স্টাফ রিপোর্টার
নবজাতক পৃথিবীর আলো দেখলেও সে তার মাকে কখনো দেখতে পারবে না। প্রসবের সময় চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় মা মিতা বেগমের (৩২) মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সে নড়াইল পৌরসভার রঘুনাথপুর এলাকার জাকির হোসেনের স্ত্রী। রোববার (২৬ মে) তাকে স্থানীয় গোরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
ভূক্তভোগির পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার (২৪ মে) সকালে গৃহবধূ মিতা বেগমের প্রসব বেদনা উঠলে তিনি শহরের মডার্ণ ক্লিনিকে ভর্তি হয়। সকাল ১০টার দিকে নড়াইল সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ সুব্রত কুমার দে তার সিজার অপারেশন করেন। সন্ধ্যার দিকে ওই চিকিৎসক রোগির পরিবারকে জানায় রোগির ব্লাড প্রেসার কমে যাচ্ছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনা অথবা যশোরে রেফার করতে হবে। চিকিৎসকের কথামতো রোগিকে যশোর ২৫০শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে গেলে অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। শনিবার ভোরে তার মৃত্যু ঘটে।
মিতা বেগমের ভাসুর ইমারুল হাসান খোকন ও সাজাদ হোসেন জানান, অপারেশনের পর রোগিকে ৩ ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়। যখন যশোর নেওয়া হয়ও তখনও তার শরীর রক্ত শূন্যতা ছিল। যশোর মেডিকেল কলেজের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন ভুল অপারেশনের জন্য মিতা বেগমের মৃত্যু হয়েছে। তারা আমাদের জানিয়েছেন, সিজার অপারেশনের সময় চিকিৎসক মূত্র থলি কেটে ফেলে। পরে সঠিক চিকিৎসা না দিয়ে একটি নলের সাথে রক্ত নালি সাদা কসটেপ দিয়ে জোড়াতালি দিয়ে বেধে দেয়। পরে ঠিকমতো রক্ত চলাচল করতে পারেনি। রোগির রক্ত শূন্যতা ছিল। ব্লাড প্রেসার কমে যায়।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ সুব্রত কুমার দে বলেন, অপারেশন ভুল ছিল না। মূত্রথলি বা অন্য কোনো নালি কাটা পড়েনি। তার ব্লাড প্রেসার কম ছিল। এজন্য তাকে যশোরে রেফার করা হয়েছিল। তার মৃত্যুর কারণ কি এ প্রশ্ন করলে তিনি সদুত্তর দিতে পারেননি।
এ বিষয়ে নড়াইল সদর থানার ওসি (তদন্ত) মোঃ সাজেদুল ইসলাম বলেন, এ ধরণের কোনো অভিযোগ আমরা পাইনি। পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে নড়াইল পৌর মেয়র আঞ্জুমান আরা বলেন, শুনেছি মিতা বেগমের অপারেশনের চিকিৎসকের ভুল ছিল। এখানে যদি কোনো গাফিলতি থাকে তাহলে দ্রুত রোগিকে রেফার করা উচিত ছিল। তা না করে চিকিৎসক এমন সময় রেফার করেছে যখন সুচিকিৎসার সময় পায়নি। মিতুর সারা শরীর কালো হয়ে গেছে। অপারেশনে চিকিৎসকের ভুল না হলে এরকম হতে পারে না। বিষয়টি তদন্ত করা উচিত বলে মন্তব্য করেন।
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের ১২ জানুয়ারী ওই চিকিৎসক ডাঃ সুব্রত কুমারের ভুল অপারেশনে সদরের হবখালী ইউনিয়নের বাগডাঙ্গা গ্রামের আতিয়ার সরদারের কন্যা ববিতা খাতুন (৩০) মৃত্যুবরণ করে। পরিবারের অভিযোগ ছিল ২০২১ সালের ১৯ নভেম্বর নড়াইলের জনতা ক্লিনিকে অপারেশনের সময় মল-মূত্রথলিসহ কয়েক নালি কেটে ফেলে যা তার মৃত্যুর কারণ ছিল। এ ঘটনা নড়াইলের সিভিল সার্জন অফিস একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। এরপর তদন্ত আলোর মুখ দেখেছে কিনা তা জানা যায়নি।
এ বিষয়ে জানতে নড়াইলের সিভিল সার্জন ডাঃ সাজেদা বেগম জানান, ২০২২ সালে ডাঃ সুব্রত কুমারের বিরুদ্ধে তদন্তের বিষয়টি তার জানা নেই। তবে মিতু বেগমের অভিযোগ আমি মৌখিকভাবে পেয়েছি। এ বিষয়ে ওই চিকিসকের সাথেও কথা বলেছি। বিষয়টি খোঁজ-খবর নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নিব।