স্টাফ রিপোর্টার
খ্যাতিমান চিত্রশিল্পী এস.এম সুলতানের স্মতি রক্ষার্থে ২০০৩ সালে নির্মিত এস.এম সুলতান কমপ্লেক্স এখনও পূর্ণতা পায়নি। শিশুদের জন্য নির্মিত ৬০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৫ ফুট প্রস্থের দ্বিতল বিশিষ্ট বিশাল একটি ইাঞ্জন চালিত ভ্রমন তরী নৌকাটি বিভিন্ন স্থানে কাঠ ঘুনে ধরেছে। মাঝে মধ্যে যেনতেনোভাবে সংস্কার করা হলেও নৌকার মূল কাঠামো আস্তে আস্তে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কমপ্লেক্স সংলগ্ন চিত্রার তীরে যে স্থানে নৌকাটি রাখা হয়েছে সে স্থানটি ভাঙ্গণের কবলে পড়লেও শিল্পীর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে কিছু সংস্কার করা হয়েছে। তবে ভারী বৃষ্টিপাত হলে আবার ভাঙ্গনের কবলে পড়তে পারে।
কমপ্লেক্স দেখতে আসা পর্যটকদের বসার ব্যবস্থা, বিভিন্ন এলাকা থেকে নৌপথে আসা নৌকা ভেড়ানো এবং বাড়তি আনন্দ উপভোগের বিষয়টি মাথায় রেখে কমপ্লেক্স সংলগ্ন চিত্রা নদীর তীরে ২০১৮সালের জুনে পর্যটন মন্ত্রনালয় থেকে ২০লাখ টাকা ব্যয়ে ‘সুলতান ঘাট’ নির্মাণ কাজ শুরুর দু’মাস পর বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় তৎকালীন নেজারত ডেপুটি কালেক্টর জানিয়েছিলেন,এ টাকায় ঘাট নির্মাণ সম্ভব নয়। তাই নতুন নকশায় গণপূর্ত বিভাগের মাধ্যমে নান্দনিক ও দৃষ্টিনন্দন ঘাট নির্মাণের জন্য ১কোটি টাকার একটি প্রজেক্ট পাঠানো হয়েছে। পরে এটি আর পাশ হয়নি। গত কয়েকদিন আগে ঘাট এলাকায় সুলতান কমপ্লেকের কিউরেটরের নেতৃত্বে বাঁশ দিয়ে একটি অস্থায়ী ঘাট করার সময় পাশ^বর্তী এক ব্যক্তি নদীর পাড়ের জায়গা নিজেদের বলে দাবি করে কাজ বন্ধ দেওয়ার চেষ্টা করে।
সুলতান কমপ্লেক্সের কিউরেটর তন্দ্রা মুখার্জ্জী বলেন, খুলনা বিভাগীয় কমিশনার এবং জেলা প্রশাসন থেকে অনুদানকৃত দেড় লাখ টাকা দিয়ে শিল্পীর নৌকার সংস্কার ও নৌকার চারপাশ পার্কিং টাইলস, নৌকা রং করা, সুলতান ঘাট এলাকা পরিস্কার এবং দর্শনার্থী ও নৌ ভ্রমনের জন্য বাঁশ দিয়ে একটি অস্থায়ী ঘাট নির্মাণ করা হয়েছে। অর্থ বরাদ্দ বেশী হলে ভাঙ্গন এলাকায় প্যালাসাইটিং দিয়ে মজবুত করে করা যেত। তিনি আরও বলেন, এ ঘাট র্নিমাণের সময় এক ব্যক্তি হটাৎ করে ঘাট এলাকাটি তাদের বলে দাবি করে। বিষয় জেলা প্রশাসক মহোদয়কে জানিয়েছি।
জায়গার মালিকানা দাবি করা স্থানীয় মেহেদী হাসান সুজন বলেন, এটি আমাদের পৈত্রিক জায়গা। ঘাট এলাকায় আমাদের ১৯শতাংশ জায়গা রয়েছে। শিল্পী সুলতানের নৌকা যে স্থানে রাখা হয়েছে সেই জায়গার ২শতাংশ জমি নিয়ে ৮-১০ বছর আগে সরকারের বিরুদ্ধে একটি দেওয়ানী মামলা দায়ের করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশফাকুল হক চেীধুরী বলেন, শিল্পী সুলতানের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে আমরা দৃষ্টিনন্দন সুলতান ঘাট নির্মাণের চেষ্টা করবো। নদীর কিনারা যারা দাবি করছে তাদের বিরুদ্ধে নোটিশ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এছাড়া সুলতান কমপ্লেক্সে উপযুক্ত পরিবেশে শিল্পীর ছবি রাখতে নতুন চিত্র গ্যালারি, নৌকা সংরক্ষণ ও সংস্কারসহ কমপ্লেক্সকে পরিপূর্ণ করতে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর মাধ্যমে ২০কোটি টাকার একটি ডিপিপি হাতে নেওয়া হয়েছে। এটি যাতে বরাদ্দ পাওয়া যায় সেজন্য চেষ্টা চলছে।
নড়াইলে ১০ আগস্ট বরেণ্য চিত্রশিল্পী এস.এম সুলতানের ৯৯তম জন্মবার্ষিকী। দিনটিকে ঘিরে নড়াইল জেলা প্রশাসন ও সুলতান ফাউন্ডেশন এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী যৌথভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ১০আগস্ট প্রয়াত এই শিল্পীর জন্মদিনে সুলতান কমপ্লেক্সে শিল্পীর মাজারে পুস্পমাল্য অর্পণ, শিল্পীর কর্মের উপর ১শ ফুট লম্বা শিশুদের অংকিত চিত্রকর্ম প্রদর্শনী, আর্টক্যাম্প, শিশু চিত্রকর্মশালা, চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, শিশুদের নিয়ে নৌকা ভ্রমন, শিল্পীর চিত্রকর্মের পর্যালোচনা, আলোচনা সভা ও শিল্পীর জীবনের উপর প্রামান্যচিত্র ‘আদমসুরত’।
বরেণ্য এই শিল্পী ১৯২৪ সালের ১০ আগষ্ট নড়াইল শহরের মাছিমদিয়ায় জন্মগ্রহন করেন এবং ১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর বার্ধক্যজনিত কারনে যশোরের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।