মৌলিক শিক্ষা- মীর আব্দুল গণি

0
21
মৌলিক শিক্ষা
মৌলিক শিক্ষা

মীর আব্দুল গণি

শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়নে মৌলিক শিক্ষার গুরুত্ব-

শিক্ষার মৌলিক বিষয়-এর গুরুত্ব নিয়ে অতি সংক্ষেপে আলোচনা করবো।
শিক্ষার প্রত্যাশিত ফল নির্ভর করে মৌলিক শিক্ষা তথা শিক্ষার-মৌলিক-বিষয় শিক্ষাদানের উপর।
নির্মাণ বা স্থাপনা টিকে থাকে ভিত (Base) এর উপর। ভিত একাধিক উপাদানের সমষ্টি।
সমাজ-রাষ্ট্র গঠিত হয় বেশ কিছু ‘‘নীতি-নিয়ম ও মানবিক মূল্যবোধসমূহের‘‘ সমন্বয়ে ও সমষ্টিতে।
এবং ঐ সকল ‘‘নীতি-নিয়ম ও মানবিক মূল্যবোধসমূহ‘ হলো সমাজ-রাষ্ট্রের ভিত।
ব্যক্তি সমাজ-রাষ্ট্রের সংগঠক হলেও নিজে ঐ সকল মৌলিক উপাদানসমূহ তথা নীতি-নিয়ম ও মূল্যবোধসমূহ যথাযত জানেন না। তাকে শিখতে হয় এবং শিক্ষা দিতে হয়।
অর্থাৎ আদর্শ সমাজ-রাষ্ট্র গড়ে তুলতে ঐ সকল মৌলিক উপাদানসমূহ বা বিষয়সমূহ শেখা ব্যক্তির মৌলিক শিক্ষা তথা ব্যক্তির শিক্ষার মৌলিক বিষয়।
শিক্ষা বিজ্ঞান (Science of Teaching) হলো- মৌলিক শিক্ষা বা শিক্ষার মৌলিক বিষয়সমূহ শিক্ষাদানের
প্রক্রিয়া-পদ্ধতি। যে প্রক্রিয়া-পদ্ধতিকে ‘‘আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা‘‘ বলা হয়।
প্রশ্ন হলো মৌলিক শিক্ষা বা শিক্ষার মৌলিক বিষয়সমূহ জানার উপায় কি?
শিক্ষা সম্পর্কে মণীষীদের বাণীসমূহ বিষয়টি আমাদের জন্য সহজ করে দিয়েছেন।
মনীষীদের বাণীসমূহ-
যেমন
১। ‘‘শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড।‘‘ (ভলতেয়ার)
২। ‘‘জাতিকে বদলে দিবার এক মাত্র হাতিয়ার ‘‘শিক্ষা।‘‘ (নেলসন ম্যান্ডেলা )
৩। ‘‘মানুষ ভদ্র হয়ে জন্মায় না, ভদ্র হতে হয়।‘‘ (কনফুসিয়াস)
(মূলতঃ ভদ্র করে তুলতে হয়।)
৪। ‘‘শিক্ষিত ‘‘মা‘‘ দাও শিক্ষিত জাতি দেবো।‘‘ (নেপোলিয়ন)
এখন আমরা প্রতিটি বাণী নিয়ে যথা সম্ভব প্রশ্ন উত্থাপন করবো এবং প্রশ্নসমূহের বিশ্লেষণমূলক আলোচনায় প্রাপ্ত যৌক্তিক উত্তরই হবে বাণীটির অন্তর্নিহিত উপাদানসমূহ যাহা আদর্শ সমাজ-রাষ্ট্র গঠনে মৌলিক শিক্ষা বা শিক্ষার মৌলিক বিষয়।
বাণী
১। ‘‘শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড।‘‘
বাণীটি নিয়ে যথা সম্ভব প্রশ্ন উত্থাপন-
যেমন
ক) শিক্ষা কি?
খ) জাতি কি?
গ) জাতির মেরুদণ্ড কি? জাতির মেরুদণ্ডের উপাদান বা উপকরণসমূহ কি কি?
ঘ) শিক্ষাদান মূলতঃ কি? …..ইত্যাদি।
উক্ত প্রশ্নসমূহের বিশ্লেষণমূলক আলোচনা :
যেমন
ক) শিক্ষা কী?
শিক্ষা শব্দের আভিধানিক অর্থ জ্ঞানার্জন।
আমরা জানি ব্যক্তি-জীবন, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে প্রতিটি ব্যক্তিকেই কিছু নীতি-নিয়ম ও মূল্যবোধ-সম্পন্ন আচরণশীল হতে হয়। কিন্তু ব্যক্তি নিজ থেকে প্রয়োজনীয় সে সকল কাঙ্খিত পর্যায়ে অর্জন করতে পারেন না। ১
(যদি কেউ পারেন সে ব্যতিক্রম।)
বাস্তবতা হলো কারো কাছ থেকে ব্যক্তিকে সে সকল বিষয় শিখতে হয়। ব্যক্তির এই (জ্ঞানার্জণ)
‘ শেখাকেই শিক্ষা বলা হয়।‘
যিনি শেখান বা শিক্ষা দান করেন তিনি শিক্ষাদাতা বা শিক্ষক।
এ পর্যায় হতে শিক্ষা দেওয়াকে আমরা ‘’শিক্ষাদান’’ বলে উল্লেখ করবো।
(‘’শিক্ষাদান’’ মূলতঃ কী? ঘ) অংশে সংক্ষেপে আলোচনা করা হয়েছে।)

খ) জাতি কি?
সহজ ও সংক্ষিপ্ত:
রাষ্ট্রীয়-পরিমন্ডলে ‘‘রাষ্ট্র কর্তৃক প্রণিত ও আরোপিত আইন, নীতি নিয়ম ও মানবিক মূল্যবোধ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত
ও পরিচালিত ব্যক্তি-সমষ্টি বা জন-সমষ্টিই হলো জাতি।‘‘
বা আইন, নীতি, নিয়ম এবং মানবিক ও নৈতিকমূল্যবোধ…ই‌ত্যাদি দ্বারা রাষ্ট্র কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত জনসমষ্টিই হলো জাতি।
এ পর্যায়ে জাতি গড়ে উঠার উপাদান বা উপকরণ রূপে আমরা দেখতে পাই-
রাষ্ট্র কর্তৃক প্রণিত আইন, নীতি-নিয়ম এবং ব্যক্তি সমষ্টির মানবিক ও নৈতিক মূল্যবোধ……ইত্যাদি।
(মৌলিক শিক্ষা বা শিক্ষার মৌলিক বিষয়।)
গ) জাতির মেরুদণ্ড কি?
উত্তর- যে সকল উপাদান উপকরণসমূহকে ভিত্তি করে জাতি গড়ে উঠে সেই সকল উপাদান ও উপকরণসমূহের সমষ্টিই হলো জাতির মেরুদণ্ড।
অর্থাৎ- জাতির মেরুদণ্ড হলো-
রাষ্ট্র কর্তৃক প্রণিত আইন, নীতি-নিয়ম এবং ব্যক্তি সমষ্টির মানবিক ও নৈতিক মূল্যবোধ……ইত্যাদি।
এবং স্বতন্ত্রভাবে ঐ সকলই হলো জাতির মেরুদণ্ডের এক একটি উপাদান।

মূল বাণী
১। ‘‘শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড‘‘
‘‘শিক্ষা‘‘কে কেনো জাতির মেরুদণ্ড বলা হয় ?
প্রশ্নটির উত্তর পেতে হলে জাতির মূল উপাদান ব্যক্তিসমষ্টির উৎস ও তাদের পরিবারসমূহের বৈশিষ্ট্য অবশ্যই বিবেচনায় নিয়ে আলোচনা করতে হবে।
কারণ আমরা লক্ষ্য করলেই দেখতে পাবো বিবিধ কারণে বিভিন্ন পরিবারে ব্যক্তির মানবিক মূল্যবোধ সমূহের সম্মৃদ্ধি বা উপলব্ধির-মাণ ভিন্ন ভিন্ন মাত্রার হয়ে থাকে।
(কারণসমূহ মূল লেখাটির একটি অধ্যায়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।)
অর্থাৎ যে সকল নীতি-নিয়ম ও মূল্যবোধসমূহকে ভিত্তি করে জাতি গড়ে উঠে ব্যক্তি নিজে ঐ সকল কাঙ্খিত পর্যায়ে অর্জন করতে সক্ষম হন না এবং পরিবারও তাকে সম্মৃদ্ধ করে তুলতে পারেন না।
(কেউ হলে ব্যতিক্রম। ব্যতিক্রম কখনই জাতীয়-মাণ হতে পারে না।)
ফলে শিক্ষা-দিয়ে ব্যক্তিসমষ্টিকে ঐ সকল নীতিনিয়ম ও মূল্যবোধসমূহে সম্মৃদ্ধ করে জাতি গঠনের যোগ্য করে তোলা হয়। (শিক্ষার মৌলিক বিষয়সমূহে শিক্ষাদান।)

যেহেতু শিক্ষা দিয়ে ব্যক্তি সমষ্টিকে জাতি গঠনের যোগ্য করে তোলা হয় সেহেতু শিক্ষাকে জাতির মেরুদণ্ড বলা হয়।
বাণী
২। ‘‘জাতিকে বদলে দিবার এক মাত্র হাতিয়ার হলো শিক্ষা।‘‘ (নেলসন ম্যান্ডেলা )
ব্যক্তির পারিবারিক ও তার স্বকীয়তাকে বদলায়ে দিবার এক মাত্র উপায়ই হলো শিক্ষা।
শিক্ষা দিয়ে ব্যক্তিসমষ্টিকে বদলে দিলেই জাতি বদলে যায়।
সে জন্যই বলেছেন- ‘‘জাতিকে বদলে দিবার এক মাত্র হাতিয়ার হলো শিক্ষা।‘‘

বাণী
৩। ‘‘মানুষ ভদ্র হয়ে জন্মায় না, ভদ্র হতে হয়।‘‘ (কনফুসিয়াস)
মানুষ মূলতঃ এক শ্রেণির প্রাণী প্রজাতি। জন্মগতভাবে স্বকীয় স্বভাবের বা তার পারিবারিক আচরণে আচরণশীল হতে থাকে। সমাজের কাঙ্খিত মূল্যবোধসম্পন্ন আচরণশীল সে নাও হতে পারে। সে জন্যই বলেছেন-
‘‘মানুষ ভদ্র হয়ে জন্মায় না,ভদ্র হতে হয়।‘‘
অর্থাৎ শিক্ষা দিয়ে মানবিক মূল্যবোধসমূহে ব্যক্তিকে সম্মৃদ্ধ করতে হয়। (ভদ্র করে তুলতে হয়।)

শিক্ষাদানের উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য কী?
শিক্ষাদানের উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য হলো-
ব্যক্তির ব্যক্তি জীবন ও তার বৃহৎ সমাজ-রাষ্ট্রীয় জীবনে প্রয়োজনীয় বিষয়সমূহে জ্ঞানদান ও তার করণীয় সম্পর্কে সচেতন, সক্ষম ও যোগ্য করে তোলা।
বৃহৎ সমাজ-রাষ্ট্রীয় জীবনে ব্যক্তির শিক্ষার প্রয়োজনীয় বিষয়সমূহের বৈশিষ্ট্য অনুসারে শিক্ষার বিষয়সমূহ আমরা নিম্নরূপে উল্লেখ করতে পারি-
১ক) মানবিক শিক্ষা
১খ) পুথিগত ও বিষয় ভিত্তিক শিক্ষা

১ক) মানবিক শিক্ষা
মানবিক শিক্ষা মূলতঃ যথাস্থানে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে ব্যক্তির মানসিক গঠনদান।
ব্যক্তি জীবন ও তার সমাজ-রাষ্ট্রীয় জীবনে প্রত্যক্ষভাবে অনেক বাস্তবতার সন্মুখীন হতে হয়।
তদ্রুপ ক্ষেত্রে আদর্শ নাগরিক হিসাবে তার করণীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে ব্যক্তি-স্বভাব বাস্তব-ধর্মী, ন্যায়, মানবিক ও আদর্শ আচরণশীল করে তোলা।
বই পুস্তক পড়ে ব্যক্তি ন্যায় ও আদর্শ আচরণশীল হতে পারেন না এবং তার পরিবারও শিক্ষা দিতে পারেন না।
লেখাটি সংক্ষিপ্ত রাখতে উদাহরণ দিচ্ছি না।)
মূলতঃ মৌলিক বিষয়সমূহের শিক্ষাদানের প্রক্রিয়া ও পদ্ধতিই হলো ‘‘আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা।‘‘
‘ যে কোনো উন্নত দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় এর প্রমাণ পাওয়া যায়।

মানবিক বিষয়ে শিক্ষাদানে মনীষীদের দিকনির্দেশনা-
শিশুর একটি নির্দিষ্ট বয়স হতেই পর্যায় ক্রমে মানবিক বিষয়সমূহ শিক্ষা দিতে বলেছেন।
যেমন প্লেটো রেপাবলিক-এ আদর্শ নাগরিক সমাজ গড়ে তোলার লক্ষ্যে বলা হয়েছে-
‘‘নগরের ঐ সকল শিশুদের যাদের বয়স ৬ হয় নাই তাদের কিছু নীতিনিয়ম ও মূল্যবোধ সমূহে শিক্ষা দিয়ে।‘‘
শিশু বয়সের মানসিকতার গুরুত্ব বুঝানোর জন্য অনেক মনীষী বলে থাকেন-
‘‘শিশুর মানসপট সাদা ক্যানভাসের মত, সেখানে যে চিত্র অঙ্কন করা হয় সেটা স্থায়িত্ব পায়।
শিশুর মানসপটে চিত্র অঙ্কন- বাক্যটি মানবিক শিক্ষার ক্ষেত্রে অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এ ক্ষেত্রে সত্তার বয়স, যত্ন, কৌশল ও শিক্ষাদাতার দক্ষতার গুরুত্ব বুঝায়।
বিশ্বের যে কোনো উন্নত দেশের বিশেষ করে জার্মানির কিন্ডারগার্ডেন ব্যবস্থা দেখলে বিষয়টি সহজেই বুঝা যায়। জার্মানিতে ৩ বছর বয়সে কিন্ডারগার্ডেন বাধ্যতা মূলক। বাধ্যতামূলক হওয়াতেই বোঝা যায় শিশু বয়সে শিক্ষার গুরুত্ব কত। (বিঃ দ্রষ্টব্য- ৩ বছর হতে ৬ বছর বয়স পর্যন্ত কোনো অক্ষর জ্ঞান দেয়া হয় না।)

শিশু বয়সেই যে প্রাণী সত্তার মনস্তাত্ত্বিক বা মানসিক পরিবর্তন সহজ তার একটি উদাহরণ:
আমরা দেখেছি একটি হরিণ শাবক ও একটি ব্যঘ্র শাবক অতি শিশু বয়স হতে এক সঙ্গে রেখে বড় করে তুললে স্বগোত্র হতে দূরে থাকাতে তাদের গোত্রগত আচরণ বা স্বভাব জাগ্রত হবার সুযোগ পায় না। ফলে তারা খাদ্য খাদক সম্পর্ক ভুলে একে অপরের বন্ধু হয়ে উঠে।
‘‘শিক্ষিত মা দাও শিক্ষিত জাতি দেবো। ‘‘ মায়ের সঙ্গে শিশুর সম্পর্ক অত্যান্ত নিবির। বাস্তব জীবন সম্পর্কে মায়ের নিকট হতেই শিশু ধীরে ধীরে ধারণা পেতে থাকে। এবং তা শিশু মনে স্থায়ীত্ব পায়। শিক্ষিত মা শিশু মনের সরলতার ফলে সহজেই শিশুর আচরণ কাঙ্খিত পর্যায়ে গড়ে তুলতে পারেন। ৩
শিশু মনের সরলতার গুরুত্ব অনুধাবন করেই নেপোলিয়ন জাতি গঠনে শিক্ষিত মায়ের কথা বলেছেন।
বাস্তবে ঘরে ঘরে শিক্ষিত মা পাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু প্রশিক্ষণ দিয়ে বিকল্প শিক্ষিত মা তৈরী সম্ভব।
জার্মানিসহ প্রতিটি উন্নত দেশের কিন্ডারগার্ডেনব্যবস্থা লক্ষ্য করলে তার স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়।
Padagogy বা Science of Teaching-এর (শিক্ষাদান বিজ্ঞান) দিকনির্দেশনা অনুসারে প্রশিক্ষণ দিয়ে
বিকল্প শিক্ষিত মা তৈরী করে শিশুদেরকে শিক্ষা দিয়ে জাতিহিসাবে তারা আজ উন্নত, সম্মৃদ্ধ।

১খ) বিষয় ভিত্তিক শিক্ষা :
বিষয় ভিত্তিক শিক্ষা হলো- ব্যক্তির মেধা অনুসারে কোনোও বিষয়ে বা একাধিক বিষয়ে ব্যক্তিকে শিক্ষিত করে তোলা। যেমন- বাংলা, অংক, ইংরাজি, বিজ্ঞান, চিকিৎসা, প্রকৌশলী….ইত্যাদি।

এখন আমরা জানার চেষ্টা করবো-
ঘ) শিক্ষাদান মূলতঃ কি ?
উদাহরণ :
লিখতে বা পড়তে জানে না এমন কোন ব্যক্তিকে যদি প্রশ্ন করা হয়
যেমন :
’ক’) ১+১=?… ব্যক্তির ‘’স্বকীয়’’ অভিব্যক্তি (অনাকাঙ্ক্ষিত।)
’খ’) ১+১=২ ‘’শিক্ষাদান’’ (কাঙ্ক্ষিত।)
উদাহরণটিতে দেখা যায়, শিক্ষাদান মূলতঃ- ব্যক্তির স্বকীয় বোধ ’ক’ এর স্থলে কাঙ্ক্ষিত
বোধ ’খ’ এর প্রতিস্থাপন। বা সত্তায় কাঙ্ক্ষিত বোধ ’খ’ এর জাগরণ ঘঠানো বা উন্মেষ সাধন।
অতএব আমরা উল্লেখ করতে পারি শিক্ষাদান মূলতঃ- সত্তার ‘স্বকীয় বোধ’ এর স্থলে ‘কাঙ্ক্ষিত বোধ এর প্রতিস্থাপন বা জাগরণ ঘটানো।
উপরোক্ত আলোচনাসমূহে শিক্ষা সম্পর্কে মণীষীদের বাণীসমূহের পর্যায়ক্রমে পর্যালোচনা করে শিক্ষার যে সকল উপাদানসমূহ পেয়েছি সে সকলের গুরুত্ব যথাস্থানে সংক্ষেপে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।

আমাদের প্রচলিত ‘‘শিক্ষাক্রম‘‘ ব্যবস্থা সংক্ষেপে যাচাই-
শিক্ষাদানের উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য হলো-
১ক) মানবিক শিক্ষা ও ১খ) বিষয় ভিত্তিক (বা জীবিকা- নির্বাহের শিক্ষা।)
অর্থাৎ ১ক) ও ১খ) উভয় মিলেই পৃর্ণ শিক্ষাব্যবস্থা।
আমাদের প্রচলিত ‘‘শিক্ষাক্রম‘‘ এর শিক্ষাদান বৈশিষ্ট্য শুধুই পুথিগত বিষয় ভিত্তিক পাঠদান।
১ক) মানবিক তথা মৌলিক শিক্ষা উদ্যোগহীণ।
সহজেই প্রতিয়মাণ ‘‘শিক্ষাক্রম‘‘ ব্যবস্থা শিক্ষার পরিপূর্ণ ব্যবস্থা নয়।

শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়নে অন্যদেশের অনুসরণ
কোনো দেশের শিক্ষাব্যবস্থা বাইরে থেকে সামান্য দেখে সমস্ত বুঝতে পারা অসম্ভব। জাতি গঠনে শিক্ষাদানের মত গুরুত্বপূর্ণ কৌশল কখনই কোনো দেশই কোনো দেশকে দিবে না।
(আধুনিক যুদ্ধবিমান তৈরীর কৌশল, কোনো দেশ কি কোনো দেশকে দিয়েছে বা দিবে? অবশ্যই দিবে না।)
সঙ্কট থেকে উত্তরণের উপায়ঃ
শিক্ষার প্রত্যাশিত ফল পেতে হলে (Basic Education) মৌলিক শিক্ষার বিষয়সমূহ শিক্ষাদানের প্রক্রিয়া অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে। যার কোনো বিকল্প নাই।
মৌলিক শিক্ষাদানে গুরুত্ব দিয়ে শিক্ষাব্যবস্থা গ্রহণ করলে ১৫ বছরের মধ্যেই বিশ্বের আদর্শ ও উন্নত জাতি হিসাবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।
দীর্ঘ ১৭ বছর অত্যান্ত মনযোগসহ অনুসন্ধান করে জার্মানির অনুসৃত শিক্ষাব্যবস্থার আলোকে একটি
লেখা ‘‘গঠনমূলক আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা‘‘ যার প্রতিটি পর্ব যুক্তিসহ তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।
আমাদের যা আছে সে সকল সঠিক ব্যবস্থাপনায় নিয়ে আসার উপায়ও মূল লেখাটিতে আলোচনা করেছি।
বর্তমান লেখাটি মূল লেখাটির অতি সংক্ষিপ্ত অংশ। ৪