিনি ২ মাস হলো এ দায়িত্ব গ্রহন করে এখনো বড়দিয়া আসেন নি। লটারীতে নির্বাচীত কৃষকদের কাছ থেকে ৪০ কেজি ধান ও আদ্রতা সর্বোচ্চ ১৪ পর্যন্ত নিতে পারবে। কোন টাকা পয়সা বা আদ্রতা ও ধান বেশী নেওয়া যাবেনা। তবে টাকা লেন-দেন ও মিটিং সম্বন্ধে তিনি কিছুই জানেন না বলে জানান।