নড়াইলে খাদ্য গুদাম ভরছে সিন্ডিকেটের ধান-চালে!

0
11
নড়াইল শহরের মাস্টার প্লান নিয়ে মত বিনিময়, চিত্রার পাড়ে অ*বৈধ স্থাপনা উ*চ্ছেদ হবে
নড়াইল, Narail District

স্টাফ রিপোর্টার

নড়াইলে সরকারি খাদ্য গুদাম ভরছে সিন্ডিকেটের ধানে। এদিকে চুক্তিবদ্ধ একাধিক চালকল বন্ধ থাকলেও এসব মিলাররা বাইরে থেকে কিনে চাল গুদামে দিচ্ছে। ধান-চাল সংগ্রহে এসব অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের তীর সিন্ডিকেটের পাশাপাশি গুদাম কর্মকর্তার দিকেও।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে সরকারি নির্ধারিত মূল্য ৩০ টাকা কেজি দরে ১ হাজার ৯৬৫ মেঃটন ধান এবং ৪৪ টাকা কেজি দরে মিলের উৎপাদন ক্ষমতা অনুযায়ী ১৪টি চালকল থেকে ২ হাজার ৭২৬ মেঃ টন চাল সংগ্রহ চলছে। এ পর্যন্ত ১ হাজার ৬শ ৫৩ মেঃটন ধান এবং ১ হাজার ৯শ ২১ মেঃ টন চাল সংগ্রহ করা হয়েছে। গত ২৪মে থেকে এ ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে। ৩১ আগস্ট পর্যন্ত এ সংগ্রহ অভিযান চলবে।

সদরের হাটবাড়িয়া এলাকার কৃষক দেলোয়ার হোসেন এ প্রতিনিধিকে বলেন, লটারির মাধ্যমে নড়াইল সরকারি খাদ্য গুদামে ৩ মেঃটন ধান দেওয়ার তালিকাপ্রাপ্ত হই। মোবাইলে ম্যাসেজ আসে গত ১৫ জুনের মধ্যে এ ধান দিতে হবে। এর ম্যাসেজ আসে আপনার ধান দেওয়া হয়ে গেছে। এরপর ম্যাসেজ আসে আপনার টাকা ব্যাংক একাউন্ট থেকে উত্তোলন করা হয়ে গেছে। বিষয়টি সদরের খাদ্য কর্মকর্তাকে জানালে জানতে পারি ওই খাদ্য কর্মকর্তার পূর্ব পরিচিত টমাস নামে এক ছেলে আমার ধান দিয়েছে। পরে তিনি টমাসের কাছ থেকে ২ হাজার টাকা নিয়ে আমাকে দেয়। কিভাবে আমার স্বাক্ষর জাল করে টাকা তোলা হলো তা বলতে পারবো না।

নাম না প্রকাশ করার স্বার্থে একাধিক ধান ব্যবসায়ী, কৃষক ও খাদ্য গুদামের শ্রমিকরা জানান, এখন আর কৃষকরা গুদামে ধান দেয়না। এখন একটি সিন্ডকেট এবং কয়েক ধান-চাল ব্যবসায়ী ধান দিচ্ছে। এই সিন্ডকেট বিভিন্ন এলাকার গরীব কৃষকদের সামান্য অর্থের বিনিময়ে ম্যানেজ করে তাদের কৃষি কার্ড, ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে লটারিতে তাদের নাম তালিকাভূক্তির জন্য আবেদনের ব্যবস্থা করে। পরে লটারিতে তালিকাভূক্ত হলে স্বাক্ষরসহ ১০টাকা একাউন্টের ব্যাংকের চেক রেখে দেয় এবং ব্যাংকের সাথে যোগাযোগ করে টাকা উত্তোলন করে। খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা নিজেই বিভিন্ন হাট-বাজারের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ধান ক্রয় করে গুদামে দিচ্ছেন। ক্রয়কৃত ধানের মান ঠিক আছে কিনা, ধান পরিস্কার ও নির্দিষ্ট আর্দতা পরিমাপ করে বস্তাবন্দি করে গুদামজাত করা হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নে শ্রমিকরা কোনো সন্তোষজনক উত্তর দেননি।

নিয়মানুয়ী চালকল মালিক নিজ মিলে ছাঁটাই করে সরকারি খাদ্য গুদামে সরবরাহ করার কথা থাকলেও একাধিক চালকল বন্ধ পাওয়া গেছে। এসব মিলাররা বাইরে থেকে চাল কিনে গুদামে সরবরাহ করছে। আবার কোনো কোনো চালকল মালিক চালের এক চালান নিজের মিল থেকে পরের চালান বাইরে থেকে দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে।

কলোড়া ইউনিয়নের পাচুড়িয়া এলাকার অমিত রাইস মিল এবার ৫২.৫৩০ মেঃটন চাল সরবরাহের বরাদ্দ পেয়েছে। সরেজমিনে উজিরপুর গ্রামে এ চালকলে গেলে দেখা যায়,চারপাশের্^ ময়লা ও আগাছা জন্ম নিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা রমা সান্যাল (৬০) জানান, চাতালটি প্রায় ৩বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। স্থানীয়রা জানান, তিনি খুলনায় ডাউলের ব্যবসা করেন।

এ বিষয়ে আনন্দ সাহা বলেন,ব্যবসায় লসের কারনে মিল বন্ধ রয়েছে। অন্য একজনকে (নাম বলেননি) দায়িত্ব দিয়েছিলাম। সে চাল দিয়েছে। এই বলে ফোন রেখে দেন।

নড়াইলের ভাদুলীডাঙ্গা এলাকার শ্রীমা রাইস মিল এবার ৮০.৬৭০ মেঃটন চাল দেবার কথা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা জানান, গত পৌষ মাস থেকে তার মিল বন্ধ রয়েছে। তবে এ মিলের মালিক অমরেন্দ্রনাথ দাশ বলেন, গত এক মাস বন্ধ থাকলেও সমস্ত চাল নিজ মিলে তৈরি করে গুদামে দেওয়া হয়েছে।
জেলা ধান-চাল ক্রয় এবং গুদামজাতকৃত চালের মান যাচাই কমিটির সদস্য নড়াইল-২ আসনের এমপির প্রতিনিধি তাজুল ইসলাম ক্ষোভের সাথে বলেন, এসব অনিয়মের সুযোগ নিতে আমাকে এবার কোনো মিটিং-এ ডাকা হয়নি। ধান সংগ্রহে কৃষকদের লটারি স্বচ্ছতার ভিত্তিতে হয়নি। শুনেছি, সদরের খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা দু’তিনজনকে দিয়ে ধান ক্রয় করছেন। এছাড়া একাধিক চুক্তিবদ্ধ মিলার বাইরে থেকে চাল কিনে গুদামে দেওয়ার কথাও শুনেছি।

সদরের বাগডাঙ্গা বাজারের ধান ব্যবসায়ী মতিয়ার রহমান, আমি দেড়’শ মন ধান বিক্রি করেছি। এসব ধান নসিমনে সদরের খাদ্য গুদাম কর্মকর্তার নামে গুদামে গিয়েছে। যেহেতু তার নামে ধান গিয়েছে তাহলে বুঝতে হবে সে ধান কিনেছে। শুনেছি সিঙ্গা ও গোবরা বাজারের ব্যবসায়ীরাও ওই কর্মকর্তার নামে ধান গুদামে পাঠিয়েছে।

বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারন সম্পাদক অ্যাডঃ নজরুল ইসলাম বলেন, নড়াইলে বোরো ধান ও চাল সংগ্রহে সিন্ডিকেটের দৌরাতেœর অভিযোগ অনেক পুরানো। নড়াইলের কয়েক মিলার কম দামে নিন্মমানের চাল কিনে তা খাদ্য গুদামে দিচ্ছেন এবং সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ধান দেওয়া হচ্ছে। কৃষককে বাঁচানোর স্বার্থে চিরস্থায়ীভাবে এসব নিয়ম-দূর্নীতি বন্ধ হওয়া প্রয়োজন।

অভিযুক্ত সদর খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অভিষেক বিশ্বাস এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,অনেকে অনেক কথা বলতে পারে। এটা আদৌ সত্য নয়। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। আপনার সাথে সামনাসামনি কথা বলবো।

সদর উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা পলাশ মূর্খাজী এ প্রতিনিধিকে বলেন, এসব অনিয়ম-অভিযোগ সম্পর্কে বলেন, অধিদপ্তরের উদ্যোগে খাদ্য কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠন করা টিম চালকলগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা সরেজমিন দেখে তারপর চুক্তি করা হয়েছে। তারা নিয়মের মধ্য থেকেই ধান-চাল দিচ্ছে। তবে কোনো ধরনের অভিযোগ পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা নিজে ধান ক্রয় করে মিলে দিচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নে বলেন, লটারির মাধ্যমে ৬৫৫জন কৃষক ধান দিচ্ছে। এখানে সমস্ত দায় দায়িত্ব কৃষকদের। কাওকে দোষ দেওয়ার সুযোগ নেই।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নিত্যানন্দ কুন্ডু (অতিরিক্ত দায়িত্ব) বলেন, চালকল মালিকদের চুক্তিবদ্ধ হবার পর দু’মাস আগে যোগদান করেছি। এজন্য অঢ়ল মিল বা সচল মিল সম্পর্কে বলতে পারবো না। তবে লিখিত কোনো াভিযোগ পেলে তদন্ত কওে দেখা হবে। খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার ধান ক্রয়ের বিষয়ে বলেন, এখানে কৃষক ছাড়া অন্য কানো ধান কেনা এবং অর্থ উত্তোলনের কোনো সুযোগ নেই। যারা বলছে তারা না জেনে বলছে।